আইনের শাসন একটি রাজনৈতিক আদর্শ যা অনুযায়ী কোনও দেশ, রাষ্ট্র বা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত সব নাগরিক বা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলি একই আইনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে, এবং এর মধ্যে আইনপ্রণেতা ও নেতারাও অন্তর্ভুক্ত।[২][৩] সরল ভাষায় বলা যায় যে "কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়"।[৪] আইনের শাসন পরিভাষাটি সংবিধানবাদরেখটসষ্টাট মতবাদগুলির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে, কোনও নির্দিষ্ট আইনি শাসনকে নয়।[৫][৬][৭] আইনের শাসন হল সেই কার্যপদ্ধতি, প্রক্রিয়া, প্রতিষ্ঠান, চর্চা ও সামাজিক আদর্শ যেখানে সকল নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং যেখানে ক্ষমতার যথেচ্ছ প্রয়োগের স্থান নেই।[৮]

আইনের বৈচারিক ও আইন-প্রণয়ন দিক উপস্থাপনকারী একটি উপলচিত্র। সিংহাসনে উপবিষ্ট নারীর হাতের তরবারি দোষীকে শাস্তি দেয়, আর তালপাতার শাখা গুণীকে পুরস্কৃত করে। জ্যোতির্বলয় তার মাথাকে ঘিরে রেখেছে ও গায়ে পরিহিত মিনার্ভার বর্মটি তার প্রজ্ঞা ও ন্যায়নিষ্ঠাকে নির্দেশ করছে।[১]

যুক্তরাজ্যে ১৬শ শতক থেকে আইনের শাসন ধারণাটির ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। ১৭শ শতকে স্কটীয় ধর্মতাত্বিক স্যামুয়েল রাদারফোর্ড রাজাদের দৈব অধিকারের বিরুদ্ধে যুক্তিপ্রদান করতে গিয়ে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করেন।[৯] জন লক লেখেন যে সমাজে মুক্তি বলতে বোঝায় যে কেবলমাত্র আইনসভার রচিত আইনসমূহ সবার উপর প্রযোজ্য হবে এবং অন্য সকল ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি সরকারি ও বেসরকারি বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত থাকবে। ১৯শ শতকে ব্রিটিশ আইনবেত্তা এ ভি ডাইসি ধারণাটিকে আরও জনপ্রিয় করতে সাহায্য করেন। তবে আইনের শাসনের মূলনীতিটি প্রাচীনকাল থেকেই স্বীকৃত ছিল। গ্রিক দার্শনিক আরিস্তোতলেস (অ্যারিস্টটল) লেখেন যে "একজন নাগরিকের চেয়ে আইন শাসন করলেই সঠিক হবে; এই মূলনীতি অনুযায়ী যদি কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে পরম ক্ষমতা দেওয়া সুবিধাজনক হয়, তাহলে তাদেরকে শুধুমাত্র আইনের অভিভাবক ও সেবক হিসেবেই নিযুক্ত করা উচিত।"[১০]

আইনের শাসন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি আইনের অধীন, যার মধ্যে আইনপ্রণেতা, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা ও বিচারকেরাও অন্তর্ভুক্ত।[১১] এর বিপরীত ধারণাটি হল ব্যক্তির শাসন, যেখানে একজন ব্যক্তি বা একটি ব্যক্তিদল ইচ্ছামত শাসন করে।[১২]


তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Cole, John et al. (1997). The Library of Congress, W. W. Norton & Company. p. 113
  2. Sempill, Julian (২০২০)। "The Rule of Law and the Rule of Men: History, Legacy, Obscurity"। Hague Journal on the Rule of Law12 (3): 511–540। এসটুসিআইডি 256425870 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1007/s40803-020-00149-9 (নিষ্ক্রিয় ২০২৪-০৫-০৩)। 
  3. "Rule of Law" (ইংরেজি ভাষায়)। National Geographic Society। ১৫ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. "Why do we say No man is above the law?" 
  5. Ten, C. l (২০১৭), "Constitutionalism and the Rule of Law", A Companion to Contemporary Political Philosophy (ইংরেজি ভাষায়), John Wiley & Sons, Ltd, পৃষ্ঠা 493–502, আইএসবিএন 978-1405177245, ডিওআই:10.1002/9781405177245.ch22 
  6. Reynolds, Noel B. (১৯৮৬)। "Constitutionalism and the Rule of Law"All Faculty Publications (BYU ScholarsArchive)। ২০১৯-১১-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২১ 
  7. "Constitutionalism, Rule of Law, PS201H-2B3"www.proconservative.net। ১৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৯ 
  8. "rule of law | Definition, Implications, Significance, & Facts | Britannica"Encyclopædia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০২২ 
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Rex নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ari নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  11. Hobson, Charles. The Great Chief Justice: John Marshall and the Rule of Law, p. 57 (University Press of Kansas, 1996): according to John Marshall, "the framers of the Constitution contemplated that instrument as a rule for the government of courts, as well as of the legislature."
  12. Paul. "Resisting the Rule of Men." . Louis ULJ 62 (2017): 333. "I will say that we have "the rule of men" or "personal rule" when those who wield the power of the state are not obliged to give reasons to those over whom that power is being wielded—from the standpoint of the ruled, the rulers may simply act on their brute desires."