হলীরাম ডেকা (১৯০১-১৯৬২) ছিলেন ভারতের কোনো হাইকোর্টে নিয়োগ পাওয়া প্রথম অসমীয়া প্রধান বিচারপতি। আইনসংক্রান্ত পেশা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি শেষ বয়সে তিনি গুয়াহাটিতে প্রাগজ্যোতিষ কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা সহ অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করা, অসাধারণ গুণাবলী উপলব্ধি করা এবং বিশেষত তরুণদের কর্মমুখী, স্বাস্থ্যকর, দেশাত্মবোধক চেতনায় অনুপ্রাণিত করায় তিনি পারদর্শী ছিলেন।[১]

হলীরাম ডেকা
জন্ম১৯০১
সৰ্থেবাড়ি, বড়পেটা, আসাম
মৃত্যু২০ ডিসেম্বর ১৯৬২
পেশাআইনজীবী ও উচ্চ আদালতের বিচারপতি
ভাষাঅসমীয়া
জাতীয়তা ভারত
নাগরিকত্বভারত
সন্তানপ্ৰণবজ্যোতি ডেকা

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় সম্পাদনা

হলীরাম ডেকা ১৯০১ সালের ১৯ জুনে দক্ষিণ আসামের সর্থেবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তাঁর পিতার নাম জয়রাম ডেকা এবং মায়ের নাম মাইপ্রিয়া। জয়রাম ডেকা পেশায় একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। দরিদ্র পরিবার হলেও সমাজসেবক হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম ছিল। জয়রাম-মাইপ্রিয়ার ছয় ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে হলীরাম ছিলেন জ্যেষ্ঠ। বড় ছেলে হিসেবে হলীরামকে এই দরিদ্র পরিবারের কিছু দায়িত্ব বহন করতে হয়েছিল। হলীরাম ডেকা হলেন অসমীয়া সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পকার প্রণবজ্যোতি ডেকার পিতা।[৩]

শিক্ষা সম্পাদনা

সর্থেবাড়িতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি পাঠশালা এলাকার চৌখুটি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অর্থাভাবের কারণে বেশকিছু বিদ্যালয় পরিবর্তনের পর তিনি বড়পেটা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি কটন কলেজ থেকে গণিতে অনার্সসহ আইএ এবং সংস্কৃতে দ্বিতীয় শ্ৰেণিতে প্ৰথম হয়ে বিএ পাস করেন। উল্লেখ্য, ওই বছর কোনো শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণি পায়নি। স্নাতক হওয়ার পর আসাম সরকার হলীরাম ডেকাকে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার জন্য একটি বিশেষ বৃত্তি দেয়। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে না চাইলেও অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার মতো অর্থসম্বল ছিল না তার। তাই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বৃত্তি পেলেও কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে শিবপুর থেকে ফিরে আসেন। এরপর তিনি আইন অধ্যয়নের ইচ্ছা নিয়ে গুয়াহাটির আর্লস ল কলেজে ভর্তি হন। গুয়াহাটিতে প্রাথমিক আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি এমএ পড়ার জন্য কলকাতায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৫ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম স্থান নিয়ে বাংলায় এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একইসঙ্গে তিনি আইনের ডিগ্রিও লাভ করেন।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

শিক্ষা শেষ করে হলীরাম ডেকা গুয়াহাটিতে আইন চর্চা শুরু করেন। প্রায় পাঁ-ছয় বছর আইন অনুশীলন করার পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত আইনজীবী ড. বিদ্যাবিনোদ পালের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯৩১ সাল থেকে কলকাতা হাইকোর্টে আইন অনুশীলন শুরু করেন। ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত এখানে আইন অনুশীলন করার মাধ্যমে তিনি একজন বলিষ্ঠ আইনজীবী হয়ে ওঠেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসমীয়া ভাষার খণ্ডকালীন অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৪৬ সালে আসাম সরকারের অনুরোধে রাজস্ব ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসাবে আসামে ফিরে এসে তৎকালীন রাজধানী শিলংয়ে (বর্তমান মেঘালয়) বসতি স্থাপন করেন। ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ সালে গুয়াহাটিতে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি কোর্টের প্রথম রেজিস্ট্রার হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে তিনি জোড়হাটের জেলা জজ হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে হলীরাম ডেকা আসামের হাইকোর্টের একজন বিচারপতি নিযুক্ত হয়ে ১০ বছর এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি গুয়াহাটি হাইকোর্টের প্রথম অসমীয়া প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়ে একই বছরে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি আইনপেশায় সিদ্ধহস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিচারক হিসাবেও সুনাম অর্জন করেছিলেন।[৩]

রম্যরচনা সম্পাদনা

  • যতকিঞ্চিৎ (১৯৬২)

উপন্যাস সম্পাদনা

  • অলকালৈ চিঠি (অলকাকে চিঠি; ১৯৫০)
  • অৰুণালৈ চিঠি (অরুণাকে চিঠি; ১৯৫৬)

হলীরাম ডেকার ছদ্মনাম সম্পাদনা

  1. বোলাই শর্মা
  2. কেরপাই শর্মা,
  3. জ্ঞানানন্দ জগতী,
  4. হয়বর অভয়পুরীয়া,
  5. শূলপাণি ফুকন
  6. অপগণ্ড শর্মা

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৬২ সালের ২০ ডিসেম্বর এই আইনজ্ঞ ও সাহিত্যিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. হেমন্ত কুমাৰ ভৰালী। এহেজাৰ বছৰৰ এশগৰাকী অসমীয়া। অনন্ত হাজৰিকা, বনলতা প্ৰকাশন। পৃষ্ঠা ৩৭৮, ৩৭৯,৩৮০,৩৮১। 
  2. ন্যায়াধীশ হলিৰাম ডেকাৰ সাহিত্যকৃতি। সাদিন প্ৰিণ্টাৰ্ছ। পৃষ্ঠা ৬২। 
  3. এহেজাৰ বছৰৰ এশগৰাকী অসমীয়া। অনন্ত হাজৰিকা, বনলতা প্ৰকাশন। পৃষ্ঠা ৩৭৮, ৩৭৯,৩৮০,৩৮১।