ফ্রেয়ার হল (উর্দু: فریئر ہال‎‎) পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত সিন্ধু প্রদেশের ব্রিটিশ উপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকের ভবন। ১৮৬৫ সালে সম্পূর্ণ, ফ্রেয়ার হল মূলত করাচির টাউন হল হিসাবে ব্যবহৃত হতো[১] এবং বর্তমানে এটি প্রদর্শনীর স্থান ও গ্রন্থাগার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ফ্রেয়ার হল
فریئر ہال
ফ্রেয়ার হল, করাচি
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
ধরনমূলত টাউন হল ও গ্রন্থাগার হিসাবে নির্মিত ভবনটি বর্তমানে প্রদর্শনী হল, অনুষ্ঠান স্থান এবং গ্রন্থাগার হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
অবস্থানসদ্দার, করাচি, পাকিস্তান
স্থানাঙ্ক২৪°৫০′৫১″ উত্তর ৬৭°০১′৫৮″ পূর্ব / ২৪.৮৪৭৪° উত্তর ৬৭.০৩২৯° পূর্ব / 24.8474; 67.0329
নির্মাণকাজের আরম্ভআগস্ট ১৮৬৩
নির্মাণকাজের সমাপ্তি১০ অক্টোবর ১৮৬৫
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিহেনরি সেন্ট ক্লেয়ার উইলকিন্স

অবস্থান সম্পাদনা

ফ্রেইর হল করাচির উপনিবেশিক যুগের সদর শহরে সিভিল লাইনের কনস্যুলেটের আবাসস্থলের নিকট অবস্থিত।[২] হলটি আবদুল্লাহ হারুন সড়ক (পূর্বে ভিক্টোরিয়া সড়ক) এবং ফাতেমা জিন্নাহ সড়কে (পূর্বে বোনাস সড়ক) অবস্থিত। এটি উপনিবেশিক যুগের সিন্ড ক্লাব সংলগ্ন।

ইতিহাস সম্পাদনা

ভবনটি করাচির টাউন হল হিসাবে নির্মিত হয়েছিল, এবং যেটির নকশা প্রণয়ন করেছিলেন হেনরি সেন্ট ক্লেয়ার উইলকিন্স[১] সম্ভাব্য ১২টি নকশার মধ্যে থেকে এটি নির্বাচিত হয়েছিল।[৩]

২,০০০ ব্রিটিশ ভারতীয় রুপি ব্যয়ে ভবনটির জমি ক্রয় করা হয়েছিল,[১] যা স্কিন্ডে রেলওয়ের ডব্লিওপি অ্যান্ড্রু এবং স্যার ফ্রেডরিক আর্থার বার্থলোমিউ অনুদান দিয়েছিলেন।[১] হলটি নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১,৮০,০০০ টাকা, যার মধ্যে তৎকালীন সরকার ১০,০০০ রূপি অবদান রেখেছিল, বাকি অংশ করাচি পৌরসভা পরিশোধ করেছিল।[৪]

১৮৬৩ সালের আগস্টে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল এবং ১৮৬৫ সালের অক্টোবরে সম্পূর্ণ হয়েছিল,[৫] যদিও উদ্বোধনের সময় পর্যন্ত ভবনটির কাজ পুরোপুরি শেষ করা হয়নি।[৩]

ফ্রেয়ার হলের ছাদে সাদেকায়েইনের আঁকা মুরাল

১৮৭৭ সালে ফ্রেয়ার হলে ব্যাডমিন্টনের নিয়মিত ধারাবাহিক নিয়ম গঠনের প্রথম চেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল।[৬] ১৮৮৪ সালে স্যার হেনরি বার্টাল এডওয়ার্ড ফ্রেয়ারের মৃত্যুর পরে, তার সম্মানে ভবনটির নতুন নামকরণ করা হয়ে।[৭] ফ্রেয়ার ছিলেন একজন ব্রিটিশ প্রশাসক যিনি সিন্ধুতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচার করার পাশাপাশি মুঘলদের পক্ষপাতী ফার্সি ভাষার চেয়ে বরং সিন্ধি ভাষাকে সিন্ধু প্রশাসনের ভাষা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য খ্যাত ছিলেন।

পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরে হলের গ্রন্থাগারটির নাম পরিবর্তন করে লিয়াকত জাতীয় স্মৃতি গ্রন্থাগার রাখা হয়। এটি করাচির অন্যতম বৃহত্তম গ্রন্থাগার যেখানে বিরল ও হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি সহ ৭০,০০০-এরও অধিক বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে।[৮]

হলের ছাদগুলো ১৯৮০-এর দশকে বিশ্বখ্যাত পাকিস্তানি শিল্পী সাদেকায়েইন সজ্জিত করেছিলেন, যদিও ১৯৮৭ সালে তার মৃত্যুর পরে একটি মুরাল অসম্পূর্ণ থেকে যায়।[৯] সাদেকাইনের অন্যান্য কাজ হলটিতে পাওয়া যায় এবং যেটি "গ্যালারি সাদেকাইন" নামে পরিচিত।

নিকটবর্তী মার্কিন কনস্যুলেটটিতে একাধিক সন্ত্রাসী হামলা প্রচেষ্টার কারণে ২০০২ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে হলটি পর্যায়ক্রমে বন্ধ ছিল[১০] এবং এটিকে দূরবর্তী কোনো স্থানে স্থানান্তরিত করা হলে ২০১১ অবধি স্থায়ীভাবে পুনরায় খোলা হয়নি।[১১] এটি সরাসরি করাচি পৌর কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত এবং এখানে বিভিন্ন উৎসব আয়োজন হয়ে থাকে।[১২]

স্থাপত্য সম্পাদনা

 
বহির্ভাগে ভিনিশিয় শৈলীর খিলানের উপরে গথিক-শৈলীর কোয়াটারফয়েল রয়েছে।

ফ্রেয়ের হলটি ভিনিশিয় গথিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত যা ব্রিটিশ স্থাপত্যের উপাদানগুলোকে স্থানীয় স্থাপত্য উপাদানগুলোর সাথে মিশ্রণ ঘটিয়েছে। ভবনটিতে একাধিক তীক্ষ্ণ তোরণ, শিরযুক্ত খিলান, কোয়াটারফয়েল এবং উড়ন্ত খুঁটি রয়েছে। এর দেয়ালগুলো খোদাইকৃত এবং একাধিক দেয়াল ও স্তম্ভগুলোতে সুন্দরভাবে বর্ণিত মোজাইক নকশাগুলো দৃশ্যমান।[১৩]

ভবনটি প্রাথমিকভাবে স্থানীয় হলুদ টোনযুক্ত চুনাপাথরের তৈরি, যেখানে নিকটবর্তী ভোলারি শহর থেকে সংগৃহীত সাদা ওলিাইট পাথর থেকে তৈরি পাথরের বিবরণ রয়েছে।[৩] এছাড়াও ভবনটিতে লাল ও ধূসর বেলেপাথর ব্যবহার করা হয়েছে, যেগুলো সিন্ধু শহরের জুংশাহি থেকে খনন করা হয়েছে।[৩]

ভবনটির ভেতর এক কোণে একটি লম্বা অষ্টভুজাকার টাওয়ার অবস্থিত যা লোহার খাঁচায় মুকুটযুক্ত।[৩] হলের ছাদটি মুন্টজ ধাতব দ্বারা আবৃত।[৩]

হলটির চারপাশে দুটি লন ছিল যা মূলত "কুইনস লন" এবং "কিং'স লন" নামে পরিচিত ছিল যা স্বাধীনতার পরে বাগ-এ-জিন্নাহ বা "জিন্নাহ উদ্যান" নামে পরিচিত হয়।

প্রদর্শনী স্থান সম্পাদনা

 
ফ্রেয়ার হল এখন উৎসবের স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

ফ্রেয়ার হলের অনেকগুলো পাথরের আবক্ষ মূর্তি রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে রাজা সপ্তম অ্যাডওয়ার্ড, যেটি স্থানীয় পার্সি জনহিতৈষী শেঠ এডুলজি দিনশো কর্তৃক উপহার হিসাবে পাওয়া।[৪] ফ্রেয়ার হলে স্যার চার্লস প্রিচার্ডের তেলচিত্রও রয়েছে, যিনি সিন্ধুর প্রাক্তন কমিশনার ছিলেন।

২০১৮ সালের হিসাবে, ফ্রেয়ার হলটি এখনও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং এটির উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য এবং উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের সাথে জড়িত থাকার কারণে পর্যটনের জন্য এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে বিবেচিত।

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sir Bartle Frere। The Speeches and Addresses of Sir H.B.E. Frere, G.C.S.I., K.C.B., D.C.L.। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  2. "Frere Hall Bagh-e-Jinnah Karachi"whitengreen.com। ২০১৬-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-২৫ 
  3. "KARACHI: Frere Hall library in a state of disrepair"। Dawn। ১৯ নভেম্বর ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  4. J.W. Smyth, Gazetteer of the Province of Sind B Vol 1 Karachi District, Government Central Press, Bombay 1919. Reprinted by Pakistan Herald Publications (Pvt) Ltd, Karachi Pg 70
  5. Gazetteer of the Bombay Presidency: Sátára। Government Central Press। ১৮৮৫। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  6. Downey, Jake (২০০৩)। Better Badminton for All। Pelham Books। পৃষ্ঠা ১৩। আইএসবিএন 0720702283 
  7. Shaikh, Sadeem (২৯ অক্টোবর ২০১৫)। "Frere Hall, a Hundred and Fifty Years Later"। Youlin Magazine। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  8. "Heritage.....A marvellous piece of architecture"e.thenews.com.pk। ২০১৬-০৫-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-২৫ 
  9. "Sadequain's mural at Frere Hall lies ignored"। Express Tribune। ১ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  10. Shaikh, Sadeem (২৯ অক্টোবর ২০১৫)। "Frere Hall, a Hundred and Fifty Years Later"। Youlin Magazine। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  11. "Car bomb at US consulate in Karachi"Mail Online। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-২৫ 
  12. "'Illegal' permission for yet another commercial activity at Frere Hall"। The Express Tribune। ১৮ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৭ 
  13. "Architecture of Frere Hall Karachi"Youlin Magazine। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-২৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা