মুসা কাজিম আল-হুসাইনি

মুসা কাজিম পাশা আল-হুসাইনি (আরবি: موسى كاظم الحسيني, Musa Kazem al-Ḥussaynī) (১৮৫৩ - ২৭ মার্চ ১৯৩৪) ছিলেন উসমানীয় প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি খ্যাতনামা আল-হুসাইনি পরিবারের সদস্য ছিলেন। ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত তিনি জেরুজালেমের মেয়র ছিলেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাকে মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করে। ১৯২২ সাল থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফিলিস্তিন আরব কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির প্রধান ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী প্রতিবাদের সময় সৃষ্ট ক্ষতের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

Musa Kazim Pasha al-Husayni
Musa al-Husayni
জন্ম1853
মৃত্যু
27 March 1934
অফিসMayor of Jerusalem
পূর্বসূরীAref al-Dajani
উত্তরসূরীRaghib al-Nashashibi
সন্তানAbd al-Qadir al-Husayni
পিতা-মাতাSalim al-Husayni
আত্মীয়Hussein al-Husayni (brother)
Jamal al-Husayni (nephew; sister's son)

উসমানীয় প্রশাসন সম্পাদনা

মুসা জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্তানবুলে লেখাপড়া করেছেন। সমগ্র উসমানীয় সাম্রাজ্যের ছাত্রদের মধ্যে তিনি স্নাতক পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। তাকে স্বাস্থ্য বিভাগে নিয়োগ করা হয়। এরপর কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য তাকে পদোন্নতি প্রদান করে পাশা উপাধি প্রদান করা হয়। তিনি বেশ কিছু উসমানীয় পৌরসভা ও অঞ্চলের গভর্নর ছিলেন। ১৯০৫ সালে তিনি জাফার গভর্নর হন।[১]

মেন্ডেট প্রশাসন সম্পাদনা

১৯১৮ সালে জেরুজালেমের ব্রিটিশ সামরিক গভর্নর রোনাল্ড স্টর্স‌ মুসা কাজিমকে শহরের মেয়র নিযুক্ত করেন। তার ভাই হুসাইন আল-হুসাইনি ১৯১৮ সাল পর্যন্ত আট বছর মেয়র ছিলেন এবং ব্রিটিশদের কাছে শহরের আত্মসমর্পণের অল্প কিছুকাল পর মারা যান। প্রথমদিকে স্টর্সে‌র সাথে মুসার সম্পর্ক ভালো ছিল। জেরুজালেমের ভবনের জন্য আদর্শ স্থাপত্য মান প্রণয়ন কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন।[২]

১৯১৮ সালের নভেম্বরের তিনি প্রথমবারের মত ব্রিটিশ নীতির বিরুদ্ধে একটি গণবিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। বেলফোর ঘোষণার বর্ষপূর্তিতে ইহুদি উদযাপনের কারণে একটি প্রতিবাদের পর দুই আরবকে কারাগারে প্রেরণ করার কারণে এই বিক্ষোভ হয়।[৩][৪]

দেড় বছর পরে নবী মুসা উদযাপনের শেষ মুসা কাজিম জাফা ফটকের পাশে আরব ক্লাবের বারান্দা থেকে ভাষণ দেন। উপস্থিত জনতা "ফয়সাল আমাদের বাদশাহ" স্লোগান দিয়েছিল। সেসময় সংঘটিত সহিংসতার পর ব্রিটিশরা একটি সামরিক আদালত স্থাপন করে। মুহাম্মদ আমিন আল-হুসাইনিআরেফ আল-আরেফ তাদের অনুপস্থিতিতে ১০ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত হন। খলিফ বাইদাসজেভ জাবোতিনস্কি ১৫ বছরের দন্ডে দণ্ডিত হন। মুসা কাজিমকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আক্কা কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়।[৫][৬]

দাঙ্গার পর স্টর্স‌ মুসা কাজিমকে পদচ্যুত করেন। কিছু সূত্র অনুযায়ী হিব্রুকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার কারণে মুসা প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগ করেন।[৭][৮][৯][১০]

১৯২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইফায় অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিন আরব কংগ্রেসের ৩য় কংগ্রেসে মুসা নির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এই কমিটি পরবর্তী দশ বছর ফিলিস্তিনে ব্রিটিশ নীতির বিরোধীতায় নেতৃত্ব দিয়েছে।[১১] এরপর নির্বাহী কমিটি নতুন হাই কমিশনার হার্বা‌র্ট‌T স্যামুয়েলের সাথে সাক্ষাত করে। কিন্তু তারা ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমি বিষয়ে ব্রিটিশ নীতি মেনে না পর্যন্ত স্যামুয়েল তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে রাজি হননি।[১২]

১৯২১ সালের মে মাসে ৪র্থ‌ মুসার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল লন্ডনে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত হয়। কংগ্রেসের পূর্বে নতুন ব্রিটিশ উপনিবেশ মন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের কাছে কমিটির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার জন্য প্রথমে কায়রো ও পরে জেরুজালেমে চেষ্টা চালান। দুইবারই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। [১৩][১৪] প্রতিনিধিদল জেনেভায় পোপ পঞ্চদশ বেনেডিক্ট এবং লীগ অব নেশন্সের অন্যান্য কূটনৈতিকদের সাথে আলাপ করে। এখানে আর্থা‌র বেলফোরের সাথে তাদের সাক্ষাত হয়।[১৫] লন্ডনে তারা চার্চিলের সাথে তিনটি বৈঠকে তারা বেলফোর ঘোষণা পুনর্বিবেচনা, ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমির নীতি প্রত্যাহার, ইহুদি অভিবাসন বন্ধের আবেদন জানান। তাদের সব দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়।[১৬][১৭][১৮]

১৯২২ সালে মুসা আঙ্কারায় ও পরে লুসান সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গ্রীকদের বিরুদ্ধে তুর্কিদের বিজয়ের পর সেভ্রেস চুক্তি পুনর্বিবেচনার জন্য এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের আশা ছিল যে আতাতুর্কে‌র সমর্থনে বেলফোর ঘোষণা নিয়ে তাদের দাবি মেনে নেয়া হবে। কিন্তু লুসানের চুক্তিতে ব্রিটিশ ও ফরাসি মেন্ডেট অপরিবর্তিত থাকে।[১৯]

১৯২৩ সালের জুনে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে লন্ডনে আরেকটি প্রতিনিধি দল প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রতিনিধিদলও তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।[২০]

১৯৩০ সালের মার্চে তিনি লন্ডনে আরেকটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। এই দলের অন্যান্যরা ছিলেন মুহাম্মদ আমিন আল-হুসাইনি, রাগিব নাশাশাবি ও আলফ্রেড রক। তারা কোনো ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হন। ১৯৩১ সালে মুসা একটি নতুন জায়নবাদ-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।[২১][২২]

১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি কমিটির সাথে হিজব আল-ইস্তিকলাল ও তরুণ কংগ্রেসের সাথে বৈঠক হয়। এতে কমিটির ব্যর্থতার জন্য মুসার সমালোচনা করা হয়। তিনি অসহযোগ ও বয়কট আন্দোলনের আহ্বান স্তিমিত করতে সক্ষম হন এবং ইহুদিদের কাছে জমি বিক্রি বন্ধ ও ইহুদি অভিবাসন বন্ধের দাবি জানানোর জন্য হাই কমিশনার আরথার গ্রেনফেলের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করেন। এসব দাবিও প্রত্যাখ্যান করার পর অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে আলোচনার ২৬ মার্চ জাফায় একটি বড় আকারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।[২৩]

 
মুসা কাজিমকে ব্রিটিশ পুলিশের প্রহার, জাফা, ২৭ অক্টোবর ১৯৩৩

১৯৩৩ সালের অক্টোবরে জেরুজালেম, জাফা, হাইফা ও নাবলুসে ইহুদি অভিবাসন বিরোধী প্রতিবাদে একজন পুলিশসহ ৩০জন নিহত ও ২০০জন আহত হয়।[২৪] ২৭ অক্টোবর মুসা জাফায় একটি প্রতিবাদে নেতৃত্ব দেন। ব্রিটিশ পুলিশ সহিংস পন্থায় এই প্রতিবাদ ভেঙে দেয়। মুসা কাজিমকে এসময় পিটীয়ে আহত করা হয়। ১৯৩৪ সালের ২৭ মার্চ তিনি মারা যান। ধারণা করা হয় যে আঘাতের ফলে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। জেরুজালেমে তার জানাজায় অগণিত সংখ্যক উপস্থিতি ছিল।[২৫][২৬]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

ফিলিস্তিনি যোদ্ধা আবদুল কাদির আল-হুসাইনি ছিলেন মুসা কাজিম আল-হুসাইনির ছেলে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Pappe, Ilan (2002) 'The Rise and Fall of a Palestinian Dynasty. The Husaynis 1700-1948. AL Saqi edition 2010. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৬৩৫৬-৪৬০-৪. pp.111,112.
  2. Pappe, pp.186,192.
  3. Kayyali, Abdul-Wahhab Said (no date) Palestine. A Modern History Croom Helm. আইএসবিএন ০৮৬১৯৯-০০৭-২. p.57.
  4. Segev, Tom (2000) One Palestine, Complete - Jews and Arabs under the British Mandate. Little, Brown & Co. আইএসবিএন ০ ৩১৬ ৬৪৮৫৯ ০. p.91
  5. Pappe, p.202.
  6. Segev, p.128.
  7. Sykes, Christopher (1965) Cross Roads to Israel: Palestine from Balfour to Bevin. New English Library Edition August 1967. p.58.
  8. Pappe, note 20 p.372. Quoting Izzar Tammus (1982) and Jewish sources.
  9. Segev, p.129.
  10. Storrs, Ronald (1939) Orientations. Readers Union. pp.345,346. "I told the administration that I proposed to dismiss and replace him forthwith."
  11. Pappe, p.206.
  12. Khalidi, Rashid (2006) The Iron Cage. The Story of the Palestinian Struggle for Statehood. Oneworld Publications. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৫১৬৮-৫৮২-০. p.42.
  13. Kayyali, pp.93,99.
  14. Segev, p.159. "firmness bordering on disrespect."
  15. Sykes, p.71.
  16. Pappe, pp.220,221.
  17. Sykes, p.72.
  18. Kayyali, pp.99-104.
  19. Journal of Palestine Studies. 163. Volume XLI, Number 3, Spring 2012. pp. 30,31.
  20. Kayyali, pp.113,119,130.
  21. Khalidi, Walid (1984) Before their Diaspora: A photographic history of the Palestinians, 1876-1948. Institute of Palestine Studies. আইএসবিএন ০-৮৮৭২৮-১৪৩-৫. p.105.
  22. Pappe, p.249.
  23. Kayyali, p.161.
  24. Segev, p.350.
  25. Khalidi, Walid, pp.110,111.
  26. "Vecchie foto contro vecchie bugie" by Maurizio Blondet, EFFEDIEFFE, http://www.effedieffe.com/index.php?option=com_content&view=article&id=22156:vecchie-foto-contro-vecchie-bugie-&catid=83:free&Itemid=100021

আরও দেখুন সম্পাদনা