অলিভার এডউইন বেকার

অলিভার এডউইন বেকার (১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৩ – ২ ডিসেম্বর, ১৯৪৯) ছিলেন একজন মার্কিন অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ

শিক্ষা এবং প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

বেকার ১৮৮৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে ওহাইওর টিফিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা এডউইন বেকার ছিলেন একজন বণিক এবং মা মার্থা রনি থমাস ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। প্রথম জীবনে তার স্বাস্থ্য এতটাই খারাপ ছিল যে তিনি ১২ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুল শুরু করেন নি, তবে স্কুলে যাওয়ার আগে তার মায়ের কাছে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। [১] পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পরে তিনি হাইডেলবার্গ কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৩ সালে ১৯ বছর বয়সে তিনি ইতিহাস ও গণিতে বিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এক বছর পরে দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯০৫ সালে তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং সেখান থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ অর্জন করেন। তিনি ১৯০৭ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ইয়েল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ফরেস্ট্রি থেকে বনায়ন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন এবং পরবর্তীতে উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯০৮ থেকে ১৯১২ সাল অবধি তিনি উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি পরীক্ষণ কেন্দ্রের সাথে কাজ করেছিলেন। বেকার পরীক্ষণ কেন্দ্রের জন্য একটি বুলেটিনে সহলেখক হিসেবে কাজ করেছিলেন যা ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, বুলেটিনটি ছিলো উইসকনসিনের জলবায়ু এবং কৃষিক্ষেত্রে তার প্রভাব সম্পর্কিত একটি গবেষণা। ১৯১০ থেকে ১৯১২ সাল অবধি তিনি গ্রীষ্মকালে উইসকনসিন ভূমি জরিপের সাথেও কাজ করেছিলেন। [২]

১৯১২ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগে চাকরি নিয়েছিলেন এবং পরবর্তী ত্রিশ বছর এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯১৫ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ইয়ারবুক-এ অবদান রাখার ফলে বেকারের কাজগুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিলো, যার বেশিরভাগই তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। ইউএসডিএতে প্রথম আঠারো বছর তিনি ভূমি ব্যবহারের ভৌগোলিক দিকগুলি অধ্যয়নের জন্য নিযুক্ত ছিলেন। তার প্রথম দিককার রচনারগুলোর একটি হলো ভার্নোর ক্লিফোর্ড ফিঞ্চের সাথে যৌথভাবে লেখা বৈশ্বিক কৃষির ভূগোল বা জিওগ্রাফি অব দ্য ওয়ার্ল্ড এগ্রিকালচার ( ১৯১৭ ), যা তাকে আরও ব্যাপক পরিচিতি এনে দিয়েছিলো। এটি প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যেই বেকার অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের জন্য উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন এবং ১৯২১ সালে ভূমি ব্যবহারের উপর একটি গবেষণামূলক সন্দর্ভসহ পিএইচডি অর্জন করেন। সেখানে থাকাকালীন বেকার ভূগোল ও কৃষির অর্থনৈতিক দিকে তার কাজগুলোকে আরও সরিয়ে নিতে দুজন উল্লেখযোগ্য অর্থনীতিবিদ হেনরি চার্লস টেলর এবং রিচার্ড টি এলির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৯২২ সালে তিনি ইউএসডিএর নতুন কৃষি অর্থনীতি অধিদপ্তরে যোগদান করেন, যার নেতৃত্বে ছিলেন হেনরি চার্লস টেলর। [১] বৈশ্বিক কৃষির ভূগোল রচনার সাফল্য তাকে মার্কিন কৃষির মানচিত্রাবলী (অ্যাটলাস অব অ্যামেরিকান অ্যাগ্রিকালচার) রচনা করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলো, যার দরুন তিনি নিজেই এটির পরিকল্পনাকারী এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছিলেন। বিশাল এই কাজটি ১৯১৮ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে ছয়টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। [২]

বেকার ১৯২৩ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক বক্তৃতা দেন। ইকোনমিক জিওগ্রাফি জার্নালে লেখার পাশাপাশি বেকার এটির সহযোগী সম্পাদকও হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি উত্তর আমেরিকার আঞ্চলিক কৃষি ভূগোল সম্পর্কিত একটি উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নিবন্ধে অবদান রেখেছিলেন। ১৯২০-এর দশকের দিকে এই ক্ষেত্রটি ইউএসডিএর একটি প্রধান লক্ষ্যবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। তবে ১৯৫০-এর দশকের দিকে খামারের জনসংখ্যার প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয়েছিল। বেকার বিশেষত গ্রামীণ যুবকদের শহরাঞ্চলে স্থানান্তরিত করতে আগ্রহী ছিলেন। এমনকি তার পরবর্তী বছরগুলিতে তার গবেষণা ও কাজের বেশিরভাগ অংশজুড়েই ছিলো জনসংখ্যার সমস্যাদি বিষয়টি। বেকার ধারণা দিয়েছিলেন যে বিশ্বের জনসংখ্যার কেবল ক্ষুদ্র একটি অংশই কাঙ্ক্ষিত জীবনযাপন করে। তিনি মার্কিন কৃষকদের মান উন্নয়ন করার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষক আর কৃষকদের অবদানের প্রশংসা স্তর বাড়িয়ে ও সম্ভাব্য সমস্যাগুলির পরিকল্পনা ও ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো অধ্যয়ন করে তা অর্জন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সফল ভবিষ্যত প্রজন্ম নিশ্চিত করতে মার্কিনদের বৃহত্তর পরিবারে উত্সাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। [২]

বেকার শহুরে জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন ও রাল্ফ বোর্সোদির আধুনিক জীবনে কৃষিক্ষেত্র ( ১৯৯৯) রচনায় সহযোগিতা করেছিলেন এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রায় ফিরে আসার পক্ষপাতীও ছিলেন তিনি। তিনি নিজেও "রুরবান" বা গ্রামনগর জীবনধারা সম্পর্কে আরও প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন, যাতে শহুরে এবং গ্রামীণ জীবনের উভয় দিকের সমন্বিত দিক রয়েছে। তিনি ১৯২৫ সালে অ্যালিস হারগ্রাভ ক্রুকে বিয়ে করেন। তাদের চারটি সন্তান ছিল- হেলেন, সাব্রা, এডউইন এবং মিল্ড্রেড। তিনি তাদেরকে মেরিল্যান্ডের তৎকালীন শহরতলির কলেজ পার্কে পাঁচ একর জায়গা দিয়ে বড় করেছেন যেখানে তারা মুরগী ও গরু লালন করতে পেরেছিল এবং তাদের একটি বাগানও রয়েছে। পরে তিনি ভার্জিনিয়ার নিউ মার্কেটের কাছে একটি বড় খামার কিনেন যেখানটায় তিনি মাটি সংরক্ষণের কাজে আগ্রহী ছিলেন। [১]

১৯৩১ সালে তিনি মার্কিন ভূগোলবিদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ওহাইওর হাইডেলবার্গ কলেজ এবং জার্মানির গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেটস লাভ করেন । [৩]

মেরিল্যান্ডের কলেজ পার্কে কর্মজীবন সম্পাদনা

বেকার ১৯৪২ সালে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পার্কে ভূগোল বিভাগ চালু করার আমন্ত্রণ গ্রহণপূর্বক যোগদানের জন্য ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করেন। তিনি বিভাগের অনুষদগুলোকে নিজেই একত্রিত করেছিলেন এবং অনেক ছাত্রকে আকৃষ্ট করেছিলেন, পাশাপাশি অনেক গবেষণা প্রকল্পও প্রচার করেছিলেন। তার অসমাপ্ত বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পগুলি সমাপ্ত করার জন্য নিজেকে নিবেদিত করার উদ্দেশ্যে ১৯৪৯ সালের জুলাই মাসে বিভাগীয় পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার প্রধান কাজটি ছিল বিশ্ব সম্পদের মানচিত্রাবলী (অ্যাটলাস অব ওয়ার্ল্ড রিসোর্স), যা প্রকাশিত হয়েছিল ইউএসডিএ এবং খনি অধিদপ্তর থেকে।[৪] চীন সম্পর্কে তার দীর্ঘ আগ্রহ অব্যাহত রেখে তিনি চীনের মানচিত্রাবলী (অ্যাটলাস অব চায়না) রচনাটিও শুরু করেছিলেন। তবে এই কাজগুলির কোনওটিই তার মৃত্যুর সময় শেষ হয়নি। বেকার সর্বদা শিক্ষকতার প্রতি অত্যন্ত নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন এবং ছাত্র ও দর্শকদের উদারতার সাথে তার সময় দিতেন। [২]

সারা জীবন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগার পর [১] অবশেষে মেরিল্যান্ডের কলেজ পার্কে তার নিজের বাড়িতে ১৯৪৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. American National Biography। Oxford University Press। ২০০৪। 
  2. Visher, S. S.; Hu, Charles Y. (ডিসেম্বর ১৯৫০)। "Oliver Edwin Baker, 1883-1949": 328–34। ডিওআই:10.1080/00045605009352033 
  3. Taeuber, Irene B (জানুয়ারি ১৯৫০)। "Oliver Edwin Baker (1883-1949)": 21। 
  4. Unknown author (এপ্রিল ১৯৫০)। "Obituary: Oliver Edwin Baker": 333–4।