হুমায়ূন কবীর সাধু
হুমায়ূন কবীর সাধু (১ মে ১৯৮২–২৫ অক্টোবর ২০১৯), যিনি হুমায়ূন সাধু নামে পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও লেখক।[৩] তিনি মোস্তফা সারোয়ার ফারুকির নির্মিত মেইড ইন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। নাট্য অভিনেতা হিসেবে তিনি একাধিক নাটক ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। নাট্য পরিচালক হিসেবে তার অভিনীত ও পরিচালিত নাটক চিকন পিনের চার্জার বেশ আলোচিত হয়েছিলো। তাকে নিয়ে বা তার মতো আকারে মানুষদের নিয়ে বানানো ঊন-মানুষ টেলিফিল্মে অভিনয় করে তিনি বেশ পরিচিতি পান।[৪][৫][৬]
হুমায়ূন কবীর সাধু | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ২৫ অক্টোবর ২০১৯[১][২] | (বয়স ৩৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
পেশা | অভিনেতা, নাট্য পরিচালক ও লেখক |
পিতা-মাতা | মরিয়ম বেগম (মাতা) |
শিক্ষা ও ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাসাধুর জন্ম বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়, শৈশব ও কৈশর কেটেছে জন্মস্থান চট্টগ্রামেই। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সপ্তম। তার মা মরিয়ম বেগম সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন। মরিয়ম বেগম সর্বদা হিন্দি, ইংরেজি এবং বাংলা চলচ্চিত্র দেখতে পছন্দ করেন। পিয়ানোবাদক, লাইফ ইজ বিউটিফুল, চিলড্রেন অফ হ্যাভেন, সিটি অফ গড এবং ফেলুদা এমন কয়েকটি চলচ্চিত্র হুমায়ুন তার মায়ের সাথে দেখেছেন। এতে করে তার চলচ্চিত্র তৈরি ও অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার হামলার পরপর তাদের পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। হুমায়ূন তখন জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় যান।[৭]
সাধু দৈহিক গঠনে একটু ছোট হওয়ায় তার বাবা স্কুলে পাঠাতে চাইছিলেন না। তার বড় বোনের কাছেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরে বড় বোন তাকে রঙ্গিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠান। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। হুমায়ূনের বড় ভাই সাইফুল কবীর তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র। তিনি আবার হুমায়ূনকে সেই স্কুলে নিয়ে যান এবং প্রথম সাময়িক পরীক্ষা পর্যন্ত তাকে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন। হুমায়ুন ২য় শ্রেণিতে ১৩০ জন ছেলে-মেয়েকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। সহপাঠীরা তখন হুমায়ূনকে কাঁধে নিয়ে উল্লাস করে। হুমায়ুন পরিবারও মিষ্টি কিনে খাইয়েছিল পাড়ার লোকদের।[৮]
হুমায়ূন এসএসসি পাসের পর নাসিরাবাদ কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণ চলচ্চিত্র দেখার নেশায় এইচএসসির রেজাল্ট তেমন ভালো হয়নি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন।[৯]
কর্মজীবন
সম্পাদনাঢাকার বিভিন্ন রেলস্টেশনে, বাসস্টেশনে ঠিকানাহীনভাবে কিছুকাল কাটে। এরপর চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে পরিচয় ও তার সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে অভিনয় জগতে কাজ শুরু করেন। কলেজ চলাকালীন চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্র (চট্টগ্রাম ফিল্ম সেন্টার) এর সাইবাল চৌধুরী এবং জাভেদ আহসান তাকে চলচ্চিত্রে কাজ করার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলেন। তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়ে সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন তার প্রথম চলচ্চিত্র 'হোমো-সেপিয়েন্স'-এ কাজ শুরু হয়েছে। তার প্রথম শর্ট ফিল্ম 'গুঞ্জন' চলচ্চিত্র নির্মতা তারেক মাসুদের সহায়তায় নির্মিত হয়েছিল। এটি ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয়েছিল। ‘বেঁচে থাকার জন্য আমি’ 'পাখি পাকা পেঁঁপে খায়' নামে নাটক সিরিজ তৈরি করেন। [১][২][১০]
অভিনীত চলচ্চিত্র
সম্পাদনাঅভিনীত নাটক
সম্পাদনা২০১০ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলে ক্যাথরিন মাসুদের অধীনে একটা কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন সাধু। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘গড ভার্সেস গড’ নামে একটি শর্টফিল্ম তৈরি করেন। ২০১২ সালে তার পরিচালিত প্রথম নাটক ‘দরশন’ বৈশাখী টিভিতে প্রচারিত হয়। তিনি ৭ টিভি নাটক পরিচালনা করেছেন। ‘সিজোফ্রেনিয়া’ ও ‘অ-মানুষিক’ নামে দুটি টেলিফিল্মও বানিয়েছেন। অভিনয় করেছেন সমানসংখ্যক নাটকে।[১১]
- ঊন-মানুষ (২০০৬)
- চিকন পিনের চার্জার (২০১৭)
চিকন পিনের চার্জার
সম্পাদনাহুমায়ূন সাধুর আলোচিত নাটক ‘চিকন পিনের চার্জার’। নাটকটির লেখক ও পরিচালক তিনি নিজেই। এ নাটকে অভিনয়ও করেছেন এবং তার বিপরীতে ছিলেনে অভিনেত্রী শাহতাজ। টেলিফিল্ম ছবিয়াল রি-ইউনিয়নের [১২] অংশ হিসেবে বানিয়েছেন এটি। জীবন থেকে নেওয়া গল্প পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। নাটকটির পটভূমি ছিলো ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্মার্ট মেয়ের সঙ্গে আলাপসালাপ চলতে থাকে সাধুর। প্রেমই হয়ে যায় একরকম। মেয়েটির সঙ্গে যখন তিনি বাস্তবে দেখা করতে যান তখন মেয়েটি সব কিছু অস্বীকার করে বসে। খুব দুঃখ পান সাধু। পরে তিনি একটি কঠিন সত্যের মুখোমুখি হন—মেয়েরা যেমন হ্যান্ডসাম ছেলে পছন্দ করে, ছেলেরাও তো বেঢপ কাউকে গ্রহণ করে না। তাহলে কি এই মানুষগুলো মানুষ নয়?[১৩]’
সঙ্গীত অ্যালবাম
সম্পাদনাহুমায়ূন সাধুর প্রযোজনায় যেদিন সেই নামে ‘আমার ঘরে বিরাজ করে লালনগীতি’ নামে একটি সঙ্গীত অ্যালবাম অ্যামাজনে প্রকাশ হয়েছে।
লেখক
সম্পাদনাহুমায়ূন সাধুর লেখা অবলম্বনে বেশ কিছু শর্টফিল্ম ও নাটক তৈরি হয়েছে। তার লেখা গল্পের ননাই প্রকাশ হয়েছে।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
সম্পাদনা২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুমায়ুন সাধু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন এবং পরবর্তীতে ২০ অক্টোবর রাতে আবারও তিনি একই রোগে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।[১৪][১৫] সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার মেটাল রহিম মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[১৬][১৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "শুভ জন্মদিন হুমায়ূন কবির সাধু"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ "চলেই গেলেন সাধু"। দৈনিক কালেরকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ BanglaNews24.com। "একজন হুমায়ূন সাধু"। banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫।
- ↑ "বড় মাপের অনুপ্রেরণা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "তাঁর ছায়া বড়"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২২ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "'ঊন-মানুষ' টেলিছবির হুমায়ূন সাধু মারা গেছেন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫।
- ↑ "Man with the Wand"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৫-২৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১।
- ↑ "বাংলানিউজের আড্ডায় নির্মাতা, অভিনেতা ও লেখক হুমায়ূন সাধু"।
- ↑ "The multi-talented SADHU"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০২-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১।
- ↑ "হুমায়ূনের সাধু হয়ে ওঠা"। Risingbd.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৩।
- ↑ "চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন হুমায়ূন সাধু | কালের কণ্ঠ"। Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১।
- ↑ "Chabial Reunion (TV Mini-Series 2017) - IMDb"। ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ।
- ↑ Television, Independent। "আলোচনায় হুমায়ূন সাধুর নাটক 'চিকন পিনের চার্জার'"। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। ২০১৯-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১।
- ↑ "অভিনেতা ও নির্মাতা হুমায়ূন সাধু লাইফ সাপোর্টে"। The Daily Star Bangla। ২০১৯-১০-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১।
- ↑ "লাইফ সাপোর্টে অভিনেতা হুমায়ূন সাধু"। এনটিভি। ২০১৯-১০-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১।
- ↑ "অভিনেতা হুমায়ূন সাধু মারা গেছেন"। চ্যানেল আই অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১০-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৪।
- ↑ "অভিনেতা হুমায়ূন সাধুর দাফন সম্পন্ন"। RTV Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৭।