শ্যামাচরণ শ্রীমানী

শ্যামাচরণ শ্রীমানি (? — ১৮৭৫) ছিলেন ঊনবিংশ শতকের ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী, যার পরিচিতি প্রথম বাঙালি শিল্প সমালোচক হিসাবে। বাংলা ভাষায় প্রথম শিল্প সমালোচনার গ্রন্থ- সূক্ষ্ম শিল্পের উৎপত্তি ও আর্যজাতির শিল্পচাতুরী রচনা করে সংশ্লিষ্ট মহলে খ্যাতি লাভ করেন। [১] শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্যামাচরণ শ্রীমানির গুণমুগ্ধ ছিলেন। [২]

শ্যামাচরণ শ্রীমানি যখন কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজ 'স্কুল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট' নামে পরিচিত ছিল, সেসময়ের অধ্যক্ষ হেনরি হোভার লক-এর প্রথমদিককার ছাত্র ছিলেন। শ্যামাচরণ জ্যামিতিক রেখাঙ্কন, কাঠ-খোদাই, লিথোগ্রাফি ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেন। এমনকি ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে অধ্যক্ষ শ্যামাচরণকে স্কুলে জ্যামিতিক রেখাঙ্কন বিষয়ে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করেন। [২] তাছাড়া পাশ্চাত্যের বাস্তবানুগ চিত্র অঙ্কনেও শিক্ষা লাভ করেছিলেন। তবে তিনি পাশ্চাত্য শিল্পকলা অন্ধভাবে অনুকরণ করার পক্ষপাতী ছিলেন না। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে নবগোপাল মিত্র কলকাতায় ন্যাশনাল আর্ট স্কুল চালু করলে তিনি চারু ও মূর্তির কলার শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন।

ঊনবিংশ শতকে বাংলায় শিল্প সমালোচনায় যে তিনজন ব্যক্তিত্ব পরিচিত ছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন শ্যামাচরণ। অন্য দুজন ছিলেন বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরসুকুমার রায়। তবে শিল্প সমালোচনা নিয়ে প্রথম বাংলা গ্রন্থ রচনা করেন শ্যামাচরণই। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এই যে, শিল্প নিয়ে ইংরাজী ভাষায় ছাড়া আঞ্চলিক ভাষায় আর কোন গ্রন্থও ছিল না সেসময়ে। তাঁর রচিত গ্রন্থ - সূক্ষ্ম শিল্পের উৎপত্তি ও আর্যজাতির শিল্পচাতুরী প্রকাশিত হয় ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে।[১]গ্রন্থটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বহু বিদগ্ধ মানুষের প্রশংসা অর্জন করে। শিল্পকলা নিয়ে তৎকালীন ভারতের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বা সাময়িকীতে বহু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। শিল্পকলা ছাড়াও সাহিত্যে তার পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি 'মহাবংশ' অবলম্বনে একটি কাব্যগাথা সিংহল বিজয় কাব্য রচনা করেন, যেটি প্রকাশিত হয় তার মৃত্যুর বছরেই ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে।


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Three Young Minds and Art Critical Writing in 19th c Bengal"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২৮ 
  2. শ্রীমানি, শ্যামাচরণ, বাংলাপিডিয়া