সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩ ডিসেম্বর, ১৮৯৬ — ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৭৭) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী, যিনি শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরনন্দলাল বসুর বঙ্গীয় শিল্পধারার অনুসারী হয়ে নিজ শিল্পকর্মে বিশিষ্টতা অর্জন করেন। [১] তার শিল্পকর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল স্নিগ্ধতা ও রমণীয়তা। [২]

সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম(১৮৯৬-১২-১৩)১৩ ডিসেম্বর ১৮৯৬
মৃত্যু৩০ ডিসেম্বর ১৯৭৭(1977-12-30) (বয়স ৮১)
পেশাচিত্রশিল্পী
সন্তানসোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
পিতা-মাতারাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (পিতা)
কুসুমকুমারী দেবী (মাতা)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

সত্যেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের সন্নিহিত চুয়ামসিনা গ্রামে। পিতা রাজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা কুসুমকুমারী দেবী। তার পিতা রেলের চাকরি ছেড়ে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে আসেন এবং ব্রহ্মচর্যাশ্রমে শিক্ষক তথা অর্থ বিভাগের সহকারি প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় এই আশ্রম বিদ্যালয়েই। ছাত্রাবস্থায় তিনি ভালো ছবি আঁকতে পারতেন। চুয়ামসিনার পাশের গ্রামের শিল্পী রাখাল সূত্রধরের কাছে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজও শিখেছিলেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ান কলেজ বর্তমানের বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ থেকে বি এ পাশের পর এম এ পড়তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। কিন্তু ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য তার এম.এ পড়া ব্যাহত হয়। পরে শান্তিনিকেতনে ফিরে এসে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলাভবনে ভর্তি হন শিল্পকলা শিখতে। সেসময় তার সহপাঠী ছিলেন ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ দেববর্মা, বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ। অধ্যক্ষ নন্দলাল বসুঅসিতকুমার হালদারের কাছে অবনীন্দ্রনাথ প্রবর্তিত বেঙ্গল স্কুল ধারার চিত্রবিদ্যায় শিক্ষা লাভ করেন। তবে তিনি আঁকার মাধ্যম বা প্রথা প্রকরণ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামান নি। তিনি প্যারিস থেকে আসা শিল্পী আঁন্দ্রে কারপেলস্ এর কাছে তেল রঙে ছবি আঁকার পদ্ধতি রপ্ত করেন। [১] ভারতীয় পৌরাণিক গল্প, গ্রামের সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলি ছিল তার চিত্রের বিষয়বস্তু। [২] তৎকালীন সময়ে লোক শিল্পের এক বিশেষ স্থান ছিল, কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর সহপাঠী শিল্পী বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায় লিখেছেন-

‘লোকশিল্প হল এ কালের চাল, কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথের কোনও ঝোঁক নেই সেদিকে, অথচ গ্রামের মানুষ এবং তাদের জীবনযাত্রা প্রচণ্ডভাবে আকর্ষণ করে তাঁকে। তাঁর ছবিতে তাদের দেখা যায়। তাদের প্রতি শিল্পীর কী গভীর ভালোবাসা এবং কত দরদ।’

[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

সত্যেন্দ্রনাথ টানা ছ’বছর কলাভবনে শিক্ষালাভ করে ১৯২৭ বৃন্দাবন প্রেম মহাবিদ্যালয়ে শিল্প-শিক্ষকের পদে যোগ দেন। এক বছর পর করাচির দয়াশ্রমে ও পরে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে তৎকালীন বৃটিশ ভারতের যুক্ত প্রদেশ (বর্তমানেরউত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুরের গীতা প্রেসে দুবছর কাজ করেন। করাচিতে থাকাকালীন তিনি ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়শন’-এর পুজোর জন্য সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে কলকাতার গর্ভনমেন্ট আর্ট স্কুলে ইন্ডিয়ান পেইন্টিং বিভাগে শিল্পী- শিক্ষকরূপে নিযুক্ত হন। দীর্ঘ কুড়ি বছর তিনি দরদী শিক্ষকরূপে ভারতীয় চিত্রকলার শিক্ষা দেন এবং ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্ররা ছিলেন- ইন্দুভূষণ রক্ষিত, ধীরেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম, শাম্তিরঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

শিল্পকীর্তির জন্য তিনি সম্মানিত হয়েছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন। কিন্তু প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন তিনি। নিজের আঁকা ছবির কোন প্রদর্শনী করেননি।

জীবনাবসান সম্পাদনা

১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে অবসর নিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর জন্মস্থান বাঁকুড়ার চুয়ামসিনা গ্রামে চলে যান এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "অবনীন্দ্র-নন্দলাল ধারায় পতাকাবাহী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২০ 
  2. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭৫৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬