অগ্রগামী তরঙ্গ
যে তরঙ্গ এক স্তর হতে অন্য স্তরে সঞ্চালিত হয়ে ক্রমাগত সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তাকে অগ্রগামী তরঙ্গ বা চলমান তরঙ্গ বলে। তরঙ্গ এর মত অগ্রগামী তরঙ্গ দুই প্রকারের। অগ্রগামী আড় তরঙ্গ ও অগ্রগামী লম্বিক তরঙ্গ। অগ্রগামী তরঙ্গ যদি তরঙ্গ এর গতির অভিমুখে সমকোণে কম্পিত হয় তবে তা অগ্রগামী আড় বা অগ্রগামী অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। আবার কম্পন যদি গতির অভিমুখের সমান্তরালে কম্পিত হয় তবে সেই তরঙ্গ অগ্রগামী লম্বিক বা অগ্রগামী অনুপ্রস্থ তরঙ্গ। [১]
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনা১. কোন মাধ্যমের একই প্রকার কম্পনে অগ্রগামী তরঙ্গের উৎপত্তি হয়।
২. এটি একটি সুষম মাধ্যমের মধ্য দিয়ে একটা নির্দিষ্ট দ্রুতি বা বেগে প্রবাহিত হয়।
৩. অগ্রগামী তরঙ্গের বেগের মাধ্যমের ঘনত্ব ও স্থিতিস্থাপকতার উপর নির্ভর করে।
৪. মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পন তরঙ্গ প্রবাহের সাপেক্ষে আর ও লম্বিক হতে পারে।
৫. মাধ্যমের কণাগুলো কখনো স্থির থাকে না।
৬. তরঙ্গ মুখের অভিলম্ব বরাবর শক্তি বহন করে এ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।
৭. তরঙ্গ প্রবাহে মাধ্যমে বিভিন্ন অংশের চাপ ও ঘনত্বের একই প্রকার পরিবর্তন ঘটে।
৮. মাধ্যমে মাধ্যমের প্রতিটি কণার কম্পাঙ্ক ও বিস্তার একই হয় এবং তারা একই ধরনের কম্পনে কম্পিত হয়।
৯. তরঙ্গের প্রবাহের দরুন মাধ্যমের কণার দশা পরবর্তী কনাতে স্থানান্তরিত হয়।এরূপ দুটি কণার দশা বৈষম্য তাদের দূরত্বের সমানুপাতিক।
১০. মাধ্যমের যেকোনো কণার বিভিন্ন ধর্ম যেমন:বেগ,ত্বরণ,শক্তি প্রভৃতি এরূপ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।
অগ্রগামী তরঙ্গ সংক্রান্ত রাশিসমূহ
সম্পাদনা১. তরঙ্গদৈর্ঘ্যঃ তরঙ্গ সৃষ্টিকারী কোনো কম্পনশীল কণা পূর্ন কম্পন সম্পন্ন করতে যে সময় নেয়, সেই সময়ে যতটুকু দুরত্ব অতিক্রম করে তা হলো তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
২. বিস্তারঃ কোনো কম্পনশীল কণা তার সাম্যাবস্থান থেকে ডানে, বামে অথবা উপরে বা নিচে সর্বাধিক যে দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে ঐ কণার বিস্তার বলা হয়।
৩. দশাঃ কোনো কণার গতির যেকোনো সময়ের অবস্থাকে ঐ কণার দশা বলে।
৪. কৌণিক কম্পাংকঃ কম্পনরত কণাটির প্রতি একক সময়ে কৌণিক সরনের হারকে কণাটির কৌণিক কম্পাংক বলে। [২]
সাধারণ সমীকরন
সম্পাদনাঅগ্রগামী তরঙ্গের সাধারণ সমীকরনগুলো হলোঃ
y = a sin (ωt - 2πx/λ)
y = a sin2π/λ (vt - x) [অগ্রগামী তরঙ্গ x অক্ষের ধনাত্মক দিকে হলে এ সমীকরণটি প্রযোজ্য। ঋণাত্মক দিকে হলে (vt - x) এর স্থলে (vt + x) বসবে]
যেখানে,
y = t সময়ে সাম্যাবস্থান থেকে কণার সরণ
a = কণাটির কম্পনের বিস্তার
ω = কণাটির কৌণিক কম্পাংক
λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য
v = তরঙ্গবেগ
x = সরণ
[৩]
এটি a বিন্দু থেকে x দুরত্বে অবস্থিত কোনো কণার সরনের সমীকরণ।
এ সমীকরন দুটি থেকে কোনো অগ্রগামী তরঙ্গের বিস্তার, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, সরণ ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।
উদাহরণ
সম্পাদনা১. পুকুরের পানিতে ঢিল ছোঁড়া হলে ঢেউ পানির মধ্য দিয়ে ক্রমাগত অগ্রসর হতে থাকে। এটি অগ্রগামী তরঙ্গের উদাহরণ।
২. কেউ কথা বললে সেই শব্দ বায়ু মাধ্যমে ক্রমাগত সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে শ্রোতার কানে পৌঁছে। এটি অগ্রগামী তরঙ্গ।