সাইক্লোস্টোমাটা হচ্ছে কর্ডাটা পর্বের ভার্টিব্রাটা (মেরুদণ্ডী প্রাণী) উপপর্বের একটি অধিশ্রেণি। এ অধিশ্রেণির প্রাণী দেরকে বলা হয় সাইক্লোস্টোম। এ অধিশ্রেণির অধীনে দুইটি শ্রেণি রয়েছে। এরা হচ্ছে মাইক্সিনি (Myxini) ও পেট্রোমাইজোনটিডা (Petromyzontida)। সাইক্লোস্টোমাটা শব্দের উৎপত্তি গ্রিক শব্দ 'সাইক্লোস' ও 'স্টোমা' হতে। 'সাইক্লোস' অর্থ গোল এবং 'স্টোমা' অর্থ মুখ। অর্থাৎ, এদের মুখ গোলাকার। [১]

প্যাসিফিক হ্যাগফিশ

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

১. শরীর লম্বা ও বাইন মাছের (eel fish) মতো। জোড়া পৃষ্ঠীয় পাখনা নেই। তরুনাস্থিসদৃশ পাখনা রশ্মি ও মিডিয়ান পাখনা বিদ্যমান।

২. এদের শরীর জোড়া এপেন্ডিজবিহীন। কোনো প্লীহাও নেই।

৩. দেহত্বক নরম, মসৃণ ও আঁশবিহীন। বহিঃকঙ্কাল নেই। তবে তরুণাস্থিত মতো অন্তঃকঙ্কাল রয়েছে কিন্তু কোনো হাড় নেই।

৪. জীবদ্দশায় নটোকর্ড বিদ্যমান। খাদ্য পরিপাকের জন্য পাকস্থলির প্রয়োজন পড়ে না।

৫. মস্তিষ্ক পরিদৃশ্যমান। হৃৎপিণ্ড দুই প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট। ৫-১৬ জোড়া গিল ও একটিমাত্র নাসারন্ধ্র রয়েছে।

৬. স্নায়বিক কর্মকাণ্ড ল্যাটেরাল লাইন দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রায় ১০ জোড়া ক্র‍্যানিয়াল নার্ভ রয়েছে।

৭. লিঙ্গ আলাদা।

৮. মেসোনেফেরিক কিডনি রেচনতন্ত্র হিসেবে ক্রিয়া করে৷

শ্রেণি সম্পাদনা

মাইক্সিনি (Myxini) : এ শ্রেণিভুক্ত মাছগুলো 'হ্যাগফিশ' নামে পরিচিত। সামুদ্রিক পরিবেশে বসবাসরত এক ধরনের জীবেরা মাইক্সিনি শ্রেণির অন্তর্গত। তাদের মুখ ও নাসারন্ধ্র প্রান্তে অবস্থিত এবং মুখে কয়েকটি দাঁত আছে। প্রায় ৬ থেকে ১৪ জোড়া গিল স্লিট (ফুলকা রন্ধ্র) উপস্থিত। এদের কোনো মুখগহ্বর নেই। ডর্সাল ও ভেন্ট্রাল রুট স্পাইনাল নার্ভ থেকে আলাদা নয়। ডর্সাল পাখনা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তবে যদি থাকে তবে তা দুর্বল হয়। এ শ্রেণির প্রাণীদের ডিমের আকৃতি বড় হয় ও সংখ্যা একাধিক। এদের জীবদ্দশায় লার্ভা দশা নেই।

পেট্রোমাইজোনটিডা (Petromyzontida) : এ শ্রেণিভুক্ত মাছগুলো ল্যাম্প্রে (Lamprey) নামেও পরিচিত। এদেরকে সাধারণত সমুদ্র ও সতেজ পানিতে দেখা যায়৷ এদেরও মুখ প্রান্তে অবস্থিত তবে দাঁত প্রচন্ড শক্ত (হর্ণি)। নাসারন্ধ্র পৃষ্ঠীয়ভাবে অবস্থিত ও তাদের একটি উন্নত পৃষ্ঠীয় পাখনা রয়েছে। ডর্সাল ও ভেন্ট্রাল রুট স্পাইনাল নার্ভ থেকে আলাদা। জীবদ্দশায় লার্ভা দশা বিদ্যমান। [২]

জীবনচক্র সম্পাদনা

মাইক্সিনি শ্রেণির পর্বের প্রাণী যারা সাধারণত হ্যাগফিশ নামে পরিচিত, তাদের প্রজননের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তেমন তথ্য জানা যায়নি। তবে পর্যবেক্ষণের ফলে কিছু তথ্য জানা গিয়েছে। হ্যাগফিশেরা হার্মাফ্রোডিটিক, অর্থাৎ তারা পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ এই দুটি লিঙ্গে বিভক্ত। স্ত্রী হ্যাগফিশেরা ৩০ টি শক্ত ও কুসুমসমৃদ্ধ ডিম পারে যা একে অপরের সাথে লেগে থাকে। হ্যাগফিশেরা এই ডিমের চারপাশে কুন্ডলী পাকিয়ে অবস্থান নেয়। তবে এটি জানা যায়নি যে তারা আদৌ এভাবে ডিমের যত্ন নেয় নাকি নেয় না।

হ্যাগফিশের কোনো লার্ভা দশা থাকে না। ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয় তা সরাসরি তাদের পিতা মাতার শারীরিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে তারা তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে সক্ষম। [৩]

অন্যদিকে ল্যাম্প্রেরা লার্ভা দশার মধ্য দিয়ে পূর্ণতা পায়। ডিম থেকে জন্ম নেওয়ার পরে তারা শাখা নদীর স্রোতের সাথে বেয়ে উপযুক্ত স্থানে পৌঁছে। এ স্থান হতে পারে কম স্রোতযুক্ত নদী তীর। এরপরে সদ্য জন্ম হওয়া ল্যাম্প্রে সেখানে আবাস তৈরি করে, খাদ্য গ্রহণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের মাধ্যমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। শ্যাম্পেন হ্রদ অববাহিকায় এই বৃদ্ধি সময় ৩-৪ বছর কিন্তু অন্যখানে এই সময় ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে৷ এই বৃদ্ধিসময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর গ্রীষ্মকালের মাঝে অথবা শেষের দিকে লার্ভা দশা পরিণত ল্যাম্প্রে হওয়ার দিকে ধাবিত হয়। তখন তাদের চোখ ও চোষক মুখ উন্নত হয় এবং কিডনির উন্নতির ফলে তারা নোনাপানিতে বেঁচে থাকার যোগ্যতা অর্জন করে। এরপর আবাসস্থল ছেড়ে গভীর জলে চলে যায় এবং পোষক জীব খুঁজে বের করে যার ভেতর থেকে সে জীবনধারণ করে। [৪]

গুরুত্ব সম্পাদনা

ল্যামপ্রেদের প্রচুর বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব রয়েছে। তারা পুষ্টি উপাদান সরবরাহ, সংরক্ষণ ও পুনরায় সেই পুষ্টিদ্রব্য ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করে। এর পাশাপাশি তারা অন্যান্য পশুদের জন্য খাদ্যের উৎস। [৫] অন্যদিকে হ্যাগফিশেরা ধাঙর হিসেবে কাজ করে সমুদ্রপৃষ্ঠ পরিষ্কার রাখে। এছাড়াও পচা মাছ ও বাইক্যাচ মাছগুলোকে সরিয়ে তারা সমুদ্র বিশুদ্ধ রাখতে পারে। হ্যাগফিশেরা ল্যামপ্রেদের মত পুষ্টি উপাদান রিসাইকেল করায় সক্ষম আবার এরা কার্বনও রিসাইকেল করতে পারে। [৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Cyclostomata 'origin of Cyclostomata'
  2. Cyclostomata byjus.com হতে সংগৃহীত
  3. Atlantic hagfish seasky.org হতে সংগৃহীত
  4. Sea Lamprey Biology dec.ny.gov হতে সংগৃহীত
  5. lampreysurveys.com
  6. marinelab.fsu.edu/Hagfish