অশৌচ

হিন্দু রীতি, সংস্কার

অশৌচ শব্দের অর্থ হল শুচিতা বা পবিত্রতার অভাব৷ মাতা, পিতা, পরিবারের সদস্য বা জ্ঞাতিবর্গের মৃত্যুতে হিন্দুরা অশৌচ করে৷ অর্থাৎ প্রিয়জনের মৃত্যুতে কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করে শ্রাদ্ধের উপযুক্ততা অর্জনই অশৌচ। অশৌচ হিন্দুসমাজের একটি প্রচীন রীতি বা সংস্কার। বর্তমানে, এর নিয়মকানুন এবং লোকাচার অনেকটাই শিথিল হয়েছে।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

১৷ জননাশৌচ: কেউ জন্মগ্রহণ করলে যে অশৌচ হয়৷ তবে এটার প্রচলন ততটা নেই।

২৷ মরণাশৌচ: কারও মৃত্যুতে যে অশৌচ পালন করতে হয়৷

অশৌচের সময়কাল সম্পাদনা

মনুসংহিতার বিধান অনুযায়ী পুরোহিত দর্পনে নির্দেশ দেওয়া আছে —

শুধ্যেদ্বিপ্রো দশাহেন দ্বাদশাহেন ভূমিপ।

বৈশ্যপঞ্চদশাহেন শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি।।

- ইতি মনুঃ।।

অনুবাদ: জন্ম বা মরণে ব্রাহ্মণের দশদিন, ক্ষত্রিয়ের বারো দিন, বৈশ্যের পনেরো দিন এবং শূদ্রের একমাস অর্থাৎ ত্রিশ দিন অশৌচ থাকে; ইহার পর শুদ্ধ হয়। তবে, বর্তমানে বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে অনেকেই এগারো বা বারো দিনে অশৌচ পালন করে। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকেরা দশ দিনের জন্য অশৌচ পালন করে।[১]

তবে, শাস্ত্র মতে সকল বর্ণে অন্তত দশম অশৌচ (১০ দিন) কাল পর্যন্ত পালনের বিধান রয়েছে।

অশৌচকালীন ক্রিয়া সম্পাদনা

একমাত্র মাতাপিতার মৃত্যু হলে তবেই হবিষ্যান্ন বা ফল ফলাদি খেয়ে জীবনধারণ করতে হয়৷ অন্য কোন নিকটাত্মীয়ের ক্ষেত্রে হবিষ্যান্ন খেতে নেই। এইসময় কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করতে হয়৷ অশৌচকালে উঠানে একটি তুলসী গাছ রোপণ করে সেখানে প্রতিদিন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে জল ও দুগ্ধ প্রদান করতে হয়৷ পিতামাতার মৃত্যুর পর ৪র্থ ও ১০ম দিনে পিণ্ড দান করতে হয়৷ এই পিন্ডকে বলে পূরকপিণ্ড৷ পূরকপিণ্ড দিতে হয় মোট দশটি৷ অশৌচান্তে মস্তক মুন্ডন করে পরিধান করতে হয় নববস্ত্র৷[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "নির্ঘণ্ট:পুরোহিত-দর্পণ.djvu - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১৭ 
  2. হিন্দুধর্ম (ডিসেম্বর)। হিন্দুধর্ম ৯ম ও ১০ম শ্রেণি chapter = ৬ (ডিসেম্বর, ২০০৭ সংস্করণ)। ঢাকা: আইডিয়াল প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৪০।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |year= / |date= mismatch (সাহায্য);