প্রিয়রঞ্জন সেন ( ২৫ জানুয়ারি ১৮৯৩ - ১১ ডিসেম্বর ১৯৬৭) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি অধ্যাপক, লেখক ও অনুবাদক।[১] গান্ধীবাদী কংগ্রেস কর্মী হিসাবে তিনি ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কারারুদ্ধ ছিলেন। সমাজ সেবায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী লাভ করেন। [২]

প্রিয়রঞ্জন সেন
জন্ম(১৮৯৩-০১-২৫)২৫ জানুয়ারি ১৮৯৩
কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১১ ডিসেম্বর ১৯৬৭(1967-12-11) (বয়স ৭৪)
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত
পেশাঅধ্যাপনা
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৩-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৬৭)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারপদ্মশ্রী (১৯৬৭)
দাম্পত্যসঙ্গীস্বর্ণপ্রভা সেন
সন্তানমিহির সেন
সুবীর সেন (পুত্র)

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

অধ্যপক প্রিয়রঞ্জন সেনের জন্ম ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অধুনা পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। পিতার নাম প্রসন্নকুমার সেন। মেধাবী ও কৃতি ছাত্র ছিলেন প্রিয়রঞ্জন। তিনি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরাজীতে প্রথম শ্রেণীতে এবং ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ পাশ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

এম.এ পাশের পর প্রিয়রঞ্জন সেন অধুনা বাংলাদেশের রংপুরের কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধীর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হন। কিছুদিন রংপুরে অতিবাহিত করার পর ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ দেন এবং বাংলা ভাষার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপকরূপে অবসর নেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে লিটারারি ওয়ার্কশপের পরিচালক হন এবং পরে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ হতে তিন বৎসর শ্রীনিকেতনে বিশ্বভারতী ইন্সটিটিউট অফ রুরাল হায়ার এডুকেশনের সঞ্চালক হিসাবে কাজ করেন।

রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনা

গান্ধীবাদী নিষ্ঠাবান কর্মী হিসাব অসহযোগ আন্দোলনভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। ১৯৪২-৪৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি দমদম জেলে বন্দি ছিলেন। মুক্তির পর তিনি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ হতে দুই দশক ধরে সমাজ সেবায় লিপ্ত থাকেন। হরিজন সেবক সঙ্ঘএর বঙ্গীয় শাখার অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে প্রিয়রঞ্জন ভারতের গণপরিষদের সদস্য হন। পরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে ১৯৫২-৫৭ খ্রিস্টাব্দের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন।

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে সমাজ সেবার কাজে অসামান্য অবদানের জন্য ভারত সরকার তাকে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী প্রদান করে। [২]

রচিত গ্রন্থসমূহ সম্পাদনা

বিদ্যালয়ে বাংলা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের সঠিক শিক্ষা পদ্ধতির দিশা প্রদানে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন বাংলা পড়ানো শীর্ষক গ্রন্থ। বাংলা ও ইংরাজীতে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা ছাড়াও বাংলায় অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট জনের রচনা ও আত্মজীবনী। তার মৃত্যুর বহু বছর পরেও সাহিত্য অকাদেমি তার অনুবাদিত বেশ কয়েকটি গ্রন্থ পুনঃপ্রকাশ করে। তার রচিত অন্যান্য ও অনুবাদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল-

  • সাহিত্য প্রসঙ্গ
  • বাংলা সাহিত্যের খসড়া (১৯৪৪);
  • বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৩১) ( সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথভাবে);
  • ওড়িয়া সাহিত্য;
  • প্রবাদ প্রবচন (১৯৫০) (গোপালদাস চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে);
  • রায় রামানন্দের ভনিতাযুক্ত পদাবলী;
  • রাজেন্দ্রপ্রসাদ আত্মকথা;
  • মানুষ আমার ভাই (২০১৯) কৃষ্ণ কৃপলনী সম্পাদিত গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ এএসআইএন B09ZTVTSB3;
  • জীবনলীলা (২০১৩) - সাহিত্য অকাদেমি (কাকাসাহেব কাললেকরের রচনার বঙ্গানুবাদ) আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২৬০৪-২১৬-৬;
  • বাণভট্টের আত্মকথা (২০১৭) - সাহিত্য অকাদেমি, (হাজারীপ্রসাদ দ্বিবেদী রচিত উপন্যাস-'বাণভট্ট কী আত্মকথা'র বঙ্গানুবাদ) আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২৬০২-০১৩-৩;
  • ওয়েস্টার্ন ইনফ্লুয়েন্স ইন বেঙ্গলি লিটারেচার(Western Influence in Bengali literature) - (১৯৬৬) অ্যাকাডেমিক পাবলিশার্স, কলকাতা;
  • ওয়েস্টার্ন ইনফ্লুয়েন্স ইন বেঙ্গলি নভেল্স - (Western influence in Bengali Novels)
  • ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল্স ইন্ডিয়ান লেটার্স -(Florence Nightingale's Indian letters) - (২০১৮) আইএসবিএন ৯৭৮-১৩-৭৯২৬-৬৬৭-৯

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৪৩৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "Padmasri Awards-1967"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-২৮