সুধীরঞ্জন দাশ (১ অক্টোবর  ১৮৯৪ – ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারি হতে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের পঞ্চম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। "দ্য স্টেটসম্যান" ইংরাজী দৈনিকের পরিচালক মন্ডলীর  সভাপতি ছিলেন তিনি। [২]

সুধীরঞ্জন দাশ
পঞ্চম ভারতের প্রধান বিচারপতি
কাজের মেয়াদ
১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ – ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৫৯
নিয়োগদাতারাজেন্দ্র প্রসাদ
পূর্বসূরীবিজনকুমার মুখোপাধ্যায়
উত্তরসূরীভুবনেশ্বর প্রসাদ সিনহা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৮৯৪-১০-০১)১ অক্টোবর ১৮৯৪
কলকাতা , বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বৃটিশ ভারত[১]
মৃত্যু১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭(1977-09-18) (বয়স ৮২)
দাম্পত্য সঙ্গীস্বপ্না দাশ (মজুমদার)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠ ভবন

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

সুধীরঞ্জন দাশ বৃটিশ ভারতের কলকাতায় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের ঢাকার তেলিরবাগে। [১] তার পিতা বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও শিক্ষাব্রতী রাখালচন্দ্র দাশ [৩] এবং মাতা বিনোদিনী দাশ।     

তিনি শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে পড়াশোনা করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম চারজন ছাত্রের একজন ছিলেন তিনি। [২] তার গানের গলা খুব ভালো ছিল। অভিনয় করতে পারতেন।[৩] স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বঙ্গবাসী বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক হওয়ার পর তিনি  লন্ডনে যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে আইনের স্নাতক (এলএলবি) হন। ওই বছরেই  তিনি লন্ডনের গ্রে'জ ইন বারে আহূত হন।[৪][৫]

বিচারপতি সম্পাদনা

তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে উন্নীত হন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের পুইজন বিচারপতি হন।

দেশভাগের ফলে গঠিত নূতন রাজ্য পূর্ব পাঞ্জাবের প্রধান বিচারপতি হয়ে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে সিমলায় যান। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাব হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।

তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সংবিধান লাগু হওয়ার আগের দিন ফেডেরাল কোর্ট/ ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নিযুক্ত হন এবং দিল্লি আসেন। তিন বছরের বেশি সময়ের সর্বোচ্চ পদ গ্রহণে পূর্বে তিনি দু'বার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি মুল্লার লেখা 'ট্রান্সফার অফ প্রপাটিজ অ্যাক্ট' সম্পাদনা করেন।[৩] ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে সেপ্টেম্বর অবসর গ্রহণ করেন এবং শান্তিনিকেতনে আসেন।

অবসর জীবন সম্পাদনা

অবসরের পর তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে ছিলেন। ১৯৬১-৬৬ খ্রিস্টাব্দ সময়ে ওই পদে থাকার সময় তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেননি। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তার আজীবন সম্পর্ক ছিল। কিছু গ্রন্থও রচনা করেছিলেন -

  • আমাদের গুরুদেব
  • আমাদের শান্তিনিকেতন
  • যা দেখেছি যা পেয়েছি

সেসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ছিলেন। পাঞ্জাবের এককালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রতাপ সিং কাঁয়রোর বিরুদ্ধে অভিযোগর তদন্তের জন্য ভারত সরকার তাঁকে নিয়ে 'দাশ কমিশন' গঠন করেছিলেন। তিনি বহুদিন দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার পরিচালক মন্ডলীর সভাপতি ছিলেন।[৩]

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

সুধীরঞ্জন দাশ আইসিএস অফিসার এস বি মজুমদারের কন্যা স্বপ্না মজুমদারকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র সন্তান - একজন গ্রুপ ক্যাপ্টেন সুরঞ্জন দাশ, অন্য জন সুহৃদরঞ্জন দাশ এবং এক কন্যা সন্তান অঞ্জনা। তার কন্যার বিবাহ হয় তার জুনিয়র পরামর্শক অশোক কুমার সেনের সাথে, যিনি পরে ভারতের আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁদের সন্তানদের নামকরণ করেছিলেন।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ , সরলা রায়অবলা বসু এবং সতীশরঞ্জন দাশ তার নিকট আত্মীয় পরিজন।

১, সফদরজঙ্গ রোড সম্পাদনা

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি ১, সফদরজঙ্গ রোডে বাংলোয় বসবাস করতেন। যেখানে পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাস করতেন এবং ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১ অক্টোবর দু'জন দেহরক্ষীর তিনি  গুলিতে নিহত হন। বর্তমানে এটি ইন্দিরা গান্ধী স্মৃতি মিউজিয়াম।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Sudhi Ranjan Das" (পিডিএফ)Journal of the Indian Law Institute (ইংরেজি ভাষায়)। The Indian Law InstituteII (2–3): 154–156। জানুয়ারি–জুন ১৯৬০। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Biography on Supreme Court of India's NIC webpage
  3. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭৯৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  4. Some Alumni of Scottish Church College in 175th Year Commemoration Volume.
  5. Sen, Asit.