অবমানবায়ন (ইংরেজি: infrahumanisation) হচ্ছে একপ্রকার অঘোষিত বিশ্বাস; যেখানে বিশ্বাস করা হয়, স্বগোষ্ঠী বহির্গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি মানবিক। ২০০০ সালের প্রথমদিকে এই শব্দটি জ্যাকুয়াস ফিলিপ লায়েন এবং তার সহযোগীদের দ্বারা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। লায়েন এবং তার সহযোগীদের ধারণা অনুসারে অবমানবায়নের উত্থান ঘটে যখন মানুষের কাছে জাত্যভিমান অধিকতর গুরত্ব পায়। নিজ জাতির বাহিরে সে অন্য জাতির মধ্যে (অধিকারে পার্থক্য) অবলোকন করে এবং স্বগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার হলেও বহির্গোষ্ঠীর মানবাধিকার ভূলণ্ঠনের বেলায় নীরব থেকে তা সমর্থন করে। উপমানব এর অর্থ হল মানুষ কিন্তু নিচুস্তরের অথবা পরিপূর্ণভাবে মানুষই নয় অবমানবায়নে এই কুসংস্কারের চর্চা করা হয়। (উদাহরণস্বরূপঃ প্রাচীন ভারতে বর্ণপ্রথার জন্য ব্রাক্ষ্মণ কর্তৃক শূদ্র বা অহিন্দুদের শোষণ বা নির্যাতন করা)।

বহির্গোষ্ঠীদের, স্বগোষ্ঠীর তুলনায় নিম্নস্তরের মানুষ ভাবার এই প্রবণতাটি মানুষ সচেতন ভাবে নয়, বরং অবচেতনভাবে লালন করেন। গবেষকরা স্বগোষ্ঠী ও বহির্গোষ্ঠী সংক্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে কাজ করার জন্য মানুষের আবেগ নিয়ে গবেষণা করেছেন।[] কিছু অনুভূতি শুধুমাত্র মানুষে দেখা যায় যেমনঃ ভালোবাসা, পরিতাপ, স্মৃতিচারণ এসব অনুভূতিকে বলে গৌণ অনুভূতি এবং কিছু অনুভূতি মানুষসহ অন্য প্রাণীদের বেলায়ও দেখা যায় যেমনঃ আনন্দ, ক্রোধ, বিষ্মিত হওয়া বা কষ্ট পাওয়া; এসব অনুভূতিকে বলে মুখ্য অনুভূতি। লায়েন এবং তার সহযোগীরা বারবার গবেষণা করে, একই ফলাফল ক্রমাগত পেয়েছেন, আর তা হলোঃ অন্তঃগোষ্ঠীর (স্বগোষ্ঠী) ক্ষেত্রেই মানুষ তার গৌণ অনুভূতির প্রকাশ ঘটায়, বহির্গোষ্ঠীর বেলায় তা প্রকাশ করে না।

উদাহরণস্বরুপ; মানুষ কোনো একটি রঙিন মাছ দেখে বিস্মিত হতে পারে, বা একটি কুকুর তার মালিককে দেখে আনন্দ পেতে পারে। অর্থাৎ, এসব মুখ্য অনুভূতি জীবকুলে সাধারণ ভাবেই থাকে। কিন্তু কখনোই মানুষ একটি রঙিন মাছকে ভালোবাসবে না, বা মাছটি মারা গেলে সে বহুদিন যাবৎ তার কষ্ট বুকের মধ্যে পুষে রাখবে না। কিন্তু একজন মানুষ তার প্রেমিকাকে বা তার জায়াকে ভালোবাসবে প্রচণ্ডভাবে। এই ভালোবাসা শুধুমাত্র তার কাছের মানুষেএ জন্যই বরাদ্দ থাকবে। বস্তুত অবমানবায়ন তত্ত্ব এই বিষয়টিই ব্যাখ্যা করছে। মানুষ অবচেতনভাবেই অন্য মানুষকে দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত করে ফেলে। কিছু মানুষকে সে অন্তঃগোষ্ঠী বা স্বগোষ্ঠী ভাবে; যাদের জন্য সে মুখ্য এবং গৌণ দুই ধরনের অনুভূতিই বরাদ্দ রাখে আবার কিছু মানুষকে সে বহির্গোষ্ঠী ভাবে, যাদের প্রতি শুধুমাত্র গৌণ অনুভূতিই প্রকাশ করে। বহির্গোষ্ঠীর প্রতি এই আবেগের বহিঃপ্রকাশ না ঘটার অর্থ হলো, অন্তঃগোষ্ঠীয় মানুষজন বিশ্বাস করে, বহির্গোষ্ঠীয় মানুষ; অমানুষের কাতারে পরে। লেভি স্ট্রাউস অবমানবায়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন

সাম্প্রতিক গবেষণা স্বভাবকে অবমানবায়ন কীকরে প্রভাবিত করে, তার অন্বেষণ করেছে। গবেষণার ফলে জেরন ভেইস ও তার সহযোগীরা বহির্গোষ্ঠীর প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। মানুষ যেসব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে সে বৈশিষ্ট গুলো বহির্গোষ্ঠীর বেলায় মানুষ করে কিনা এমনটাই তাদের গবেষণা ছিল। জেরন ভেস এবং তার সহযোগীদের গবেষণা থেকে দেখা যায়, যদি দুই ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে একটি গোষ্ঠী গৌণ অনুভূতি অন্য গোষ্ঠীর প্রতি প্রকাশ করে, তবুও অপর গোষ্ঠী সেই গৌণ অনুভূতি তাদের জন্য প্রদর্শন করে না।[][স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]মার্কিন গবেষক কাডি এবং তার সহযোগীরা[] অন্তঃগোষ্ঠীর মানুষদের সাহায্য করার মনমানসিকতার ওপর অবমানবায়ন এর প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। হারিকেন ক্যাটরিনার পর মানুষের চিন্তা ভাবনার উপর পর্যবেক্ষণ করে কাডি ও তার সহযোগীরা দেখেছেন, অন্তঃগোষ্ঠীর মানুষ বিশ্বাস করে, বহির্গোষ্ঠীর মানুষ জনের মধ্যে মানবোচিত গুণের ঘাটতি আছে। পরীক্ষায় যেসব অংশগ্রহণকারী বহির্গোষ্ঠী সদস্যদের অবমানায়ন করেছে; সেসব সদস্যরাই তাদের সাহায্য করতে কম আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Leyens, J. Ph., Paladino, M. P., Rodriguez, R. T., Vaes, J., Demoulin, S., Rodriguez, A. P., & Gaunt, R. (২০০০)। "The emotional side of prejudice : The attribution of secondary emotions to ingroups and outgroups"। Personality and Social Psychology Review4 (2): 186–197। ডিওআই:10.1207/S15327957PSPR0402_06 
  2. Vaes., J; ও অন্যান্য (২০০৪)। "On the behavioural consequences of infra-humanization: The implicit role of uniquely human emotions in intergroup relations"। Journal of Personality and Social Psychology85: 1016–1034। ডিওআই:10.1037/0022-3514.85.6.1016পিএমআইডি 14674811 
  3. Cuddy, A., Rock, M., & Norton, M. (২০০৭)। "Aid in the aftermath of Hurricane Katrina: Inferences of secondary emotions and intergroup helping"। Group Processes & Intergroup Relations10: 107–118। ডিওআই:10.1177/1368430207071344