আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে প্রথমবারের মতো পালিত হয়। এরপর দিবসটি জাতিসংঘের সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চাশটি দেশে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কোর উইমেন এন্ড কালচার অব পিসের পরিচালক ইনিবর্গ ব্রেইনিস বলেন, ‘এটা একটা দারুণ আইডিয়া। এটা লৈঙ্গিক ভারসাম্য আনবে।’

এই দিবসের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে- পুরুষ ও বালকদের স্বাস্থ্য, লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন, লৈঙ্গিক সাম্যতার প্রচার এবং পুরুষদের মধ্যে ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের গুরুত্ব তুলে ধরা। এতে পুরুষ ও বালকদের নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। গুরুত্বের সঙ্গে তাদের অর্জন ও অবদানকে উদযাপন করা হয়। বিশেষ করে সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যত্নের ক্ষেত্রে তাদের অবদানকে তুলে ধরাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

কীভাবে এলো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস:

এই ধরনের একটি দিবসের প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৬০ এর দশকে। সেই সময়ে নারী দিবসের সঙ্গে সমতা আনতে ২৩ ফেব্রুয়ারিকে পুরুষ দিবস করার উদ্যোগ নিলেও সেটি ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রেড আর্মি এন্ড নেভি ডে’। পরে এর নামে দেয়া হয় ‘ডিফেন্ডার অব দি ফাদার ল্যান্ড ডে’। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি. হ্যারিস সালিনা জার্নালে একটি লেখায় বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন নারী শ্রমিকদের জন্য একটা দিন রাখলেও পুরুষদের জন্য রাখেনি। ষাট থেকে নব্বই দশকের মধ্যে এই ধরনের নানা কথা চালাচালি হলেও সুনির্দিষ্ট দিবস পাওয়া যায়নি।

১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মৌসুরী-ক্যানসাস সিটির মৌসুরী সেন্টার ফর মেন’স স্টাডিজের প্রফেসর থমাস ওস্টারের উদ্যোগে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় ফেব্রুয়ারি মাসে পুরুষদের উপলক্ষ্য করে কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে নানা কারণে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় তারা। এরমধ্যে মাল্টায় ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর অন্যান্য দেশেও একটি পালিত হয়। মাল্টা এই ধারণা নেয় ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো থেকে।

ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোতে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে দিবসটির উদ্যোগ নেন ইউনির্ভাসিটি অব ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড. জেরোমি তিলকসিংহ। তিনি বলেন, ‘আমি অনূভব করেছি পুরুষদের জন্য কোনো দিবস নেই। কেউ কেউ বলে বাবা দিবস তো রয়েছে। কিন্তু এতে বালক, তরুণ ও যারা বাবা নন তাদের কী হবে?’

তিলকসিংহের নিজের জীবনের আদর্শ ছিলেন তার বাবা। ১৯ নভেম্বর তার বাবার জন্মদিনও বটে। এছাড়া স্থানীয় একটি খেলার দল লিঙ্গ, ধর্ম ও জাতিগত বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এদিনে। পরবর্তীতে দিনটি জাতিসংঘের দাফতরিক সমর্থন পায়।

এই দিনের উল্লেখযোগ্য আয়োজনে থাকে সেমিনার, স্কুলের শ্রেণিকক্ষে বিশেষ কার্যক্রম, রেডিও ও টিভি অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী ও মার্চ, বির্তক প্রভৃতি। প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে এটি নারী দিবসের বিপরীত কিছু নয়। বরং পুরুষের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া এর মূল লক্ষ্য। এছাড়া প্রতি বছরে আলাদা আলাদা বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেমন- ২০০২ সালে শান্তি, ২০০৩ সালে পুরুষদের স্বাস্থ্য বা ২০০৯ সালে ইতিবাচক অনুকরণীয় আদর্শ। প্রতিটি দেশ নিজের স্থানীয় চাহিদার নিরিখে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করতে পারে।

২০০৯ সালে আগের বছরগুলোর নিরিখে কিছু বিষয় ও উদ্দেশ্য দেওয়া হলো-

১. বিভিন্ন ক্ষেত্রের ইতিবাচক আদর্শ চরিত্রের প্রচারণা।

২. সমাজ, সম্প্রদায়, পরিবার, বিবাহ, শিশুর যত্ন ও পরিবেশে পুরুষদের অবদানকে উদযাপন।

৩. পুরুষের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক, আবেগীয়, শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে গড়ে উঠায় জোর দেয়া।

৪. সামাজিক সেবা, আচরণ ও প্রত্যাশা এবং আইনের ক্ষেত্রে পুরুষদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের বৈষম্যকে সবার সমানে তুলে ধরা।

৫. লৈঙ্গিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও সমতা।

৬. মানুষের জন্য নিরাপদ ও উত্তম পৃথিবী গড়া, যেখানে সে নিরাপদে ও তার সকল সম্ভাবনা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।

২০১৩ সালে এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘পুরুষ ও বালকদের নিরাপদে রাখা’। এছাড়া মনোনয়ন পাওয়া অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো হলো-

১. পুরুষ ও বালকদের আত্মহত্যা মোকাবিলা করা।

২. ভবিষ্যতের ইতিবাচক আদর্শ হয়ে উঠতে বালকদের নিরাপদে রাখা।

৩. পুরুষ ও বালক নির্যাতন মোকাবিলা।

৪. অসুখ ও এড়ানো যায় এমন মৃত্যু থেকে তাদের নিরাপদে রাখা।

৫. বাবা ও পুরুষদের ইতিবাচক আদর্শ হিসেবে প্রচার করে তাদের সুরক্ষা।

নানা উদ্যোগ:

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসকে কেন্দ্র করে মভেম্বর নামের একটি দলও গড়ে উঠেছে। যেখানে গোঁফ হলো পুরুষের প্রতীক। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এই দলটি গোঁফ বড় রাখার ইভেন্ট পরিচালনা করে। এই সময় তারা ফান্ড সংগ্রহ করে। পুরুষের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালায়। তাদের সাইটের নাম মভেম্বর.কম। ২০১২ সালে গ্লোবাল জার্নালের মতে এটি পৃথিবীর শীর্ষ ১০০টি এনজিও’র একটি।

ভারতে অনেক সংগঠনই পালন করে থাকে।