শারেনা জামিয়া (মসজিদ)
শারেনা জামিয়া (ম্যাসেডোনীয়: Шарена Џамија) উত্তর মেসিডোনিয়ার তেতোভো শহরে পেনা নদীর কাছে অবস্থিত একটি মসজিদ। "শারেনা জামিয়া" অর্থ "সজ্জিত মসজিদ" বা "রাঙানো মসজিদ"। এটিকে তুর্কি ভাষায় "আলাজা জামি" (তুর্কি: Alaca Cami) ও আলবেনীয় ভাষায় "জামিয়া এ লার্মে" (আলবেনীয়: Xhamia e Larme) নামে ডাকা হয়। মসজিদটি মূলত ১৪৩৮ সালে নির্মিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৩৩ সালে আবদুর রহমান পাশা এটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ধ্রুপদী উসমানীয় যুগের অন্যান্য মসজিদের বিপরীতে শারেনা মসজিদটি আনাতোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলি থেকে বেশি বৈশিষ্ট্যময়, কারণ এটি তুর্কি মুসলিমদের কোনস্তান্তিনোপল বিজয়ের আগে নির্মিত হয়েছিল, যখন বাইজেন্টীয় শৈলী দ্বারা প্রভাবিত মসজিদের গম্বুজগুলো আদর্শ ধরন হিসেবে প্রচলিত ছিল।[১]
শারেনা জামিয়া (মসজিদ) | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
অবস্থান | |
অবস্থান | তেতোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া |
স্থানাঙ্ক | ৪২°০′২১″ উত্তর ২০°৫৮′০″ পূর্ব / ৪২.০০৫৮৩° উত্তর ২০.৯৬৬৬৭° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
স্থপতি | ইসাক বে |
ধরন | মসজিদ |
স্থাপত্য শৈলী | উসমানীয় স্থাপত্য |
সম্পূর্ণ হয় | ১৪৩৮ |
বিনির্দেশ | |
দৈর্ঘ্য | ১০ মি |
প্রস্থ | ১০ মি |
মিনার | ১ |
উপাদানসমূহ | প্রাকৃতিক পাথর এবং রং |
ইতিহাস
সম্পাদনাশারেনা জামিয়া মসজিদটি মূলত ১৪৩৮ সালে নির্মিত হয়েছিল। [২] শারেনা জামিয়ার স্থপতি ছিলেন ইসাক বে। [২]
সেই সময়ের বেশিরভাগ মসজিদের নির্মাণে সুলতান, বেগ বা পাশারা অর্থায়ন করতেন, কিন্তু শারেনা জামিয়ার ক্ষেত্রে তেতোভো শহরের অধিবাসী দুই বোন অর্থায়ন করেছিলেন। অনেক মসজিদের মতো এটির ক্ষেত্রেও নদীর অপর পাড়ে কাছাকাছি একটি তুর্কি গণস্নানাগার বা হাম্মাম নির্মিত হয়েছিল।
অংশটিতে একটি পান্থশালার পাশাপাশি নদীর ওপারে একটি স্নানাগার অন্তর্ভুক্ত ছিল। শারেনা জামিয়ার বর্তমান উঠানটিতে অনেক ফুলের গাছ, একটি ঝর্ণা এবং একটি সম্ভ্রান্তজনের সমাধিঘর (ত্যুরবে) আছে। অষ্টভুজাকার সমাধিঘরটিতে হুরশিদা এবং মেনসুরের সমাধি রয়েছে। এঁরা হলেন সেই দুই বোন যাঁরা ১৪৩৮ সালে মসজিদটির নির্মাণে অর্থায়ন করেছিলেন [৩]
আবদুর রহমান পাশা ছিলেন শিল্পকলার একজন বিরাট পৃষ্ঠপোষক যিনি তেতোভো শহরের অনুরাগী ছিলেন। তিনি ১৮৩৩ সালে শারেনা জামিয়া মসজিদটি পুনর্নিমাণ করান।[৪] ১৯৯১ সালে তেতোভো শহরের ইসলামি সম্প্রদায় সাধারণ ধ্রুপদী উসমানীয় শৈলীতে মসজিদের চারপাশে প্রাচীর তৈরি করে।[১]
২০১০ সালে মসজিদের বাইরের চিত্রগুলির একটি সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়।[৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত ৯৪,৯০০ মার্কিন ডলারের অনুদান দিয়ে ২০১১ সালে মসজিদের সম্মুখভাগটি পুনর্নির্মাণ ও সংরক্ষণ করা হয়েছিল।[৬]
স্থাপত্য
সম্পাদনাশারেনা মসজিদটিতে ঐতিহ্যবাহী উসমানীয় দগ্ধমৃত্তিকার টালি দিয়ে সৃষ্ট সজ্জার পরিবর্তে উজ্জ্বল ফুলের চিত্র রয়েছে।[৭] ৩০,০০০টিরও বেশি ডিম দিয়ে রঙ ও প্রলেপ প্রস্তুত করা হয়, যেগুলি পরে সজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছিল।[৮] [৯] শারেনা জামিয়া এবং অন্যান্য উসমানীয় মসজিদের মধ্যে আরেকটি প্রধান পার্থক্য হল এরকম: যেহেতু মসজিদের স্থাপত্য কোন্সতান্তিনোপলের শৈলী দ্বারা প্রভাবিত আদি উসমানীয় স্থাপত্যের শৈলীর মতো তাই মসজিদটির একটি স্বতন্ত্র বাহ্যিক গম্বুজ নেই.[১০]
মসজিদের অঙ্কিত অলঙ্করণগুলি এটির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আবদুর রহমান পাশা এই উদ্দেশ্যে দেবরের মাস্টারদেরকে এটির দায়িত্ব দিয়েছিলেন যারা তেলরং দিয়ে অলঙ্করণ আঁকতেন। জ্যামিতিক এবং পুষ্পশোভিত অলঙ্করণ ছাড়াও এখানে ভূদৃশ্যাবলীও আঁকা আছে। সচিত্র অলঙ্করণের মধ্যে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় একটি হলো মক্কার একটি চিত্র, যা দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে ইসলামের বার্তাবাহক মুহাম্মাদের সমাধি বা মাজারের চিত্রের একটি বিরল এবং সম্ভবত একমাত্র উদাহরণ।
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
শারেনা জামিয়ার দেয়ালের অলংকরণ।
-
শারেনা জামিয়া মসজিদের আঙ্গিনা।
-
শারেনা জামিয়া।
-
শারেনা জামিয়ার অভ্যন্তর।
-
শারেনা জামিয়া।
-
শারেনা জামিয়ার অভ্যন্তরভাগ।
-
শারেনা জামিয়া।
-
মিহরাব ।
-
১৯৩২ সালে শারেনা জামিয়া।
-
শারেনা জামিয়ার অভ্যন্তরভাগ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Xhamia e Pashes"। ৯ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ ক খ Pg 106 - Institut za nacionalna istorija (Skopje, Macedonia) (১৯৭৯)। A history of the Macedonian people (1979 সংস্করণ)। Macedonian Review Editions।
- ↑ Thammy Evans (২০০৭)। Macedonia। Bradt Guides (Second Edition)। পৃষ্ঠা 213। আইএসবিএন 978-1-84162-186-9।
- ↑ "Historical Monuments: Painted Mosque"। Municipality of Tetova। ২০১০-১১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১৭।
- ↑ "Заврши обновувањето на Шарена џамија"। ২০১০-০৭-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১২-১৭।
- ↑ "Преубавата Шарена џамија ќе се реставрира со американска помош"। ২০১১-০৯-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-১৬।
- ↑ Lonely Planet Western Balkans – Google Books
- ↑ "Tito, Teto and Some Troubled Tourism Await You in Tetovo, Macedonia"। Balkan Travellers। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১২, ২০১০।
- ↑ Trankova Dimana (আগস্ট ২০০৭)। "Tito, Teto and some troubled tourism await you in Macedonia"। ১৮ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ Balkanology :: Macedonia :: Skopje and Surroundings