কর্কটক্রান্তি রেখামকরক্রান্তি রেখার দু'পাশে ৩০°- ৩৮° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে সারাবছর ধরে বায়ুর উচ্চচাপ দেখা যায়। ক্রান্তীয় অঞ্চল-এর শীতল ও ভারী বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, এই অঞ্চলকে "'অশ্ব অক্ষাংশ"'(ইংরেজি: Horse Latitude) বা "'অশ্বাক্ষ"' বলা হয়।
নিরক্ষীয় অঞ্চল-এর উষ্ণ, আর্দ্র ও লঘু বায়ু পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ঘুরে ক্রমশ প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। আবার, সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চল থেকে শীতল ও উচ্চচাপের ভারী বায়ু ভূপৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে অগ্রসর হয়। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার কাছে এই দুই ভারী বায়ু মিলিত হয়ে উচ্চচাপ বলয়-এর সৃষ্টি করে। এই বায়ু প্রধানত নিম্নমুখী (মকরক্রান্তি রেখার কাছে) বা ঊর্ধমুখী (কর্কটক্রান্তি রেখার কাছে) হওয়ায় এই দুই অঞ্চলের বায়ুর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না, তাই এখানকার ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুপ্রবাহ বিশেষ না থাকায় ভূপৃষ্ঠের ওপর সর্বদা একপ্রকার শান্তভাব বজায় থাকে। তাই একে কর্কটীয়মকরীয় শান্তবলয়ও বলা হয়ে থাকে। [১]

অশ্ব অক্ষাংশগুলির (Horse latitudes) আপেক্ষিক অবস্থানসমূহ প্রদর্শিত একটি চিত্র

ক্রান্তীয় অঞ্চলে (৩০°- ৩৮° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে) সবসময়ই বায়ু উপর থেকে নিচে নামে। ফলে এর উষ্ণতা ও জলীয় বাষ্প গ্রহণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এইজন্য ক্রান্তীয় অঞ্চলে নিম্নমুখী বায়ুর প্রভাবে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। এইজন্য ক্রান্তীয় অঞ্চলে পৃথিবীর অধিকাংশ উষ্ণ মরুভূমির (সাহারা, কালাহারি প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়েছে।

নামকরণের কারণ সম্পাদনা

প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজগুলি কর্কটীয় শান্তবলয়ে (আটলান্টিক মহাসাগর-এ) এলে বায়ুপ্রবাহ না থাকার দরুন গতিহীন হয়ে পড়ত। শোনা যায়, উত্তর আমেরিকা থেকে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জগামী কোন এক ঘোড়া-বোঝাই জাহাজের নাবিকরা পানীয় জল ও খাদ্যের অপচয়ের আশঙ্কায় তাদের ঘোড়া বা অশ্বগুলোকে এই অঞ্চলের সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিল। সেই থেকে উত্তর গোলার্ধের কর্কটীয় শান্তবলয়ের অন্তর্গত ৩০°- ৩৮° উত্তর অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বা অশ্বাক্ষ বলা হয়। [২]

কোনো কোনো বিজ্ঞানীর মতে, দক্ষিণ গোলার্ধের মকরীয় শান্তবলয়টিকেও (৩০°-৩৮° দক্ষিণ অক্ষাংশ) অশ্ব অক্ষাংশ বলা যায়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "World Wide Words". 2008.
  2. The Columbia Electronic Encyclopedia, Sixth Edition. New York: Columbia University Press, 2003

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • The Columbia Electronic Encyclopedia, Sixth Edition. New York: Columbia University Press, 2003