আকলুল ফাআল (আরবি: العقل الفعال, রোমান: Al-'aql al-f'aal) অথবা ওয়াহিব আল-সুয়ার হলো[১] ইসলামি দর্শন ও মনোবিজ্ঞানে আলোচিত একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা। এটিকে আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তায় একে সর্বনিম্ন স্তরের বুদ্ধিমত্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। [২]

ধারণা সম্পাদনা

প্রাথমিকভাবে ইসলামি দর্শন ও মনোবিজ্ঞানে আরবি আকল শব্দটি দ্বারা বেঁধে রাখা বা সংযত করা বুঝানো হলেও পরবর্তিতে এই শব্দটির অর্থ যুক্তিতে পরিণত হয়। যুক্তি বলতে এমন কিছুকে বুঝানো হয় যা মানুষকে বিচার ও আচরণ করতে সহায়তা করে। আকল শব্দটির ধারণা প্রভাবিত হয়েছিল গ্রিক দর্শনের পেরিপেটেটিক ধারা হতে। [৩]

ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পাদনা

আল ফারাবী প্রথমবারের মত আকল শব্দটির বিভিন্ন অর্থ নিয়ে তার বইয়ে আলোচনা করেন। [৩] ইবনে বাজা মনে করেন মানুষ এবং দার্শনিকদের সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ। সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা হলো বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ স্তর এবং এই বুদ্ধিমত্তাই প্রকৃতির সব ধরণের বাস্তবতার উপস্থিতির কারণ। তিনি আরও বলেন, সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করলে মানুষ প্রকৃতির বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারবে। ইবনে বাজার এর মতে, যারা দুনিয়ার আকর্ষণ কাটিয়ে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারবে, তারা সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এক হতে পারবে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইসলামি দর্শনে সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা বিষয়টির সঙ্গে নয়াপ্লাতোবাদের যোগসূত্র আছে। সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চাঁদ, ফেরেশতা জিব্রাইলের (আ:) সম্পর্ক আছে। ইসলামি বিশ্বের পেরিপেটেটিক দার্শনিকরা সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার একটি নয়াপ্লাতোবাদি সংস্করণ প্রদর্শন করতে চায়। যেখানে মানব আত্মা ও অনুধাবনযোগ্য বিশ্ব বুদ্ধিমত্তা ও বোধগম্যতার সাথে একীভূত। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

আল ফারাবী অবশ্য পেরিপেটেটিক দৃষ্টিভঙ্গির সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ইসলামি ভবিষ্যদ্বাণীর একটি সমঝোতা স্থাপনের প্রচেষ্টা করেছেন। ফারাবি সক্রিয় বুদ্ধিমত্তাকে জিব্রাইলের সাথে সম্পর্কিত মনে করেন। মানুষ আকল বিল কুয়াহ (সম্ভাব্য বুদ্ধিমত্তা) হতে আকলুল বিল ফাআল (প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা) তে রুপান্তরিত হতে পারে। ফলে মানুষ অজ্ঞতার অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করতে পারে। সবশেষে আকল আকলুল মুস্তাফাদে (অর্জিত বুদ্ধিমত্তা) রুপান্তরিত হয়। এই স্তরে আকল নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য ও মিল সম্পর্কে পর্যালোচনা করে। [১]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ইসলামি দর্শনের জ্ঞানতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানে আকলুল বিল ফাআলের অনেক মৌলিক ভূমিকা আছে। তাদের কিছু ভূমিকা নিম্নরূপ: [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

  1. বুদ্ধির মাধ্যমে সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা বস্তুগত দুনিয়ার আকার তৈরি করে।
  2. জ্ঞানতত্ত্ব ও ইন্দ্রিয় উপলব্ধিতে এটি সম্ভাব্য আকলকে প্রকৃত আকলের স্তরে উন্নিত করতে পারে।
  3. এটি ইন্দ্রিয় উপলব্ধ বস্তু হতে বোধগম্য বস্তুতে পার্থক্য নিরুপন করতে পারে।
  4. সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা মানব আত্নাকে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে।
  5. সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা সর্বোচ্চ আনন্দ অর্জনে সহায়তা করে।
  6. আকলুল ফাআল আত্নার অমরত্বেও সহায়তা করে।
  7. সক্রিয় বুদ্ধিমত্তা দৈববাণী বুঝতে সহায়তা করে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Azadpur, Mohammad (২০১১)। Reason unbound : on spiritual practice in Islamic peripatetic philosophy। Albany: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-1-4619-0633-9ওসিএলসি 756496427 
  2. Adamson, Peter (২০১৩-০৭-০৪)। Interpreting Avicenna: Critical Essays (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-1-107-35445-6 
  3. Foundation, Encyclopaedia Iranica। "Welcome to Encyclopaedia Iranica"iranicaonline.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৬