পাতাঠুঁটি ধনেশ

পাখি প্রজাতি

পাতাঠুঁটি ধনেশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Rhyticeros undulatus) বা মালাপরা ধনেশ Bucerotidae (বিউসেরোটিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Rhyticeros (রাইটিসেরোস) গণের এক প্রজাতির বড় আকারের ধনেশ[১][২] পাখিটি দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়। পাতাঠুঁটি ধনেশের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ ঢেউ-খেলানো শিঙ (গ্রিক rutis = রেখা, akeros = শিঙ; ল্যাটিন: undulates = ঢেউ খেলানো)।[২] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৩২ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৩] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. ২০০৪ সালে এ প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৪] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২] এরা একপ্রজাতিক, অর্থাৎ কোন উপপ্রজাতি নেই।

পাতাঠুঁটি ধনেশ
Rhyticeros undulatus
পুরুষ পাতাঠুঁটি ধনেশ, ফ্রান্স
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Coraciiformes
পরিবার: Bucerotidae
গণ: Rhyticeros
প্রজাতি: R. undulatus
দ্বিপদী নাম
Rhyticeros undulatus
(, ১৮১১)
প্রতিশব্দ

Aceros undulatus
Buceros undulatus

বিস্তৃতি সম্পাদনা

বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও ভুটান, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, থাইল্যান্ডভিয়েতনামে নিয়মিত এদের দেখা যায়। এসব দেশে এরা স্থায়ী পাখি।[৪]

বিবরণ সম্পাদনা

পাতাঠুঁটি ধনেশ বিশাল ঠোঁটবিশিষ্ট বড় আকারের বৃক্ষচর পখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৮০ সেন্টিমিটার, ডানা ৪৮ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১৯.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ১৪ সেন্টিমিটার ও পা ৬.৫ সেন্টিমিটার।[২] পুরুষজাতীয় পাতাঠুঁটি ধনেশের ওজন ১.৮ কেজি (৪ পাউন্ড) থেকে ৩.৬৫ কেজি (৮ পাউন্ড) হয়। অন্যদিকে, স্ত্রীজাতীয় পাতাঠুঁটি ধনেশের ওজন ১.৩৬ কেজি (৩ পাউন্ড) থেকে ২.৭ কেজি (৬ পাউন্ড) হয়ে থাকে।[৫]

স্ত্রী ও পুরুষ ধনেশের চেহারায় কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ পাখির মাথার চাঁদি ও ঘাড় লালচে। মাথার পাশ সাদাটে। ঘাড়ের উপরিভাগ পীতাভ-সাদা। ঠোঁট উজ্জ্বল হলুদ রঙের। ঠোঁটের নিচে উজ্জ্বল হলুদ রঙের থলে থাকে এবং থলেতে আড়াআড়ি কালো ডোরা দেখা যায়। সাদা লেজ ছাড়া দেহের বাকি অংশ চকচকে কালো। চোখ রক্তলাল ও চোখের পাশের চামড়া ইটের মত লাল। ঠোঁটের গোড়া অনুজ্জ্বল গোলাপি ও কালচে-লাল ঢেউ খেলানো। স্ত্রী ধনেশের ঘাড় ও মাথা কালো। ঠোঁটের নিচের থলের রঙ নীল বা সবুজাভ। চোখ বাদামি বা ধূসর-বাদামি। ঠোঁট লালচে-হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ ধনেশ উভয়ের পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ বা কালচে-স্লেট রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক ধনেশের চোখ ফিকে নীল ও ঠোঁট ঢেউহীন। এছাড়া বাকিসব পুরুষ পাখির মত।[২]

স্বভাব সম্পাদনা

পাতাঠুঁটি ধনেশ চিরসবুজ বনের কিনারায় বিচরণ করে। জোড়ায় বা ছোট দলে দেখা যায়। খাদ্যের জন্য এরা ফলদ গাছের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসালো ফল; কখনও কখনও ছোট সরীসৃপ ও ছোট প্রাণী খেয়ে থাকে। গাছ থেকে গাছে ওড়ার সময় এরা ডাকে: উক্-হয়িক....[২]

প্রজনন সম্পাদনা

এপ্রিল থেকে মে এদের প্রজনন ঋতু। পূর্বরাগে পুরুষ পাখি লেজ ওঠানামা করে, ঠোঁট নাড়িয়ে ও কর্কশ গলায় ডেকে স্ত্রী ধনেশের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করে। বনের উঁচু গাছের কোটরে এরা বাসা করে। স্ত্রী ধনেশ ২টি সাদা ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ৬.৩ × ৪.২ সেমি।[২] ডিম পাড়া শুরু হলে পুরুষ কাদার প্রবেশ পথ সরু করে ফেলে। অন্যসব ধনেশের মত স্ত্রী ধনেশ কোটরে বন্দী থেকে ডিমে তা দেয় ও পুরুষ ধনেশ বাইরে থেকে ঐ সরু পথে খাবারের জোগান দেয়। ছানা বড় না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী ধনেশ বাসার ভেতরে থাকে। ছানা বড় হলে সে ঠোঁট দিয়ে কাদার প্রলেপ ভেঙে বেরিয়ে আসে।

গ্যালারী চিত্র সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৬২।
  2. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৬৫।
  3. Aceros undulatus ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে, BirdLife International এ পাতাঠুঁটি ধনেশ বিষয়ক পাতা।
  4. Aceros undulatus ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে, The IUCN Red List of Threatened Species এ পাতাঠুঁটি ধনেশ বিষয়ক পাতা।
  5. "Oakland Zoo"। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১২