রাজ মান সিংহ চিত্রকার

নেপালি শিল্পী

রাজ মান সিংহ চিত্রকার (১৭৯৭ - ১৮৬৫) হলেন একজন নেপালি চিত্রকর, যিনি ১৯শ শতাব্দীর মাঝামাঝি ব্রিটিশ ও নেপালি রাজদরবারের জন্য অনেকগুলো চিত্র অঙ্কন করেন। তিনি বিশেষত প্রাকৃতিক ইতিহাস সংক্রান্ত চিত্র, বিশেষ করে হিমালয়ের স্তন্যপায়ী ও পাখিদের চিত্র অঙ্কন করেন। তিনি জল রঙের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী উপাসনামূলক প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় চিত্রকলা ও রীতির সমাবেশ ঘটান। রাজ মান সিংহ নেপালি চিত্রকলায় সর্বপ্রথম পাশ্চাত্যের অনুরূপ আলোকসম্পাত ও পার্স্পেকটিভের সমাবেশ ঘটান এবং সেই সাথে তাকে নেপালি চিত্রকলায় ত্রিমাত্রিকতা আনয়নকারী হিসেবেও সম্মানিত করা হয়।[১] অনেক পণ্ডিত রাজ মান সিংহকে নেপালি শিল্পকলার পথিকৃৎ হিসেবে অভিহিত করেন, যদিও ব্রায়ান হজসনের অধীনে কাজ করার পূর্বে তার সম্পর্কে খুব একটা জানা যেত না।[২]

রাজ মান সিংহ চিত্রকার
চিত্রকার অঙ্কিত মথুরা পাখি

শিল্পকলা ও প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

 
বেঙ্গল এশিয়াটিক সোসাইটির (১৮৪৩) জন্য রাজ মান সিংহের অঙ্কিত ও স্বাক্ষরিত ভুটানি বৃহৎ উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চিত্র

রাজ মান সিংহ নেপালের কাঠমান্ডুর ঐতিহ্যবাহী চিত্রকার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকভাবে চিত্রকারেরা নেপালের নেওয়ার জাতির অন্তর্ভুক্ত শিল্পী গোষ্ঠী। সে কারণে রাজ মান সিংহ পৌভা ও অন্যান্য ধর্মীয় শিল্পকলার সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে তিনি কাঠমান্ডুতে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিক ব্রায়ান হাটন হজসনের নজরে আসেন। ব্রায়ান হজসন ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য, নৃতত্ত্ব এবং হিমালয়ের প্রাণিদের বিষয়ে পণ্ডিত ছিলেন। হজসন তার গবেষণার্থে সংগ্রহের জন্য পাখি ও স্তন্যপায়ীদের জল রঙে চিত্র আঁকার একজন চিত্রকর খুঁজছিলেন। সে সময় তিনি এ কাজে রাজ মান সিংহকে নিযুক্ত করেন।

হজসনের অধীনে রাজ মান সিংহ প্রাকৃতিক পরিবেশে বিষয়বস্তুর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাগজে তাদের জীবন্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলতে শিখে যান,[৩] যেখানে তিনি পূর্বে নেপালের ঐতিহ্যবাহী পটে পুঁথিগত দেবতাদের ঐতিহাসিক চিত্র অঙ্কনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি ১৮২০ এর দশক থেকে ১৮৫০ এর দশকের মধ্যে হজসনের জন্য প্রাণিদের সহস্রাধিক উৎকৃষ্ট মানের বৈশিষ্ট্যসূচক চিত্রকর্ম তৈরি করেন।[১][৪]

সম্মাননা সম্পাদনা

সাম্প্রতিক সময়ে রাজ মান সিংহ চিত্রকারের যুগান্তরকারী চিত্রকর্মগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন, যদিও এর পূর্বে তিনি নেপালের শিল্পকলার ইতিহাসে তেমন একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না। ১৯শ শতাব্দীতে নেপালি শিল্পকলার বিকাশে রাজ মান সিংহ চিত্রকারের অবদানের স্মরণে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর নেপাল সরকারের ডাক সেবা বিভাগ তার স্বচিত্র সংবলিত দুইটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ডাকটিকিটগুলোতে তার জল রঙে অঙ্কিত পাখি ও স্তন্যপায়ীর চিত্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Chitrakar, Madan (২০১২)। "Raj Man Singh Chitrakar (1797-1865): The Discovery of a Pioneer Artist"। Nepali Art। Kathmandu: Teba-Chi Studies Centre। পৃষ্ঠা 113–121। আইএসবিএন 978-9937-2-4933-1 
  2. Joshi, Harihar Raj; Joshi, Indu (২০০৫)। The First Nepali Pioneer Artist: Raj Man Singh Chitrakar। Nepal Studies। আইএসবিএন 9781935041405 
  3. "The Hodgson Drawings Collection"Natural History Museum। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৩ 
  4. Subedi, Abhi (১৩ অক্টোবর ২০১২)। "Of history and art"The Kathmandu Post। ১ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৩ 
  5. "Commemorative stamps issued"The Kathmandu Post। ১ জানুয়ারি ২০১৩। ২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১৩