হোমি ব্যারাবালা (৯ই ডিসেম্বর ১৯১৩ – ১৫ই জানুয়ারি ২০১২), সাধারণত দালদা ১৩ ছদ্মনামে পরিচিত, ভারতের একজন প্রথম মহিলা চিত্র সাংবাদিক[২][৩] তিনি ১৯৩০ এর দশকের শেষ দিকে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে অবসর গ্রহণ করেন। ২০১১ সালে, তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন, যেটি ভারত প্রজাতন্ত্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।[৪][৫]দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়ায় যোগ দেবার পর, তিনি হলেন মূলধারার প্রকাশনায় যোগ দেওয়া প্রথম ভারতীয় নারী।[৬][৭]

হোমি ব্যারাবালা
জন্ম(১৯১৩-১২-০৯)৯ ডিসেম্বর ১৯১৩
মৃত্যু১৫ জানুয়ারি ২০১২(2012-01-15) (বয়স ৯৮)
বড়োদরা, গুজরাত, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাস্যার জে. জে. স্কুল অফ আর্ট
পেশাচিত্র সাংবাদিক
দাম্পত্য সঙ্গীমাকেনশ ব্যারাবালা (মৃত্যু. ১৯৬৯)
সন্তানফারুক[১]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

হোমি ব্যারাবালা ১৯১৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর গুজরাতের নভসারিতে একটি পারসি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৮] বাবার ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার কোম্পানির সাথে নানা জায়গা ঘুরে তার শৈশব কেটেছে।[৯] বোম্বে চলে যাওয়ার পর, হোমি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্যার জে. জে. স্কুল অফ আর্ট থেকে পড়াশোনা করেছেন।[১০]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

হোমি বিবাহ করেছিলেন, টাইমস অব ইন্ডিয়ার হিসাবরক্ষক এবং চিত্রগ্রাহক মাকেনশ জামশেদজী ব্যারাবালাকে। [৯] ১৯৭০ সালে, তার স্বামীর মৃত্যুর এক বছর পর, তিনি চিত্রসাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছিলেন, কারণ তিনি নতুন প্রজন্মের পাপরাজ্জি সংস্কৃতির সঙ্গে কাজ করতে চান নি।[১১][১২]

হোমি এরপর রাজস্থানের পিলানিতে চলে যান। তার সঙ্গে ছিলেন তার একমাত্র পুত্র ফারুক, যিনি বিটস পিলানিতে পড়াতেন। ১৯৮২ সালে তিনি তার পুত্রের সঙ্গে বড়োদরা (পূর্বের বরোদা)য় ফিরে আসেন।[১৩] ১৯৮৯ সালে ক্যান্সারে তার ছেলের মৃত্যুর পর, তিনি বরোদায় একটি ছোট কামরায় একা থাকতেন এবং বাগান করে সময় কাটাতেন।[১৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

হোমি ১৯৩০ এর দশকে তার কর্মজীবন শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে, তিনি মুম্বাই ভিত্তিক দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার জন্য প্রদেয় দায়িত্বের ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে তার সবচেয়ে প্রশংসিত, অনেক সাদা কালো ছবি প্রকাশিত হয়েছিল।[১৫] তার কর্মজীবনের প্রথম দিকে, যেহেতু হোমিকে কেউ জানতেননা এবং তিনি একজন মহিলা ছিলেন, তার তোলা ছবি তার স্বামীর নামে প্রকাশিত হ্ত।[১৬]

অবশেষে, তার তোলা ছবি জাতীয় পর্যায়ে নজরে কাড়ে, বিশেষ করে ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ তথ্য পরিষেবাদিতে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লীতে যাওয়ার পর। একজন সংবাদ চিত্রগ্রাহক হিসেবে, স্বাধীনতা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে, তিনি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, জওহরলাল নেহ্‌রু, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ইন্দিরা গান্ধী এবং নেহরু-গান্ধী পরিবার সহ অনেক রাজনৈতিক এবং জাতীয় নেতাদের ছবি তোলেন। [১৬]

 
২৪শে নভেম্বর ১৯৫৬ সালে, আনুষ্ঠানিক পোশাকে দলাই লামা সিকিমের নাথু গিরিবর্ত্ম দিয়ে ভারতে ঢুকছেন, হোমি ব্যারাবালার তোলা ছবি।

১৯৫৬ সালে, তিনি লাইফ ম্যাগাজিনের হয়ে চতুর্দশ দলাই লামার ছবি তোলেন, যখন তিনি নাথু গিরিবর্ত্ম হয়ে প্রথম ভারতের সিকিমে প্রবেশ করেছিলেন। [১৭]

তার বেশিরভাগ ছবি "দালদা ১৩" ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। তার এই নামের পছন্দের পিছনে কারণ ছিল এই যে, তার জন্মসাল ছিল ১৯১৩, ১৩ বছর বয়সে স্বামীর সাথে তার প্রথম দেখা হয় এবং তার প্রথম গাড়ির নম্বর ছিল "ডিএলডি ১৩″[১৩].

১৯৭০ সালে, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই, হোমি চিত্রগ্রাহকতা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, নতুন প্রজন্মের আলোকচিত্রীদের "খারাপ আচরণ"এর জন্য। [১৮] তিনি তাঁর জীবনের শেষ ৪০ বছরের বেশি সময়ে একটিও ছবি তোলেননি। তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হত, তাঁর পেশার শীর্ষে থাকার সময় তিনি কেন চিত্রগ্রাহকতা ছেড়ে দিলেন, তিনি বলতেন

"এটার আর কোন মূল্য নেই। আমাদের, আলোকচিত্রীদের জন্য নিয়ম ছিল; আমরা এমনকি, যথাযথ পোশাক পরিধান রীতি-নীতি অনুসরণ করতাম। আমরা একে অপরকে সম্মান করতাম, সহকর্মীদের মত ব্যবহার করতাম। কিন্তু তারপর, সব কিছু খুব খারাপ দিকে পরিবর্তিত হয়ে গেল। তারা শুধুমাত্র দ্রুত কিছু পয়সা রোজগারে উৎসাহী হয়ে পড়ল; আমি আর এই ভিড়ের অংশ হতে চাই নি।"[১৫]

জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে, হোমি, দিল্লি ভিত্তিক আলকাজি ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস কে, তাঁর ছবির সংগ্রহ দান করেন এবং, ২০১০ সালে, মুম্বইএর ন্যাশানাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট (এনজিএমএ) এর সহযোগিতায়, সংস্থাটি তাঁর কাজের একটি প্রতিক্ষেপক উপস্থাপন করেছে।[১৫]

গুগল, হোমিকে তাঁর ১০৪ তম জন্ম বার্ষিকীতে, একটি ডুডল "লেন্স নিয়ে প্রথম মহিলা" দিয়ে সম্মানিত করেছে।[১৯]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০১২ সালের জানুয়ারিতে, হোমি তার বিছানা থেকে পড়ে যান এবং তার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তার প্রতিবেশীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখানে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তিনি ফুসফুসের রোগে ভুগছিলেন, যার ফলে ১৫ই জানুয়ারী ২০১২ সালে তার মৃত্যু ঘটে।[২০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "India's first woman photojournalist, a chronicler of history"The Indian Express। ১৬ জানুয়ারি ২০১২। ১১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. Pandya, Haresh (২৯ জানুয়ারি ২০১২)। "Homai Vyarawalla, Indian Photojournalist, Dies at 99"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  3. "Homai Vyarawalla: India's First Female Photojournalist | #IndianWomenInHistory"Feminism in India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৭ 
  4. "An iconic observer – The curious life and times of Homai Vyarawalla"The Telegraph। ২৩ জানুয়ারি ২০১১। 
  5. "Homai gets Padma Vibhushan - Times of India"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১১ 
  6. Carolyn M. Byerly (১২ জানুয়ারি ২০১৬)। The Palgrave International Handbook of Women and Journalism। Palgrave Macmillan UK। পৃষ্ঠা 391–। আইএসবিএন 978-1-137-27324-6। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৮ 
  7. "Google Doodle honours India's first woman photojournalist Homai Vyarawalla"The Economic Times। ৯ ডিসেম্বর ২০১৭। ১৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৮ 
  8. "The Times of India on Mobile"। M.timesofindia.com। ৯ ডিসেম্বর ১৯১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১২ 
  9. Pandya, Haresh (২০১২)। "Homai Vyarawalla, Indian Photojournalist, Dies at 98"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৬ 
  10. "Homai gets Padma Vibhushan"The Times of India। ২৫ জানুয়ারি ২০১১। ১১ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৯ 
  11. Cotter, Holland (২০১২-০৮-২৩)। "'Candid,' Photos by Homai Vyarawalla, at Rubin Museum"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-০৯ 
  12. Pandya, Haresh (২০১২)। "Homai Vyarawalla, Indian Photojournalist, Dies at 98"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-০৯ 
  13. "Homai Vyarawalla: First lady of the lens"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৬ 
  14. Sabeena., Gadihoke, (২০১০)। India in focus : camera chronicles of Homai Vyarawalla। Vyarawalla, Homai.। New Delhi: Mapin Publishing in association with Parzor Foundation। আইএসবিএন 1935677071ওসিএলসি 868304226 
  15. "Meet India's first lady photographer Homai Vyarawalla"Rediff.com। ৩ মার্চ ২০১১। 
  16. Gadihoke, Sabeena। "Homai Vyarawalla: India's First Female Photojournalist"Time। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-১৬ 
  17. Haresh Pandya, Homai Vyarawalla, Pioneering Indian Photojournalist, Dies at 98, NYT, January 28, 2012
  18. Haresh Pandya, "Homai Vyarawalla, Pioneering Indian Photojournalist, Dies at 98", New York Times, 29 January 2012.
  19. Kalam, M (২০১৭-১২-০৯)। "Homai Vyarawalla: Google Doodle celebrates India's first female photojournalist"TechObserver (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-০৮ 
  20. Vyarawalla, Homai। "India's first woman photojournalist dead"timesofindia.indiatimes.com। ৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১২ 
গ্রন্থপঞ্জি
পত্রিকা নিবন্ধ
  • Gaur, June (২০০৪), "Lens view: Homai Vyarawalla", The Hindu (Online সংস্করণ), New Delhi (প্রকাশিত হয় ২০ জুন ২০০৪), ২০ নভেম্বর ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৯ 
  • Bunsha, Dionne; ও অন্যান্য (২০০৫), "History, in black and white", Frontline (প্রকাশিত হয় ১৩ আগস্ট ২০০৫), 22 (18), ৯ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা 
  • Sundaram, V. (২০০৬), Homai Vyarawalla: India's First Woman Photo Journalist, New York: Boloji.com (প্রকাশিত হয় ৩ মার্চ ২০০৭), ১৩ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা