ভারতীয় নৌবাহিনীর বহু্‌র্মুখী-সহযোগী জাহাজ পরিকল্পনা

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ভারতীয় নৌবাহিনীর বিপর্যয় মোকাবিলা, উভগামী রণকৌশল ও দ্বীপ-রক্ষার ক্ষমতা বর্ধনের জন্য চারটি ল্যান্ডিং হেলিকপ্টার ডক ("বহুর্মুখী-সহযোগী জাহাজ(এম.আর.এস.ভি)" হিসাবেও পরিচিত) আহরণের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে ।[১]এই[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] প্রকল্পটি ₹১৬,০০০ কোটি (ইউ.এস$ ২.৬ বিলিয়ন) অর্থমূল্যের, এবং দরপত্র ২০১৩-এর ডিসেম্বরে জারি হয়ে তিনটি দেশীয় জাহাজ-নির্মাণ সংস্থার কাছে যায়।[২] আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে[৩] আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে [8]

বহুর্মুখী-সহযোগী জাহাজ
 স্পনসর 
ভারত ভারতীয় নৌবাহিনীভারতীয় নৌসেনা ৪টি এম.আর.এস.ভি-এর প্রয়োজন বিবৃত করেছে।[১]
  প্রতিযোগীগণ[২][৩] 
ফ্রান্স ডি.সি.এন.এস/আরামিস(২১,৩০০ টন) মিস্ত্রাল এল.এইচ.ডি
ইতালি ফিনক্যান্তিয়েরি(২০,০০০ টন) মাল্টি-ফাংশনাল শিপ [এল.এইচ.ডি][৪]
স্পেন নাভান্তিয়া(২৭,০৭৯ টন) হুয়ান কার্লোস ১ এল.এইচ.ডি
কোরিয়া হান্জীন হেভী ইন্ডাস্ট্রিস(১৪,৫০০-১৮,৮০০ টন) দকদো শ্রেণীর আক্রমক অবতরণ জাহাজ
 সম্ভাব্য প্রতিযোগীগণ[৩] 
যুক্তরাজ্য বি.এ.ই সিস্টেম্স(২১,৫৭৮ টন) ওশান শ্রেণী এল.এইচ.ডি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেথিয়ন(২৫,০০০ টন) স্যান অ্যান্টোনিও-শ্রেণী এল.পি.ডি
জার্মানি থিসে্নক্রপ্ মেরীন সিস্টেম্স(১৫,০০০ টন) এম.এইচ.ডি-১৫০
নেদারল্যান্ডস শ্কেলডে নেভাল শিপবিল্ডিং(১৬,১৬০ টন) এনফোর্সার এল.পি.ডি
 সামগ্রিক প্রকল্পে খরচ
১৬,০০০ কোটি (US$বিলিয়ন)
২০১১ পর্যন্ত

ইতিহাস সম্পাদনা

ভারত মহাসাগরে চৈনিক নৌবাহিনীর উপস্থিতির পূর্বসতর্কতা হিসেবে, উভগামী রণতরি ও বিমানপোত-জাহাজ কেনা ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়েছে। পরিণামে, আন্দামান ও নিকোবর কেন্দ্রকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য মুখ্য\বৃহত্তর উভগামী রণকেন্দ্রে উন্নীত করা হচ্ছে এবং এটি ভারত মহাসাগরে চিনের কৌশলগত পদক্ষেপ ও তার সাথে এই এলাকার সমুদ্রপথগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত্ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  হিসেবে বিবেচিত।

২০১১ সালে জানা যায় যে ভারত চারটি পর্যন্ত এল.এইচ.ডি জাতীয় বিমানচালনক্ষম ও উভগামী জাহাজ প্রত্যাশা করছে, যার নক্সা বিদেশি সংস্থা থেকে আসবে। ২০১৩-এর নভেম্বরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক হেলিকপ্টার বহনকারী রণতরীর জন্য একটি দরপত্র প্রকাশ করে। এই দরপত্রটি দেশীয় শিল্পের সামর্থ্য বাড়াবার সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়।

নির্বাচনিক চাহিদাসমূহ সম্পাদনা

মোটামুটিভাবে নমনীয় থাকলেও, প্রাথমিক চাহিদাগুলি হল: [৫][৬]

  1. আয়তন: ২১৫ মিটারের বেশি লম্বা নয়; এবং পূর্ণ ভর্তি অবস্থাতেও ৮ মিটারের বেশি ডুববে না।
  2. বৈমানিক সুবিধাসমূহ: বিমান-ডেক ১০টি ভারী হেলিকপ্টার, ৩৫ টন পর্যন্ত বহনক্ষম হবে।
  3. সৈন্য-সংকুলান স্থান: ১৪৩০ জন অবধি স্থান-সংকুলান; ৬০ জন আধিকারিক, ৪৭০ জন নাবিক ও ৯০০ জন সেনা-সহ।
  4. বহনক্ষমতা: সাঁজোয়া ফেরির জন্য যান্ত্রিক অবতরণ যান; সেনা পরিবহনের জন্য অবতরণ যান, গাড়ি ও কর্মীবৃন্দ; এবং বায়োপাধান-যুক্ত দ্রুতগামী অবতরন যান-সহ বিভিন্ন অবতরণ যানের সমাহার। ৬টি প্রধান সাঁজোয়াগাড়ি, ২০টি পদাতিক-যুদ্ধযান ও ৪০টি ভারী ট্রাক বহন করতে হবে।
  5. জাহাজস্থ অস্ত্রসমূহ: বিন্দু-প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র, নিকটী অস্ত্র ব্যবস্থা, একটি টর্পেডো-রোধী প্রলোভন(ডিকয়) ব্যবস্থা, একটি চ্যাফ ব্যবস্থা, ভারী এবং হালকা মেশিন-গান।
  6. গমনসীমা এবং চলবে(পুনঃসরবরাহের আগে পর্যন্ত): ৪৫ দিন অবধি, সাথে এক সর্বোচ্চ গড়(বজায় রাখা যাবে এমন) গতিবেগ যা ২০ নট-এর কম নয়।
  7. চালকশক্তি: বৈদ্যূতিক ব্যবস্থায় চলবে।
  8. বিশেষ বৈশিষ্ট: হাসপাতাল থেকে শুরু করে নৌ-পরিচালনকেন্দ্র অবধি হওয়ার উপযোগী।
  9. ভূমিকা: নৌ-নজরদারি, বিশেষ অপারেশন, অনুসন্ধান-ও-উদ্ধার, চিকিৎসা প্রদান এবং জনহিতকর সাহায্য প্রদান।

প্রতিযোগীগণ সম্পাদনা

নাম  (টন)  বায়ুযান বহনক্ষমতা বাড়ান ডেক (কি.মি)  সৈন্য বহনক্ষমতা 
  মিস্ত্রাল ২১,০০০ ১৬টি ভারী অথবা ৩৫টি হালকা হেলিকপ্টার আছে ১৯,৮০০ ৯০০ জন মেরীন
  মাল্টি-ফাংশনাল শিপ ২০,০০০ ৬টি ই.এইচ-১০১/মার্লিন-প্রকার পর্যন্ত  আছে ১৩,০০০ ৯৫০ জন মেরীন
 হুয়ান কার্লোস ১ ২৭,০৭৯ এভি-৮বি হ্যারীয়ার II, এফ-৩৫ (পরিকল্পিত)-সহ, সি.এইচ-৪৭, সী কিং, এন.এইচ-৯০) ৩০টি বায়ুযান পর্যন্ত আছে ( স্কি জাম্প-সহ) ১৭,০০০ ৯১৩ জন মেরীন

মিস্ত্রাল এল.এইচ.ডি (ডিসিএনএস, ফ্রান্স) সম্পাদনা

 
বি.পি.সি ডিক্সমান্ড - একটি মিস্ত্রাল শ্রেণীর উভগামী আক্রমক জাহাজ এবং ভারতীয় নৌসেনার এম.আর.এস.ভি-এর সম্ভাব্য পদপ্রার্থী

ডি.সি.এন.স/আরামিস-এর প্রতিযোগীটি একটি মিস্ত্রাল শ্রেণীর জাহাজের উন্নত সংষ্করণ। এই শ্রেণীর জাহাজগুলি সাধারণত ৯০০ জন সশস্ত্র সেনা এবং ১৬টি ভারী অথবা ৩৫টি হালকা হেলিকপ্টারের কাছাকাছি বহন করতে পারে এই জাহাজগুলি ভারতের মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়ার কাছেও রপ্তানি হতে চলেছে। ভারত যদি এই জাহাজগুলিতে রুশ অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে জাহাজটিতে একইরকম অদল-বদল হতে পারে। ফ্রান্সের ডি.সি.এন.এস বর্তমানে ভারতের নতুন স্কর্পেন শ্রেণীর ডিসেল বিদ্যূতের দ্রুত আক্রমক ডুবোজাহাজ নির্মাণে সহযোগী। মিস্ত্রাল এই এম.আর.এস.ভি প্রকল্পের প্রতিটি মাপকাঠি পূরণ করে।[৫]

বহুর্মুখী জাহাজ এল.এইচ.ডি (ফিনক্যান্তিয়েরি, ইতালি) সম্পাদনা

 
ফিনক্যান্তিয়েরি-এর ২০,০০০ ট. বহুর্মুখী জাহাজের একটি প্রতিমাণ।

ভারতীয় নৌবাহিনী সম্প্রতি ইতালিয় ফিনক্যান্তিয়েরি-এর থেকে তাদের প্রথম দিপক শ্রেণীর বহর পুনঃসরবরাহী পেয়েছে, এই সংস্থা বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বিক্রান্ত শ্রেণীর বিমানপোত-জাহাজ তৈরীর জন্য কাজ করছে।[৭] যদিও ভারতের সঙ্গে ফিনক্যান্তিয়েরির নৌ-শৈল্পিক সম্পর্কের পূর্বাতিহাস আছে, তবুও তাদের সম্পূর্ণভাবে একটি জাহাজের বিকাশ ও নির্মাণ করতে হবে যা মাল্টি-রোল সাপোর্ট ভেসেল(বহুর্মুখী-সহযোগী জাহাজ)-এর মাপকাঠি পূরণ করবে । যাই হোক, তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ফিনক্যান্তিয়েরি পরিপূর্ণভাবই একটি জাহাজ বানাতে সমর্থ যা তারা ২০,০০০ টনের এক "মাল্টি-ফাংশনাল শিপ"(বহুর্মুখী জাহাজ) হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এই জাহাজটিকে "এম.আর.এস.ভি" খেতাবের জন্য উপযুক্ত মনে করা হয়।[৪]

হুয়ান কার্লোস ১ শ্রেণী (নাভান্তিয়া, স্পেন) সম্পাদনা

 
নাভান্তিয়া'র রণকৌশল প্রক্ষেপী হুয়ান কার্লোস ১ শ্রেণী'র জাহাজ

নাভান্তিয়া হুয়ান কার্লোস ১ এল.এইচ.ডি-টি স্প্যানিশ নৌবাহিনীর জন্য বানিয়েছে, এবং অস্ট্রেলীয় নৌবাহিনীর জন্য অনুরূপ দুটি জাহাজ বানাচ্ছে। এটি "মাল্টি-রোল সাপোর্ট ভেসেল"(বহুর্মুখী-সহযোগী জাহাজ) খেতাবের জন্যও এক প্রবল প্রতিদ্বন্দী কারণ এটি এই খেতাবের সব মাপকাঠিই ঠিকভাবে পূরণ করে। স্টোভোল অপারেশনের জন্য স্কি জাম্প-সহ, এটি ধারণাগত ভাবে একটি ওয়াস্প শ্রেণীর এল.এইচ.ডি-এর অনুরূপ। যাই হোক, ভারত যদি একটি ক্ষুদ্রতর জাহাজ অথবা এল.পি.ডি-এর সঙ্গে আপোস করতে চায়, তাহলে তা গালিশিয়া শ্রেণীর এল.পি.ডি-এর দ্বারা নাভান্তিয়ার সুযোগ সম্প্রসারিত করবে, যা রয়্যাল শ্কেলডে-এর সঙ্গে একসাথে তৈরী করা হয়েছে।

নির্মাণ সম্পাদনা

ভারতীয় নৌসেনা একটি ₹১৬০০০ কোটির (১৬০ বিলিয়ন ভারতীয় মুদ্রা - ২.৬ বিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রীয় মুদ্রা) দরপত্র প্রকাশ করে ও ৩টি দেশীয় জাহাজ-নির্মাণ সংস্থাকে দেয় - লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো (এল অ্যান্ড টি) যা স্পেনীয় নাভান্তীয়ার  সঙ্গে অংশীদারি করেছে, পিপাভাভ ডিফেন্স অ্যান্ড অফশোর ইঞ্জিনীয়ারিং যা ফ্রান্সের ডি.সি.এন.এস-এর সঙ্গে অংশীদারি করেছে, এবং এ.বি.জি শিপইয়ার্ড যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এলিয়ন-এর সাথে অংশীদারি করেছে। বিজয়ী নক্সা নির্বাচিত হওয়ার পর, বেসরকারি জাহাজ-নির্মাণ সংস্থা ২টি এল.পি.ডি নির্মাণ করবে এবং বাকি দুটি হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ড লিমিঃ (এইচ.এস.এল) নির্মাণ করবে।[৬][৮][৯]

এছাড়াও সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Multi-Role Support Ship (MRSS)
  2. "India Looking for Amphibious Ships"Defense Industry Daily। ২৭ নভে ২০১১। 
  3. "Multi-Role Support Ship (MRSS)"Global Security। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ 
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; fincantieri নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; navyrecognition.com নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; dnd13 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; bharatrakshak নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; toi2011-09-10 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; dn14j14 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা