রতন সূত্র (বর্মী: ရတနသုတ်) বৌদ্ধ ধর্ম-এর এর সূত্র (সংস্কৃত সূত্র পালি, সুত্তা) পালি অনুশাসন সূত্র নিপাত (২.১) এবং খুদ্দকপাঠ (৭)-এ রয়েছে।

বর্ণনা সম্পাদনা

রতন সূত্র সম্পাদনা

পালি সম্পাদনা

বাংলা সম্পাদনা

ভগবান গৌতম (বুদ্ধ) সুমেধ তাপস জন্মে অমরাবতী নগরে ভগবান দীপংকর বুদ্ধের পাদমূলে বুদ্ধত্ব লাভের প্রার্থনার পর থেকে (দান, শীল, নৈষ্ক্রম্য, প্রজ্ঞা, বীর্য, ক্ষান্তি, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী ও উপেক্ষা) দশ পারমী, দশ উপ-পারমী, দশ পরমার্থ পারমী মোট ত্রিশ পারমী, পঞ্চ মহাদান, জগতের হিতাচরণ, জ্ঞাতিদের হিতাচরণ, বুদ্ধত্ব লাভের জন্য ত্রিবিধ আচরণ পরিপূরণ করেন, তারপর অন্তিম জন্মে মাতৃগর্ভে প্রবেশ, জন্ম, সংসার (গৃহ) ত্যাগ, কঠোর সাধনা, বোধিতরু (বোধিপালঙ্কে)-মূলে মার বিজয়, সর্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভ, ধর্মচক্র প্রবর্তন ও নবলোকোত্তর (স্রোতাপত্তিমার্গ ও ফল, সকৃদাগামী মার্গ ও ফল, অনাগামী মার্গ ও ফল, অরহত্ব মার্গ ও ফল এবং নির্বাণ) ধর্ম ও বুদ্ধের গুণাবলী স্মরণ করে বৈশালী নগরে সারা-রাতব্যাপী পরিত্রাণ পাঠকারী আনন্দ স্থবিরের ন্যায় করুণাপূর্ণ চিত্তে উপস্থাপন করছি…

শতসহস্র কোটি চক্রবালবাসী দেবগণ যাঁর আদেশ প্রতিপালন করেন এবং যে পরিত্রাণ পাঠ করে বৈশালী নগরে রোগ, অমনুষ্য ও দুর্ভিক্ষ্যজাত ত্রিবিধ ভয় (উপদ্রব) দূরীভূত হয়েছিল, আমরা সেই (পরিত্রাণ) রতন সূত্র পাঠ করতেছি।

  • ভূমিবাসী ও আকাশবাসী ছোট-বড় যে সকল ভুত-প্রেত এখানে সমবেত হয়েছ, তোমরা সকলে সন্তুষ্ট হও এবং আমার বাক্য শ্রদ্ধা সহকারে শ্রবণ কর।
  • জগতে সদ্ধর্ম (বুদ্ধবাক্য) শ্রবণ দুর্লভ। এই হেতু (হে ভুতগণ) তোমরা সকলে এ ভাষণ মনোযোগ (একাগ্র চিত্তে) দিয়ে শ্রবণ কর। মানবদিগের প্রতি মৈত্রী ভাবাপন্ন হয়ে তাদের হিত চিন্তা কর, তারা দিবা-রাত্রি তোমাদের উদ্দেশ্যে পুণ্য (পূজা) প্রদান করে, এজন্যে তোমরা অপ্রমত্ত হয়ে তাদেরকে রক্ষা কর।
  • ইহলোকে-পরলোকে নাগলোকে যে সকল মূল্যবান রত্ন (সম্পদ) আছে কিংবা স্বর্গে যে রত্ন (দিব্যসম্পদ) আছে, তার কোনোটাই তথাগত বুদ্ধ রত্নের সমান নয়,বুদ্ধ রত্নের শ্রেষ্ঠতা, এ সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • সমাধিস' শাক্যমুনি লোভ-দ্বেষ-মোহ ক্ষয় করে, বিরাগ ও অমৃত পদ (নির্বাণ) ধর্ম লাভ করেছেন, সে ধর্মের সমান অন্য কোনো ধর্ম নেই, ইহা ধর্ম রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যের দ্বারা তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • বুদ্ধ শ্রেষ্ঠ যে শুচি সমাধির প্রশংসা করেছেন আর যার ফল অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া যায়, তার সমান অন্য কোনো সমাধি নেই। ইহা ধর্মে (সমাধি) রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব এই সত্যবাক্যের দ্বারা তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • যে অষ্টবিধ আর্যপুরুষ বুদ্ধাদি সৎপুরুষ দ্বারা প্রশংসিত, তারা মার্গস্ত ও ফলস্ত' ভেদে চার জোড়া। সেই সুগত শ্রাবকগণ দক্ষিণা (দান) লাভের যোগ্য। তাদেরকে উদ্দেশ্য করে দান করলে মহাফল (পুণ্য) লাভ হয়। ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব এই সত্যবাক্যের দ্বারা তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • যাঁরা যে অষ্টবিধ (স্রোতাপত্তি মার্গ ও ফল, সকৃদাগামী মার্গ ও ফল, অনাগামী মার্গ ও ফল, অর্হৎ মার্গ ও ফল) আর্যপুরুষ বুদ্ধের শাসনে নিষ্কাম (দৃঢ় মনোবল) সি'র চিত্তে অবগাহণ করেন এবং অনায়াসে লব্ধ নির্বাণ সুখ উপভোগ করেন। ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এ সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • ইন্দ্র খীল (নগর দারস্ত' স্তম্ভ) ভূমিতে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হলে যেমন চতুর্দিকের বায়ুতে কম্পিত হয় না, যিনি চতুরার্য সত্য সম্যকভাবে (প্রজ্ঞা চক্ষুতে) দর্শন করেছেন, সেই সৎপুরুষকেও আমি ইন্দ্রখীল তুল্য বলি। ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • সর্বজ্ঞ (গভীর প্রাজ্ঞ) বুদ্ধ কর্তৃক সুন্দররূপে দেশিত চারি আর্যসত্য যিনি ভাবনা (সম্যকরূপে দর্শন) করেছেন, তিনি প্রমাদ বহুল হলেও আট বারের অধিক সংসারে জন্মগ্রহণ করেন না, ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • চারি অপায় (নরক, প্রেত, তির্যক, অসুর যোনী) বিমুক্ত হন, ছয় প্রকার মহাপাপ (মাতৃ হত্যা, পিতৃ হত্যা, অর্হৎহত্যা, বুদ্ধের চরণে রক্তপাত, সংঘভেদ ও বুদ্ধ ব্যতীত অন্যশরণ গ্রহণ) কার্য সম্পাদনে অক্ষম, ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব এই সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • তিনি (স্রোতাপন্ন ব্যক্তি) কায়-বাক্য-মনে পাপ করেন না, কোনো কারণে পাপ করলেও গোপন করেন না। কারণ সম্যকদৃষ্টিসম্পন্ন (স্রোতাপন্ন) ব্যক্তির পক্ষে পাপ গোপন অসম্ভব, ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যের তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • গ্রীষ্মকালের প্রথম মাসে বনের বৃক্ষ-লতাদি পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয়। শীল-সমাধি-প্রজ্ঞারূপ পুষ্পে শোভিত ও নির্বাণদায়ী শ্রেষ্ঠ ধর্ম, বুদ্ধ জগতের কল্যাণে প্রচার করেছেন। ইহা বুদ্ধ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • বর (শ্রেষ্ঠ) বরজ্ঞ (নির্বাণজ্ঞ), বরদ (বিমুক্তি সুখ দাতা/নির্বাণ দাতা) শ্রেষ্ঠপদ (নির্বাণ) আহরণকারী বুদ্ধ অনুত্তর (সর্বশ্রেষ্ঠ) ধর্ম প্রচার করেছেন। ইহা বুদ্ধ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • যাঁদের পুরাতন কর্ম ক্ষয় হয়েছে, নতুন কর্মের উৎপত্তি সম্ভাবনা নেই। যাঁদের পুনঃ জন্মের ইচ্ছে নেই, জন্ম নিরোধ হয়েছে, সেই সকল পণ্ডিত ব্যক্তিগণ প্রদীপের মত নির্বাণ প্রাপ্ত হন। ইহা সংঘ রত্নের শ্রেষ্ঠত্ব, এই সত্যবাক্যে তোমাদের মঙ্গল হোক।
  • তৎপর দেবরাজ ইন্দ্র বৈশালী নগরে মঙ্গল কামনা করে বলেছেন-আকাশ ও ভূমিবাসী যারা এখানে সমবেত হয়েছ, এস সকলে সম্মিলিত (একত্রিত) হয়ে দেব-মানবের পূজনীয় বুদ্ধকে বন্দনা করি। এই বন্দনার ফলে সকলের মঙ্গল হোক।
  • আকাশ ও ভূমিবাসী যারা এখানে সমবেত হয়েছ, এস সকলে সম্মিলিত (একত্রিত) হয়ে দেব-মানবের পূজনীয় ধর্মকে বন্দনা করি। এই বন্দনার ফলে সকলের মঙ্গল হোক।
  • আকাশ ও ভূমিবাসী যারা এখানে সমবেত হয়েছ, এস সকলে সম্মিলিত (একত্রিত) হয়ে দেব-মানবের পূজনীয় সংঘকে বন্দনা করি। এই বন্দনার ফলে সকলের মঙ্গল হোক।