হস্তীবিদ্যার্ণব, সুকুমার বরকাইথের রচনা করা একটি হাতিবিষয়ক পুথি। এর মূল সংস্কৃত গজেন্দ্র চিন্তামণি। আহোম স্বর্গদেউ শিব সিংহ (১৭১৩-১৭৪৫) এবং বড়রাজা ফুলেশ্বরী কুঁবরীর রাজ অনুগ্রহে হস্তীবিদ্যার্ণব রচনা করা হয়েছিল। এখানে হাতির ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তৃত সচিত্র বর্ণনা আছে।[১] এর চিত্রসমূহের জন্য হস্তীবিদ্যার্ণব বিশেষভাবে পরিচিত।

হস্তীবিদ্যার্ণবের পৃষ্ঠায় স্বর্গদেউ শিব সিংহ

হস্তীবিদ্যার্ণব গভীরভাবে অধ্যয়ন, পর্যবেক্ষণ এবং পারম্পরিকসমূহের সহায়তায় রচনা করা হয়েছিল। হাতি রাজার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীব ছিল। যুদ্ধ-বিগ্রহ বাদেও ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে হাতির মহত্ব ছিল।[২] পশু চিকিৎসাবিষয়ক এটি অমূল্য গ্রন্থ।

১৭৩৪ সালে সুকুমার বরকাইথের অনুবাদ করা ‘হস্তীবিদ্যার্ণব-সারসংগ্রহ’ পুথিটি পরে প্রায় অবিকৃতরূপে পাওয়া গেছে। তাতে থাকা ব্যাখ্যামূলক চিত্রসমূহ অতি যত্নসহকারে অঙ্কন করা হয়েছিল। এই বই অসম প্রকাশন পরিষদ একইরূপে প্রকাশ করেছে।

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

আহোম স্বর্গদেউ শিব সিংহ এবং রাণী ফুলেশ্বরী কুঁবরীর অনুরোধে সুকুমার বরকাইথ হস্তীবিদ্যার্ণব রচনা করেছিল। রাজ-অনুগ্রহে রচনা করার জন্য এর বিষয়বস্তু মূলতঃ রাজ্যের স্থিতির দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা হয়েছিল। রাজ্যের জন্য কোন হাতি উপযুক্ত, কেমনভাবে হাতিকে সম্ভ্রান্ত লোকের জন্য এবং যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য প্রশিক্ষিত করা যায় ইত্যাদি এর মূল বিষয়। এর সঙ্গে হাতির সাথে ব্যবহৃত রশি, হাতিতে উঠতে নির্দেশনা, অঙ্কুশের বিষয়ে, হাতির রক্ষণাবেক্ষণ, চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এখানে চর্চা করা হয়েছে।

হস্তীবিদ্যার্ণবে হাতির বিভিন্ন চরিত্রসমূহের বিষয়ে প্রণালীবদ্ধভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রাজার জন্য হাতির বিষয়ে জ্ঞান থাকা অনিবার্য ছিল। কেবল জ্ঞানী রাজা হাতির বিশেষ জাত চিনতে পারে বলে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।

হস্তীবিদ্যার্ণবকে অন্যতম পুরানো অসমীয়া বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ হিসাবেও অভিহিত করা হয়।

শিল্পীগণ সম্পাদনা

হস্তীবিদ্যার্ণবের অলংকরণের জন্য রাজা রাজস্থান থেকে দুজন চিত্রশিল্পী যথাক্রমে দিলবর এবং দোছাইকে এনেছিলেন। তাঁরা খুব সম্ভবত আসামের প্রাকৃতিক পরিবেশের দৃশ্যর সাথে পরিচিত ছিলেন না। ছবিসমূহের জন্য বিখ্যাত হলেও এখানে আসামের দৃশ্যসমূহ উচ্চ পর্যায়ের নয়। মোগল শৈলীর সাথে স্থানীয় অসমীয়া শৈলীর চিত্রের এখানে সংমিশ্রণ দেখা যায়। অগরু গাছ থেকে তৈয়ার করা সাঁচিপাতায় হস্তীবিদ্যার্ণব লেখা হয়েছিল। হস্তীবিদ্যার্ণবকে আসামের অন্যতম বেশি অলংকৃত গ্রন্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

বর্তমান অবস্থান সম্পাদনা

বর্তমান হস্তীবিদ্যার্ণব পাণ্ডুলিপি আসামের গুয়াহাটিতে অবস্থিত ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্ব সঞ্চালকালয়ে সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। ১৯শ শতকের আরম্ভে রচনা করা মাজুলীর আউনীআটি সত্রের হাতি-পুথি এবং হস্তীবিদ্যার্ণব আলাদা আলাদা গ্রন্থ।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Barkaith, S. (1734). Hastividyarnava. Edited with an introduction by P.C. Choudhury. Guwahati: Publication Board, Assam.
  2. Barua, M. (2005). The Elephant in Assamese History and Mythology. Kaziranga National Park Centenary Celebration Volume P. 34-39. Forest Department of Assam, Govt. of Assam.
  3. srimanta.org[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]