মাহমুদুন্নবী চৌধুরী

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, যিনি নবী চৌধুরী নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সাবেক মন্ত্রী। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানের আইনপরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং-সীতাকুন্ড থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমে গণ-যোগাযোগ মন্ত্রী এর পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।[১][২]

মাহমুদুন্নবী চৌধুরী
পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম৭ জানুয়ারি ১৯০৮
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান  বাংলাদেশ)
মৃত্যু৬ আগস্ট ১৯৯৫
চট্টগ্রাম
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীমেহেরুন্নেসা বেগম চৌধুরী
সন্তানআমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

আব্দুর রাজ্জাক মাহমুদ চৌধুরী
আমীর হুমায়ন মাহমুদ চৌধুরী
শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরী

শাহনেওয়াজ মাহমুদ চৌধুরীর
পিতামাতাখাদেম আলী চৌধুরী
মাতা আলফুন নেছা
পেশারাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর জন্ম ৭ জানুয়ারি ১৯০৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত চট্টগ্রাম জেলার পাহাড়তলীর উত্তর কাট্টলীর নাজির বাড়িতে। তার পিতা খাদেম আলী চৌধুরী ও মাতা আলফুন নেছা। তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৩০ সালে সরকারি মুসলিম হাইস্কুল হতে। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে আই এসসি এবং একই কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩৪ সালে ।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

মাহমুদুন্নবী চৌধুরী কলকাতা মেট্রোলজিক্যাল বিভাগে ১৯৩৪ সালে চাকরির মাধমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৩৬ সালে কলকাতায় মওলানা কোম্পানির একাউন্টেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি লোয়ার চিতপুর রোডে, কলকাতায় চৌধুরী অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ভারত বিভাগের পর খাতুনগঞ্জে, চট্টগ্রামে ব্যবসা শুরু করেন ১৯৪৮ সালে। চট্টগ্রামের দেওয়ানহাটে ১৯৫১ সালে নবি অ্যান্ড সন্স নামে ব্যবসা শুরু করেন।[১]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

নবী চৌধুরী ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রাম পৌরসভার কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি যোগ দেন এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক পার্টিতে। তিনি ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানের আইনপরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসাবে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং-সীতাকুন্ড থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং এরপর প্রথমে গণ-যোগাযোগ মন্ত্রী এর পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দায়িত্বে থাকা কালে সাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাঁধ প্রকল্প নির্মাণ ও টেস্ট রিলিফের প্রচলন ও চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (এফডিসি) প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি ১৯৫৮ সালে আইয়ুব বিরোধী অবস্থান নেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠাকালিন সভাপতি নির্বাচিত হন। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠিত হলে তিনি ১৯৬২ সালে প্রাদেশিক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। [১]

পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (পিডিএম) চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটির (ডাক) হয়ে তিনি ভূমিকা রাখেন। পিডিপি’র প্রার্থী হিসেবে এম এন এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। তিনি রাজনৈতিক ভাবে অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা শান্তি কমিটির প্রধান[৩] ছিলেন।[১]

পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর স্ত্রী মেহেরুন্নেসা বেগম চৌধুরী। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুর রাজ্জাক মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও থাইল্যান্ডের অননারি কন্সাল আমীর হুমায়ন মাহমুদ চৌধুরী, শাহনেওয়াজ মাহমুদ চৌধুরী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মেহের গ্রুপের পরিচালক শাহজাদা মাহমুদ চৌধুরীর বাবা।[১][৪][৫]

মৃত্যু সম্পাদনা

মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ৬ আগস্ট ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামে বার্ধক্য জনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেন। স্মৃতিকে ধারণ করে রাখতে পরিবারের পক্ষ থেকে মাহমুদুন্নবী চৌধুরী ফাউন্ডেশন গঠিত হয়েছে।[১][২][৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "চৌধুরী, মাহমুদুন্নবী - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯ 
  2. "মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯ 
  3. BanglaNews24.com। "রাজাকারপুত্র পাচ্ছেন স্বাধীনতা সম্মাননা!"banglanews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯ 
  4. "'ভারতের কোনো দল যদি আমাদের আমন্ত্রণ জানায়, আমরাও যাবো'"চ্যানেল আই অনলাইন (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৫-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯ 
  5. "সাবেক মন্ত্রী মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ | daily nayadiganta"The Daily Nayadiganta। ২০১৯-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯ 
  6. "মাহমুদুন্নবী চৌধুরী"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা