ব্রাজিলের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

১৫০০ থেকে ১৮২২ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল একটি পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। ১৮২২ সালে এটি স্বাধীনতা অর্জন করে। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণভাবে উপনিবেশ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিলের উত্তরণ ঘটে। এসময় দেশে কোন রক্তপাত বা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেনি। স্বাধীন হবার পর একজন সম্রাট ব্রাজিল শাসন করতেন। ১৮৮৮ সালে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করা হয়। ১৮৮৯ সালে সামরিক অফিসারেরা রক্তপাতহীন কু-এর মাধ্যমে সম্রাটকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করে ব্রাজিলে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র স্থাপন করেন।

ব্রাজিল প্রশাসনিক বিভাগের বিবর্তন

১৯৩০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির জমিদারেরা দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই বছর ব্রাজিলে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটে যার ফলে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈরশাসকেরা ব্রাজিল শাসন করেন। ১৯৪৫ সালে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৪ সালে অর্থনৈতিক সমস্যা ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের রেশ ধরে আরেকটি সামরিক কু ঘটে। এই সামরিক জান্তাটি ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল শাসন করে। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই সরকার বিরোধীদের উপর বেশ নিপীড়ন চালায়। ১৯৮০-র দশকের শুরুতে জান্তাটি কঠোরতা হ্রাস করে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে এগোতে থাকে।

প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস সম্পাদনা

যখন ব্রাজিলে পর্তুগিজ অভিযাত্রী আসেন, তখন এই এলাকাটি শত বিভিন্ন ধরনের জাকুবু উপজাতিরা বসবাস করত। পর্তুগিজরা মিনাস গেরিসের উচ্চভূমিতে কমপক্ষে ১০,০০০ বছর আগের "ইন্ডিয়ানস" (یndios) নামে পরিচিত প্রথম বাসিন্দাদের বসতি খুজে পেয়েছিলেন, যা এখনও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে বিরোধের বিষয়।[১] পশ্চিমাঞ্চলীয় গোলার্ধে পাওয়া প্রাচীন দ্রব্যগুলি রেডিও কার্বন পরিক্ষায় প্রমাণ হয়েছে সেগুলি প্রায় ৮,০০০ বছর বয়সী । ব্রাজিলের আমাজন উপত্যকায় সান্তেরার নিকটবর্তী অঞ্চলে খনন করা হয়েছে এবং "উষ্ণ অঞ্চলটি সম্পদের সমৃদ্ধ ছিল না" এই ধারণাটি পাল্টে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখান।[২] নৃতাত্ত্বিক, ভাষাবিদ ও জেনেটিক্সবাদীদের বর্তমান সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিকোণ হল যে প্রারম্ভিক গোষ্ঠী অভিবাসী শিকারীদের প্রথম অংশ ছিল যারা এশিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন, বেরিং প্রণালি অতিক্রম করে বা প্রশান্ত মহাসাগর বরাবর উপকূলবর্তী সমুদ্র পথ দ্বারা অথবা উভয় পথ ধরে।

আন্দিজ পর্বতমালা এবং দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অঞ্চলের পর্বতশ্রেণীগুলি মহাদেশঝির পশ্চিম উপকূলে স্থায়ী কৃষি সভ্যতা এবং পূর্বের আধা-ভ্রাম্যমাণ উপজাতির মানুষের মধ্যে একটি তাতক্ষণিক ধারালো সাংস্কৃতিক সীমা তৈরি করেছিল, যারা কখনো লিখিত তথ্য বা স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভের স্থাপনা তৈরী করেনি। এই কারণে, ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের আগে ব্রাজিলের ইতিহাস সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা যায়। প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ (প্রধানত মৃৎপাত্র), অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের একটি জটিল নমুনা আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং মাঝে মাঝে বড় রাষ্ট্রের মত ফেডারেশনগুলির নির্দেশ করে।

ঔপনিবেশিক ব্রাজিল সম্পাদনা

ইউরোপীয়দের দ্বারা ব্রাজিল আবিষ্কারের সময় ও তার আগে বর্তমান সময়ের ব্রাজিলে প্রায় ,০০০ টি আদিবাসী উপজাতি ছিল। আদিবাসী জনগোষ্ঠী ঐতিহ্যগতভাবে বেশিরভাগই আধা-খাদকপূর্ণ উপজাতি ছিল যারা শিকার, মাছ ধরার, সংগ্রহ ও অভিবাসী কৃষিকাজে দ্বারা জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করত। যখন ১৫০০ সালে পর্তুগিজরা এসেছিল, সেই সময় মূলত উপকূলে এবং প্রধান নদীগুলির তীরে উপজাতির মানুষেরা বাস করত।

উপজাতীযগুলির মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ, নরহত্যা এবং ব্রাজিলউডের ধনতান্ত্রিক লাল রঙের পেছনে পর্তুগিজরা বিশ্বাস করেছিল যে ব্রাজিলের উপজাতী নাগরিকদেরকে খ্রিস্টধর্মে নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু পর্তুগিজরা দক্ষিণ আমেরিকাতে স্প্যানিশদের মত অজ্ঞাতসারে তাদের সাথে রোগ নিয়ে আসে, যার ফলে চিকিৎসার অভাবের কারণে অনেক স্থানীয় মানুষ তথা আদিবাসী অসহায় ছিল। হাজার হাজার আদিবাসী মানুষের মৃত্যু হয় হাম, গুটিবসন্ত, যক্ষ্মা, গনোরিয়া এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার ফলে। আদিবাসীদের মধ্যে বাণিজ্য রুটগুলির দ্বারা দ্রুত এই সব রোগ ছড়িয়ে পড়ে এবং সমগ্র উপজাতির মানুষেরা ইউরোপীয়দের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না করেই ধ্বংস হয়ে যায়।

ব্রাজিল সাম্রাজ্য সম্পাদনা

পুনঃরায়গণতন্ত্র থেকে বর্তমান সময় (১৯৮৫ থেকে বর্তমান) সম্পাদনা

জাতিসংঘের দ্বারা শরণার্থীদের ফিরে আসার পর ১৯৮৫ সালে তান্দ্রো নেভস একটি পরোক্ষ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। শপথ গ্রহণের আগেই তিনি মারা যান এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জোসে সার্নি তার জায়গায় রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৮৯ সালের সামরিক শাসনের পর জনপ্রিয় ফার্নান্ডো কোলার ডি মেলো নির্বাচনের দ্বারা প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে দুই-দফা চূড়ান্ত রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচনে ৩৫ মিলিয়ন ভোটে পরাজিত করেন। কোলার সাও পাওলো রাজ্যে অনেক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে জিতেছে। ২৯ বছর বয়সে ব্রাজিলের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি "কোলার" ও তার সরকারের প্রাথমিক যুগের বেশিরভাগ সময় উচ্চ-মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, এই মুদ্রাস্ফীতির কখনো কখনো প্রতি মাসে ২৫% হারে পৌঁছেছিল। [45]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Robert M. Levine; John J. Crocitti (১৯৯৯)। The Brazil Reader: History, Culture, Politics। Duke University Press। পৃষ্ঠা 11–। আইএসবিএন 978-0-8223-2290-0। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১২ 
  2. Science Magazine, 13 December 1991 http://www.sciencemag.org/content/254/5038/1621.abstract

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা