পার্সি ম্যানসেল

দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার

পার্সি নেভিল ফ্রাঙ্ক ম্যানসেল, এমবিই (ইংরেজি: Percy Mansell; জন্ম: ১৬ মার্চ, ১৯২০ - মৃত্যু: ৯ মে, ১৯৯৫) শ্রপশায়ারের সেন্ট জর্জেস এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

পার্সি ম্যানসেল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামপার্সি নেভিল ফ্রাঙ্ক ম্যানসেল
জন্ম(১৯২০-০৩-১৬)১৬ মার্চ ১৯২০
সেন্ট জর্জেস, শ্রপশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৯ মে ১৯৯৫(1995-05-09) (বয়স ৭৫)
সমারসেট ওয়েস্ট, কেপ প্রদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগ ব্রেক গুগলি
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কএজেএম ম্যানসেল (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৮৩)
২৬ জুলাই ১৯৫১ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৩ আগস্ট ১৯৫৫ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১৩ ১১৩
রানের সংখ্যা ৩৫৫ ৪৫৯৮
ব্যাটিং গড় ১৭.৭৫ ২৯.৬৬
১০০/৫০ ০/২ ৫/৩৩
সর্বোচ্চ রান ৯০ ১৫৪
বল করেছে ১৫০৬ ১৮১৭৬
উইকেট ১১ ২৯৯
বোলিং গড় ৬৬.৯০ ২৬.০৮
ইনিংসে ৫ উইকেট ২১
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৩/৫৮ ৭/৪৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৫/- ১৫৬/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৮ আগস্ট ২০২০

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে রোডেশিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। মাঝারীসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন পার্সি ম্যানসেল। আবার, কখনোবা মিডিয়াম-পেস বোলিং করতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করতেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী পার্সি ম্যানসেল নবজাতক অবস্থাতেই তৎকালীন দক্ষিণ রোডেশিয়ার বুলাওয়ে এলাকায় চলে যান। জিম্বাবুয়ের মিল্টন হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে ১৬ বছর বয়সে ট্রান্সভালের বিপক্ষে রোডেশিয়ার সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন।

১৯৩৬-৩৭ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত পার্সি ম্যানসেলের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। রোডেশিয়ার অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেট খেলার সুযোগ লাভ করেছিলেন। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি অসাধারণ ও দলের অমূল্য ছিলেন। দক্ষতা ও দম নিয়ে লেগ ব্রেক ও গুগলি বোলিং করতেন। মাঝারীসারিতে বেশ ভালোমানের ব্যাটিংশৈলী উপহার দিতেন। স্লিপ কিংবা শর্ট লেগ অঞ্চলে ফিল্ডিংয়েও নিপুণতা প্রদর্শন করতেন। উপযুক্ত পরিবেশে সিমার হিসেবেও বোলিং করতেন পার্সি ম্যানসেল।

১৯৩৬-৩৭ মৌসুমে বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থাতেই ১৬ বছর বয়সী পার্সি নেভিল ফ্রাঙ্ক ম্যানসেলের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দুই বছর বাদে বুলাওয়েতে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে ৬২ রান তুলেন। যুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবন বাঁধাগ্রস্ত হয়। তবে, যুদ্ধের পর পুনরায় খেলা শুরু হলে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ট্রান্সভালের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। বোলিংয়ে দক্ষতা আনয়ণে কিছুটা সময় ব্যয় করেন। তাসত্ত্বেও, ১৯৪৯-৫০ মৌসুমে সফররত অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে ৬/৮৯ পান। এক বছর পর ইংল্যান্ড গমনার্থে তাকে অগ্রাহ্য করা হলেও ব্যাট ও বল হাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেলেন। নর্থ ইস্ট ট্রান্সভালের বিপক্ষে খেলায় তিনি ১৬৭ রান খরচায় ১০ উইকেট লাভ করেন।

শারীরিকভাবে তিনি শীর্ণকায়, শান্ত প্রকৃতির ও চশমা পরিধান করতেন। ১৪৮ ও ১৫৪ রানের দুইটি সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন তিনি। তার এ ইনিংসের কল্যাণে ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমের কারি কাপের বি গ্রুপে গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের বিপক্ষে দুইবার ইনিংস বিজয়ে রোডেশিয়া দলকে সহায়তা করেন।[১]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তেরোটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন পার্সি ম্যানসেলের। ২৬ জুলাই, ১৯৫১ তারিখে লিডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৩ আগস্ট, ১৯৫৫ তারিখে ওভালে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৫১ ও ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে অস্ট্রালেশিয়া গমনে যান। জুলাই, ১৯৫১ সালে ইংল্যান্ড সফরে হেডিংলিতে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অল্পের জন্যে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতরান করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এ টেস্টে এরিক রোয়ান ২৩৬ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৩৮ রানের বিশাল সংগ্রহ এনে দেন। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের পিটার মে তার প্রথম টেস্ট শতরান করেন। পার্সি ম্যানসেল ৯০ রান তুললেও এগারো নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা কুয়ান ম্যাকার্থি’র সাথে জুটি গড়েন। তিনি ম্যালকম হিল্টনের বলে রয় ট্যাটারসলের হাতে মিড অন এলাকায় ক্যাচ দিয়ে বিদেয় নেন। ৪০ বছর পর ১৯৯২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ব্রিজটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যান্ড্রু হাডসন অবশেষে টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরির সন্ধান পেয়েছিলেন।

এ সংগ্রহটিই এ সফরসহ অংশগ্রহণকৃত ১৩ টেস্টে পার্সি ম্যানসেলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল। বল হাতে নিয়ে সোয়ানসীতে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৫/৩৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। খেলায় তিনি ১১০ রান খরচায় ৯ উইকেট পেয়েছিলেন। তবে, স্বর্ণালী মুহূর্ত উদ্‌যাপন করেন লর্ডসে এমসিসি’র বিপক্ষে খেলায় প্রথম বলেই ফ্রেডি ব্রাউনকে বিদেয় করার মাধ্যমে।

অস্ট্রেলিয়া গমন সম্পাদনা

দেশে ফিরে বার্ট ভগলারের পর মাত্র দ্বিতীয় অল-রাউন্ডার হিসেবে ৫০০ রান ও ৫০ উইকেট প্রাপ্তির ন্যায় ডাবল লাভ করেন। তন্মধ্যে, প্রিটোরিয়ায় নর্থ ইস্ট ট্রান্সভালের বিপক্ষে খেলায় ১০০ রান ও ১০ উইকেট লাভের ন্যায় ডাবল লাভের অধিকারী হন। পূর্ব লন্ডনে বর্ডারের বিপক্ষে খেলায় ২০৫ রান খরচায় ১৩ উইকেট লাভ তৎকালে রোডেশিয়ার সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল।

১৯৫২-৫৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। মাত্র নয়টি উইকেট লাভ করলেও শীর্ষসারির আটজন ব্যাটসম্যান তার শিকারে পরিণত হন। তন্মধ্যে, কলিন ম্যাকডোনাল্ডলিন্ডসে হ্যাসেটকে তিনবার করে বিদেয় করেছিলেন তিনি। সিরিজের পঞ্চম টেস্টে তিনি ৫২ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দেন। এরফলে, সফরকারীরা উঁচু রানের খেলায় বীরত্বপূর্ণ বিজয় লাভে সক্ষম হয় ও সিরিজে সমতা আনে।

১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে চমৎকার সময় অতিবাহিত করেন। কারি কাপে দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেন। ফলশ্রুতিতে, আবারও ইংল্যান্ড গমনার্থে তাকে দলে রাখা হয়। কিন্তু, চার টেস্টে অংশ নিয়ে খুব কমই তিনি ভূমিকা রাখেন। সিরিজ খোঁয়ায় তার দল। সবমিলিয়ে নয় ক্যাচ তালুবন্দী করেন। কয়েকটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ডারহামের বিপক্ষে ১৫৪ রানের ইনিংস খেললেও আর কোন প্রথম-শ্রেণীর শতরানের সন্ধান পাননি। কোলচেস্টারে এসেক্সের বিপক্ষে মাত্র এক রানের জন্যে শতরান করা থেকে বঞ্চিত হন। এবার তিনি ট্রেভর বেইলি’র বলে বোল্ড হন।

অবসর সম্পাদনা

রোডেশিয়ার পক্ষে খেলায় বেশ ভূমিকা রাখেন। গ্রিকুয়াল্যান্ড ওয়েস্টের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। পরের খেলায় ১৪৮ রান তুলেন। বর্ডারের বিপক্ষে খেলায় ৮৪ রান খরচায় ১১ উইকেট পান। এটিই তার তৎকালীন খেলায় সেরা সংগ্রহ ছিল। এরপর, ৬/৭ ও ৭/৪৩ পান।

১৯৫৯-৬০ মৌসুমে সারে দল রোডেশিয়া গমন করে। সলসবারিতে নিজস্ব শেষ মৌসুমে সারে দলকে দুই রানের পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সফররত দলের বিপক্ষে ৭/৪৩ লাভ করেন। এটিই তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল। ঐ খেলায় তিনি ১২০ রান খরচায় ১৩ উইকেট দখল করে দলকে নাটকীয়ভাবে দলের বিজয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন।[২]

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ইংল্যান্ড কিংবা ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবার জন্যে তাকে দলে রাখা হয়নি। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে একটি খেলায় অংশগ্রহণের পর অবসর গ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে ১১৩ খেলায় অংশ নিয়ে ২৯.৬৬ গড়ে ৪৫৯৮ ও ২৬.০৮ গড়ে ২৯৯ উইকেট পান। এছাড়াও, ১৫৬টি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ১৯৬১-৬২ মৌসুম শেষে অবসর গ্রহণকালে রোডেশিয়ার পক্ষে ৫৫বার অংশ নিয়েছিলেন। নিজস্ব ৪২তম জন্মদিন উদ্‌যাপনের পূর্বে সর্বশেষ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।[৩]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

জন্মের কয়েক মাস পরই রোডেশিয়ায় চলে যেতে বাধ্য হন। কিশোর অবস্থাতেই টেনিস খেলায় শিরোপা লাভ করেন। চীরকুমার ছিলেন। ১৯৮৫ সালে কেপ প্রদেশে চলে যান ও গল্ফ খেলায় মনোনিবেশ ঘটান। ১৯৯৪ সালে কব্জীতে বল আঘাত হানলে তা ভেঙ্গে যায় ও স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর রোডেশিয়ায় ক্রিকেট প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

১৯৬২ সালে নববর্ষের সম্মাননা হিসেবে ক্রিকেট খেলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এমবিই উপাধিতে ভূষিত হন।[৪] মারভিন ম্যানসেল নামীয় তার এক ভ্রাতা পশ্চিম লন্ডনের ইলিংয়ে বসবাস করছেন। ৯ মে, ১৯৯৫ তারিখে ৭৫ বছর বয়সে কেপ প্রদেশের সমারসেট ওয়েস্ট এলাকায় পার্সি ম্যানসেলের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wisden 1957, pp. 874-75.
  2. "Rhodesia v Surrey 1959-60" । CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৮ 
  3. Jonty Winch (১৯৮৩), Cricket's Rich Heritage: A History of Rhodesian and Zimbabwean Cricket 1890-1982, Bulawayo: Books of Zimbabwe, পৃষ্ঠা 220 
  4. Supplement to the London Gazette, 1 January 1962, p. 23.

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা