বাবর আলী (পর্বতারোহী)

বাংলাদেশী এভারেস্ট বিজয়ী
(বাবর আলী (এভারেস্ট জয়ী) থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বাবর আলী (জন্ম: ১৯৯১) একজন বাংলাদেশী পর্বতারোহী এবং চিকিৎসক, যিনি ষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন। তিনি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮ টায় এভারেস্ট পর্বত জয় করেন।[১][২]

বাবর আলী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
পেশাচিকিৎসক
পরিচিতির কারণষষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে এভারেস্ট পর্বত বিজয়
পিতা-মাতা
  • লেয়াকত আলী (পিতা)
  • লুৎফুন্নাহার বেগম (মাতা)

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

বাবর পেশায় একজন চিকিৎসক। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান বাবর ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১ তম ব্যাচের ছাত্র। কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করলেও আগের অভিযানের সময় ছুটি না মেলায় চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।[৩]

[৪][৫]এভারেস্ট জয় সম্পাদনা

বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে উড়ে যান লুকলা বিমানবন্দরে। এরপর পথচলা শুরু করেন এভারেস্ট বেজক্যাম্পের উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছান ১০ এপ্রিল। ১৪ মে মাঝরাতে বেজক্যাম্প থেকে বাবরের যাত্রা শুরু হয় চূড়া অভিমুখে। ১৫ মে সকালে পৌঁছে যান ক্যাম্প ২-এ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেখানে দুই রাত কাটিয়ে বাবর উঠে যান ক্যাম্প ৩–এ। সেখান থেকে ১৮ মে পৌঁছান ক্যাম্প ৪-এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের ওপরের অংশকে বলা হয় ‘ডেথ জোন’। ১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা। ১৯ মে ভোরের প্রথম আলোয় ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে ওড়ান বাংলাদেশের পতাকা।[১]

বিভিন্ন অভিযান সম্পাদনা

২০১৯ সালে পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা হেঁটে পার করেন তিনি। এসব অভিযান নিয়ে লিখেছেন বই।[৬]

তিনি ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থেমেছিলেন তিনি। পথে যেতে যেতে ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর।

২০১৪ সাল থেকে তার পর্বতারোহণে পথচলা শুরু বাবরের। চট্টগ্রামের পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। এ ক্লাবের হয়েই গত দশ বছরে হিমালয়ের নানান শিখরে অভিযান করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে ভারতের উত্তরকাশীর নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে মৌলিক পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। ২০২২ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমালয়ের অন্যতম দুর্গম ও টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলাম (২২,৩৪৯ ফুট) আরোহণ করেন বাবর।

সাইকেলিংয়ের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন এই তরুণ।

২১শে মে, ২০২৪ তারিখে নেপালের স্থানীয় সময় ভোর ০৫:৫০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় ০৬:০৫ মিনিট)-এ বাবর দাঁড়ালো বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ শৃঙ্গ লোৎসে চূড়াতে। এভারেস্ট জয়ের তিন দিন ধরে রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার হলো অবসান।

এটিই এই বাংলাদেশের কোন সন্তানের প্রথম লোৎসে সামিট এবং প্রথম একই অভিযানে দুইটি আটহাজারি শৃঙ্গ সামিট।[৭]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "এভারেস্টচূড়ায় ষষ্ঠ বাংলাদেশি বাবর আলী"প্রথম আলো। ১৯ মে ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৪ 
  2. "এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি বাবর আলী"somoynews.tv। ১৯ মে ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২৪ 
  3. "এভারেস্টচূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ালেন বাবর আলী"bdnews24.com। ১৯ মে ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৪ 
  4. "From doctor to mountaineer: Babar Ali conquers Mount Everest, ends 11-year hiatus"The Business Standard। 19 may 2024। সংগ্রহের তারিখ 9 June 2024  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. "বাবর আলীর এভারেস্ট জয়"দৈনিক সমকাল। জুন ১, ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ জুন ৯, ২০২৪ 
  6. "এভারেস্টচূড়ায় ষষ্ঠ বাংলাদেশি বাবর আলী"প্রথম আলো। ১৯ মে ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৪ 
  7. "ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে যেভাবে এভারেস্টের চূড়ায় বাবর আলী"BBC NEWS বাংলা। ১৯ মে ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০২৪