অকিঞ্চন দাস

বৌদ্ধ সহজিয়া সম্প্রদায়-ভুক্ত কবি

অকিঞ্চন দাস ছিলেন সহজিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত প্রাচীন কবি। তার জন্মতারিখ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তারিখে পাওয়া যায় না, ধারণা করা হয় ১৭শ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শ্রীচৈতন্যভক্তিরসাত্মিকা, শ্রীচৈতন্যভক্তিবিলাস, ভক্তিরসালিকা, ভক্তিরসচন্দ্রিকা প্রভৃতি গ্রন্থের রচনাকার মনে করা হয় তাকে। তিনি রামানন্দ রায় রচিত জগন্নাথবল্লভ নাটকের বাংলা অনুবাদ করেছিলেন।[১]

ঐতিহাসিকদের মতে অকিঞ্চন সম্পাদনা

ইতিহাস থেকে অকিঞ্চন দাস সম্পর্কে স্পষ্টভাবে তেমন কিছু জানা যায়নি বরং রয়েছে আরো ঘোলাটে বিষয়। অকিঞ্চন দাস নামে তিনজন প্রাচীন কবি রয়েছেন। তাই সঠিকভাবে অকিঞ্চন দাস বলতে একক কোন কবিকে চিহ্নিত করা শ্রমসাধ্য। নিচে তিন অকিঞ্চন সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মতবাদ উল্লেখ করা হলো-

  • ড. শিশিরকুমার দাশ তার “বাংলা সাহিত্য সঙ্গী” (২০০৩) গ্রন্থে লিখেছেন যে “অকিঞ্চন দাস” সপ্তদশ শতাব্দীর বৈষ্ণবতত্ত্বগ্রন্থ লেখকদের একজন। ইনি রামানন্দ রায়ের জগন্নাথ বল্লভ নাটকটি সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। তার ভণিতায় “ভক্তিরস চন্দ্রিকা”, “ভক্তি রসাত্মিকা” এ “ভক্তি রসালিকা” নামে তিনটি তত্ত্বনিবন্ধের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। অকিঞ্চন দাস সম্বন্ধে সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত "সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান", ১ম খণ্ডে মোটামুটি একই কথা রয়েছে। উপরন্তু তারা জানিয়েছে যে “অকিঞ্চন দাস” নামে একজন পদকর্তার কয়েকটি পদও আছে। উভয়ে একই লোক কি না জানা যায় না।
  • অকিঞ্চন (১৯৫০ - ১৮৩৬) - সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত "সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান" গ্রন্থে “অকিঞ্চন” নামে এই কবির উল্লেখও করা হয়েছে। তার আসল নাম ছিল রঘুনাথ রায়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন বর্ধমান জেলার চুপী-তে। পিতা ব্রজকিশোর রায় ছিলেন বর্ধমানরাজের দেওয়ান। অকিঞ্চন ভণিতায় তার বহু উত্কৃষ্ট শ্যামাসঙ্গীত ও কৃষ্ণ বিষয়ক গান পাওয়া যায়। তিনি দিল্লীর বিখ্যাত ওস্তাদের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পরমার্থ চিন্তায় বর্ধমানরাজের দেওয়ানি ত্যাগ করেন।
  • রায়বাহাদুর খগেন্দ্রনাথ মিত্র (১৮৮০ - ১১.১০.১৯৬১) - সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত

"সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান", ১ম খণ্ডের ১৭৫-পৃষ্ঠায় রয়েছে যে তিনি “অকিঞ্চন দাস” নাম ব্যবহার করতেন।

কবি অকিঞ্চন দাসের বৈষ্ণব পদাবলী সম্পাদনা

১৮৭০ সাল নাগাদ চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা সংগৃহীত এবং তার পুত্র রাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা ১৯২২ সালে প্রকাশিত “শ্রীশ্রীপদামৃতসিন্ধু” গ্রন্থে অকিঞ্চন দাসের দুটি পদ পাওয়া গিয়েছে। এ পদ দুটি যে অষ্টাদশ শতকের কবি অকিঞ্চন দাসের তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সংকলক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সারা জীবন ধরে নদীয়ার মেলায় মেলায় গিয়ে কীর্তনিয়াদের থেকে সরাসরি গীত সংগ্রহ করেছিলেন, উনিশ শতকের মধ্যভাগে। এর পরে ১৯৪৬এ প্রকাশিত হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদিত "বৈষ্ণব পদাবলী" সংকলনে এবং ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত, কাঞ্চন বসু সম্পাদিত পদাবলী সংকলন “বৈষ্ণব পদাবলী” সংকলনে, ১৮টি “অকিঞ্চন”-এর পদ রয়েছে। কিন্তু সেই সংকলনে পদকর্তাদের কোনো পরিচিতি না থাকায় এই সকল পদের রচয়িতা সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা বিভ্রান্তিকর। কেননা হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় মহাশয় এবং কাঞ্চন বসু মহাশয় তাদের বিশাল সংকলনে, পদের উৎস এবং পদকর্তা সম্বন্ধে কোন তথ্য উল্লেখ করেন নি।

  • অতঃপর কিছু পরে রাধা বিনোদিনী
  • অভিমন্যু বেশে হরি যথা
  • আয়ান আসিয়া ডাকিছে হাঁকিয়া
  • আয়ানের বেশে বাহির হইলা
  • একদিন একাকিনী ভাগ্যবতী নন্দরাণী
  • কুটিলা তখন হরষিত মন
  • খেলাতে হারিলে বাঁশি রমণীর মাঝে
  • গগনে নিরখি বেলা ছল করি কুটিলা
  • চলিলেন হরি রাধাপতি শিরে
  • জয় জয় শচীর নন্দন গোরারায়
  • নটবর গোরা রায় ভুবন মোহন
  • নিকুঞ্জ মন্দির ঘরে ধরি কিশোরীর করে
  • প্রভাতে উঠিয়া শচী গৌরাঙ্গের মুখ মুছি
  • প্রেমেতে অবশ হয়ে প্রাণনাথ মুখ চেয়ে
  • যাবটে আমার রাইএর গোচর
  • শচী ঠাকুরাণী আভরণ আনি মহানন্দে কুতূহলে
  • শুন শুন নিবেদন বিনেদিনী রাই
  • শুন শুন সুবল সাঙ্গাতি
  • সখী সঙ্গে বসি রঙ্গে বিনোদিনী রাই
  • সব সহচরী সহ বিনোদিনী রাই
  • হেন কালে আয়ান তথায়

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ডিসেম্বর ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ১