সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারতে বিদর্ভ রাজ্য যদু রাজাদের (ভোজ যাদব) দ্বারা শাসিত অনেক রাজ্যের অন্যতম একটি। এটি সেই অঞ্চলে অবস্থিত ছিল যেখানে এখনও মধ্য ভারতের মহারাষ্ট্রে বিদর্ভ নামে পরিচিত।

বিদর্ভ রাজ্য

অজ্ঞাত (?~১১০০ খ্রিস্টপূর্ব)–অজ্ঞাত (?~৫০০ খ্রিস্টপূর্ব)
Vidarbha
বৈদিক যুগের শেষদিকের বিদর্ভ এবং অন্যান্য রাজ্যাদি
রাজধানীকৌণ্ডিন্যপুর
ধর্ম
বৈদিক হিন্দুধর্ম
সরকাররাজতন্ত্র
জনক (রাজা বা নৃপতি) 
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
অজ্ঞাত (?~১১০০ খ্রিস্টপূর্ব)
• বিলুপ্ত
অজ্ঞাত (?~৫০০ খ্রিস্টপূর্ব)
উত্তরসূরী
ভাজ্জি (Sanskrit: Vṛji)
মহাজনপদ

দময়ন্তী, নলের স্ত্রী ছিলেন বিদর্ভের রাজা ভীমের (পাণ্ডব নয়) রাজকন্যা। একইভাবে বাসুদেব কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ স্ত্রী রুক্মিণী ছিলেন বিদর্ভ থেকে আগত। ঋষি অগস্ত্যের স্ত্রী লোপামুদ্রাও মহাভারতে উল্লিখিত বিদর্ভ দেশের একজন রাজকন্যা ছিলেন।[১] ভগবান রামের পিতামহী (দাদী) এবং রাজা দশরথের জননী ইন্দুমতিও বিদর্ভ রাজ্যের রাজকন্যা ছিলেন। কুন্দিনাপুরী ছিল এর রাজধানী, যা পূর্ব মহারাষ্ট্রের কৌন্দিন‍্যপুর হিসেবে চিহ্নিত। রুক্মিণীর ভাই রুক্মী বিদর্ভের কাছাকাছি রাজধানী ভোজকট নিয়ে আরেকটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়, যখন অন্যান্য সমস্ত রাজ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, তখন রুক্মীর অধীনে বিদর্ভ নিরপেক্ষ ভূমিকায় ছিল, কারণ তার সেনাবাহিনীকে পাণ্ডব এবং কৌরব উভয় পক্ষই প্রত্যাখ্যান করেছিল যারা যুদ্ধে নিয়োজিত মূল দুটি পক্ষ ছিল। বিদর্ভের অন্য কোনো রাজা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। মহাভারতের ৬:৫১-এ একটি উল্লেখ আছে যে, সাধারণভাবে ভীষ্মের অধীনে বিদর্ভের একটি সেনাবাহিনী কৌরবদের অনুকূলে ছিল।

বিদর্ভের রাজা ভীম সম্পাদনা

মহাভারতের অনেক জায়গায় রাজা ভীমকে (পাণ্ডব নয়) বিদর্ভের প্রাচীন শাসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। (মহাভারত ৩:৫৩ থেকে ৭৭)।

বিদর্ভ ও অযোধ্যার সংযোগকারী দক্ষিণ পথ সম্পাদনা

মহাভারত এমন একটি পথের সূত্র দেয় যা প্রাচীনকালে বিদর্ভকে কোশলের মতো উত্তর রাজ্যের সাথে সংযুক্ত করে বলে আভাষ প্রদান করে।

নল এবং দময়ন্তীর মধ্যে নিম্নলিখিত কথোপকথনটি প্রাচীন যুগের উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্য ভারতের রাজ্যগুলোর সাথে সংযোগকারী বহু প্রাচীন রাস্তা বা পথের বর্ণনা দেয়। (মহাভারত ৩:৬১)

এই অনেক রাস্তা অবন্তী এবং রিক্ষবত পর্বতের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দেশের দিকে এগিয়ে গেছে। এই সেই বিন্ধ্য নামক পরাক্রমশালী পর্বত; ইয়ন, পয়স্বিনী নদী সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত, এবং এর ওপারে তপস্বীদের আশ্রয়স্থল, বিভিন্ন ফল ও শিকড় দিয়ে সজ্জিত। এই রাস্তাটি বিদর্ভদের দেশে নিয়ে যায় — এবং সেটি কোশলদের দেশে। এসব রাস্তা পেরিয়ে দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণের সেই দেশ।

অযোধ্যা, কোশলের ঋতুপর্ণ রাজা বিদর্ভের নগরে এসেছিলেন। লোকেরা রাজা ভীমের (বিদর্ভের) কাছে (তার আগমনের) খবর নিয়ে আসে। আর ভীমের আমন্ত্রণে রাজা কুন্দিনা নগরে প্রবেশ করেন।

কোশলের রাজা কিছুক্ষণ ভাবলেন এবং দীর্ঘক্ষণ পর বললেন, ‘আমি এখানে আপনাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।’ এবং রাজা ভীম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন এবং একশত যোজন অতিক্রম করে ঋতুপর্ণের আগমনের (সম্ভাব্য) কারণ সম্পর্কে চিন্তা করলেন। এবং তিনি ভাবছিলেন, ‘অন্যান্য সার্বভৌমদের পাশ কাটিয়ে, এবং পিছনে অগণিত দেশ পেরিয়ে কেবল আমার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসাটা তার আগমনের কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়’।

গোয়ার ভোজ সম্পাদনা

গোয়ার ভোজগণ যারা গোয়া এবং কোঙ্কণের কিছু অংশ এবং কর্ণাটকের কিছু অংশ অন্তত খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী থেকে ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত শাসন করে আসছিল বলে মনে করা হয় তারা বিদর্ভের ভোজদের বংশোদ্ভূত যারা দক্ষিণ দিকে স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং দক্ষিণ কোঙ্কণে (গোয়া) একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।[২] গোয়া ভোজগণের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীনে এসেছিল যারা পাটলীপুত্রের সম্রাট বা সম্ভবত শতবাহনদের অধীনে সামন্তবাদী আনুগত্যে এই অঞ্চল শাসন করেছিল। ভোজদের ক্ষমতার আসনটি গোয়ার চন্দ্রপুরা বা চন্দ্রৌড়া (আধুনিক চান্দর) এ অবস্থিত ছিল।[৩]

সাহিত্যের উল্লেখ সম্পাদনা

  • মহাভারতে ১:৯৫-এ একজন বিদর্ভ রাজকন্যা সুশ্রবার উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি চন্দ্র রাজবংশের জয়ৎসেনা নামে এক রাজপুত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আভাচিনা ছিল তার ছেলে।
  • ইক্ষ্বাকু রাজা সাগরের একটি বিদর্ভ রাজকন্যা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে
  • ঋষি অগস্ত্যের স্ত্রী হিসাবে একজন বিদ্রাভ রাজকুমারী ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে পয়োষ্ণী নামে একটি নদী প্রবাহিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর সূক্ষ্ম অবতরণ স্থানটি বিদর্ভের রাজা কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। (মহাভারত ৩:১২০)।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Lopamudra The Mahabharata, translated by Kisari Mohan Ganguli (1883–1896), Book 3: Vana Parva: Tirtha-yatra Parva: Section XCVII.
  2. Kapoor, Subodh (২০০২)। Encyclopaedia of Ancient Indian Geography, Volume 1 Volume 1 of A-Kashmir,। Genesis Publishing Pvt Ltd। পৃষ্ঠা 148। আইএসবিএন 9788177552980 
  3. Shyam Singh, Shashi (২০০০)। Encyclopaedia Indica: Ancient Goa। Anmol Publications। পৃষ্ঠা 657। আইএসবিএন 8170418593 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা