বেবী হালদার

একজন ভারতীয় লেখিকা

বেবী হালদার (জন্ম- ১৯ জুন ১৯৭৩) একজন ভারতীয় গৃহকর্মী ও লেখিকা। ২০০২ সালে হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত তার আত্মজীবনী আলো আঁধারি-তে উনি তার কষ্ট করে বড় হয়ে ওঠা ও গৃহকর্মী হিসেবে কাটানো দিনগুলি নিয়ে লেখেন।[২] বইটি ১৩টি আন্তর্জাতিক ভাষা সহ মোট ২১টি ভাষায় এখনো পর্যন্ত অনূদিত হয়েছে।[৩]

বেবী হালদার
জন্ম (1973-06-19) ১৯ জুন ১৯৭৩ (বয়স ৫০)
পেশাগৃহকর্মী, লেখিকা
পরিচিতির কারণআলো আঁধারি (২০০২), Aalo Aandhari (A Life Less Ordinary: A Memoir) (২০০৬)

প্রথম জীবন ও বিবাহ সম্পাদনা

বেবী হালদার কাশ্মীরে জন্মগ্রহণ করেন।[১] চার বছর বয়সে মুর্শিদাবাদ-এ থাকাকালীন ওনার বাবার মদ্যপানের স্বভাবের জন্য ওনার মা ওদের ছেড়ে চলে যান।[৪] অত্যাচারী বাবা ও সৎ মায়ের কাছে উনি বড় হন। কাশ্মীর থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে শেষ পর্যন্ত ওনারা পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে থাকতে শুরু করেন। এখানেই বেবী হালদারের বড় হয়ে ওঠা।[৫] ষষ্ঠ শ্রেণী অবধি অনিয়মিত স্কুল করবার পরে ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।[৩] ওনার স্বামী ওনার থেকে ১৪ বছরের বড় ছিলেন ও সজ্জাশিল্পীর কাজ করতেন।[৬][৭] ১৩ বছর বয়সে উনি প্রথম সন্তানের জন্ম দেন ও তার পরে পরেই আরো দুটির। এর সাথেই উনি গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। অবশেষে বহু বছরের পারিবারিক অত্যাচারের পর, ১৯৯৯ সালে ২৫ বছর বয়সে উনি ছেলে সুবোধ ও তাপস এবং মেয়ে পিয়াকে নিয়ে, স্বামীকে ছেড়ে ট্রেনে করে দিল্লীতে পালিয়ে যান। ছেলেমেয়েদের বড় করতে ও পড়াশুনা শেখাতে নতুন দিল্লীতে গৃহকর্মীর কাজ করতে থাকেন বেবি হালদার।[২][৬] অবশেষে আসেন গুরুগাঁও তে অবসরপ্রাপ্ত অশীতিপর ভূবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রবোধকুমার শ্রীবাস্তবের বাসায়, যিনি সম্পর্কে প্রখ্যাত হিন্দি সাহিত্যিক মুন্সি প্রেমচাঁদের পৌত্র। তিনিই প্রথম বেবীর মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ লক্ষ্য করেন। তাকে পড়ান - তসলিমার লেখা "আমার মেয়েবেলা"। বেবিও 'তাতুস'-এর (তাতুস এর অর্থ বাবা, বেবী আশ্রয়দাতা প্রবোধকুমার শ্রীবাস্তবকে এই নামে ডাকতেন) অনুপ্রেরণায় লিখতে থাকেন নিজের কথা বাংলায় তাতুসের দেওয়া ডায়েরি আর কলমে। তার লেখা পড়ে কেঁদে ফেলেছিলেন প্রবোধকুমার। সাহিত্য-অনুরাগীদের দেখালেন এবং শেষে শ্রীবাস্তব যোগাযোগ করেন পেঙ্গুইন প্রকাশনা সংস্থার সহযোগী জুবান বুকসের কর্ণধার ঊর্বশী বুটালিয়ার সঙ্গে। এঁদের দুজনের উৎসাহে ২০০২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় বেবীর বাংলায় লেখা "আলো আঁধারি"-এর হিন্দি অনুবাদ (অধ্যাপক প্রবোধকুমার শ্রীবাস্তবকৃত)। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বেস্টসেলারে তালিকায় চলে আসে বইটি। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে মূল বাংলায় লেখা বইটি প্রকাশ করে কলকাতার রোশনাই প্রকাশনী এবং এটি ওই বৎসরের কলকাতা বইমেলায় তসলিমা নাসরিন প্রকাশ করেন। ২০০৬ ‌খ্রিস্টাব্দে ইংরাজীতে অনুবাদ করেন ঊর্বশী বুটালিয়া স্বয়ং এবং নাম দেন - "A Life Less Ordinary: A Memoir". এপর্যন্ত একুশটি আঞ্চলিক এবং তেরোটি বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে বইটি।[৮] সাহিত্য অনুরাগীদের অনেকেই বেবী হালদারের এই লেখাটিকে আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি সঙ্গে তুলনা করেন। আলো-আঁধারি প্রকাশের পর বেবী দেশে ও বিদেশ থেকে বহু আমন্ত্রণ পেয়েছেন, নিজের বক্তব্য রেখেছেন। সম্মানিত হয়েছেন হংকং এর সাহিত্য উৎসবে, প্যারিসের বইমেলায়। তাকে নিয়ে দুটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। [৯]

রচিত গ্রন্থ সম্পাদনা

  • আলো আঁধারি (হিন্দিতে - ২০০২),(২০০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় প্রকাশ করে কলকাতার রোশনাই প্রকাশনী আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৮৮৭৪-২০১-১)
  • ঈষৎ রূপান্তর (২০১০)
  • ঘরে ফেরার পথ (২০১৪)
  • কবে আমি বাহির হলেম (২০১৯)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "IN CONVERSATION: `Writing has to be classless'"The Hindu। ১৫ এপ্রিল ২০০৭। ১৯ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১২ 
  2. Raka Ray; Seemin Qayum (২০০৯)। Cultures of Servitude: Modernity, Domesticity, and Class in India। Stanford University Press। আইএসবিএন 080477109X 
  3. "Baby's day out in Hong Kong"Daily News and Analysis। ১৯ মার্চ ২০০৭। 
  4. "Maid to write sequel to autobiography"The Tribune। ১১ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১২ 
  5. "Housemaid makes it big in literature"The Tribune। ২৭ মার্চ ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১২ 
  6. "The Diary of Baby Haldar"Outlook। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৩। 
  7. "From maid to bestselling author"BBC News। ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৪। 
  8. "মুখোমুখি বেবি হালদার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৫ 
  9. বেবী হালদার। ঘরে ফেরার পথ। দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা। আইএসবিএন 978-81-2952-172-9