পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড়

চণ্ডীগড়ে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের চণ্ডীগড়ে অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।[৩] ১৮৮২ সালে লাহোরে এটি ইউনিভার্সিটি অফ পাঞ্জাব নামে প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতপাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয় এবং সেই বছরে ভারতের পাঞ্জাবে, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় নামে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সীল
বাংলায় নীতিবাক্য
অন্ধকার থেকে আলোতে আমাদের নেতৃত্ব
ধরনসরকারি
স্থাপিত১৯৪৭
আচার্যমাননীয় ভারতের উপরাষ্ট্রপতি
উপাচার্যঅধ্যাপক রাজ কুমার[১]
শিক্ষার্থী১৭,০০০ (অধিভুক্ত কলেজ সহ ২,৫০,০০০+)[২]
অবস্থান
শিক্ষাঙ্গননগর
অধিভুক্তিইউজিসি, ন্যাক, এআইইউ
ওয়েবসাইটpuchd.ac.in

চণ্ডীগড়ে অবস্থিত মূল ক্যাম্পাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭৮ টি শিক্ষণ ও গবেষণা বিভাগ এবং অধ্যাপনা ও গবেষণার জন্য ১৫ টি কেন্দ্র রয়েছে। পাঞ্জাব রাজ্যের আটটি জেলা এবং চণ্ডীগড়ের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৮৮ টি অনুমোদিত কলেজ রয়েছে, পাঞ্জাব রাজ্যের মুক্তসার, লুধিয়ানা এবং হোশিয়ারপুর শহরে আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে।[৪][৫] এটি ভারতের সর্বাধিক উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি।[৬]

ক্যাম্পাসটি আবাসিক এবং এটি চণ্ডীগড় শহরের ১৪ ও ২৫ সেক্টরের ৫৫০ একর (২.২ বর্গ কিমি) জুড়ে রয়েছে। প্রধান প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স, ছাত্রাবাস এবং আবাসিক আবাসনের পাশে ১৪ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।[৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

 
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের ১৯৮৯ সালের ডাক টিকিটে প্রদর্শিত হয়।

চণ্ডীগড়ের বর্তমান পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়টির শিকড় ১৮৮৪ সালের ১৪ ই অক্টোবর লাহোরে (বর্তমানে পাঞ্জাবের পাকিস্তানে) প্রতিষ্ঠিত পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে যুক্ত। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেশিরভাগ কলেজ বর্তমান ব্রিটিশ ভারতের ভারতীয় অংশে ছিল।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পরে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভারতীয় পাঞ্জাব এবং পাকিস্তানি পাঞ্জাবের জন্য দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত/স্থানান্তরিত হয়। দু'টি দেশের এক নামের বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করার জন্য, ভারতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি নামের বানানটি পরিবর্তন করা হয় (Punjab থেকে Panjab)। ১৯৪৭ সালের পরে[৮] প্রায় এক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনও ক্যাম্পাস ছিল না। প্রশাসনিক অফিস ছিল সোলানে এবং শিক্ষা বিভাগগুলি হোশিয়ারপুর, জলন্ধর, দিল্লি এবং অমৃতসর থেকে পরিচালিত হত।

১৯৫৬ সালে লে করবুসিয়ারের নির্দেশনায় পিয়েরে জ্যানেরেটের নকশায় লাল বালি পাথরের দ্বারা চণ্ডীগড়ে নির্মিত ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাবের পুনর্গঠন অবধি বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্র রোহটক, সিমলা, জলন্ধর শহরে ছিল এবং এর অধিভুক্ত কলেজগুলি পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ে ছিল। পাঞ্জাবের পুনর্গঠনের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়টি সদ্য সংগঠিত রাজ্য পাঞ্জাব এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ে একটি আন্তঃরাজ্য সংস্থায় পরিণত হয়।

বিদ্যায়তন সম্পাদনা

সুইস-ফরাসি স্থপতি পিয়েরে জ্যানেরেট দ্বারা রচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের চেকারবোর্ড বিন্যাসটি ভারতে বিদ্যায়তনের নকশার পথিকৃৎ ছিল।

চণ্ডীগড়ের প্রধান বিদ্যায়তনটি সেক্টর ১৪ এবং সেক্টর ২৫ -এর ৫৫০ একর জুড়ে বিস্তৃত, পাঠদানের অঞ্চলটি উত্তর-পূর্বে রয়েছে, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, চারুকলা যাদুঘর এবং গান্ধী ভবনের ত্রি-বিভাগীয় কাঠামোটি এর কেন্দ্র তৈরি করে; ক্রীড়া কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শিক্ষার্থী কেন্দ্র এবং বিক্রয় কেন্দ্র মাঝখানে অবস্থিত; দক্ষিণ-পূর্বের ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস এবং আবাসিক অঞ্চল, এটি সংলগ্ন সেক্টর ২৫ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট এবং ডক্টর হরবংশ সিং জজ ইনস্টিটিউট অফ ডেন্টাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, ইউআইএএমএস, জীববিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি রয়েছে।

বিদ্যায়তনে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শাখা, পোস্ট ও সম্পর্ক, গণপরিবহন ব্যবস্থা, ওপেন-এয়ার থিয়েটার, অতিথি এবং অনুষদ কক্ষ, সেমিনার কমপ্লেক্স, কর্মীদের ক্লাব, বেশ কয়েকটি প্রশস্ত লন, উদ্ভিদবিদ্যাসংক্রান্ত ও ঔষধি ভেষজ উদ্যান, একটি নতুন গোলাপ বাগান, উদ্যান কর্মচারীদের বাচ্চাদের জন্য একটি বিদ্যালয় এবং একটি দিবা যত্ন কেন্দ্রের (ডে-কেয়ার সেন্টার) মতো সুবিধাসমূহ রয়েছে। বিদ্যায়তনটি চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার স্নাতকোত্তর প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত।

আবাসিক ভবন সম্পাদনা

বিদ্যায়তনে পুরুষদের জন্য আটটি ছাত্রাবাস এবং একটি ওয়ার্কিং মহিলা আবাসিক ভবন'সহ এগারোটি মহিলা আবাসিক ভবন'সহ আঠারোটি ছাত্রাবাস রয়েছে। একটি ক্রীড়া ছাত্রাবাস অনাবাসিক ক্রীড়া দলের জন্য নির্মিত হয়েছে। আরও দুটি ছাত্রাবাস নির্মাণাধীন, ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি করে।

সমস্ত হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট এবং একাধিক মেস রয়েছে। বিদ্যায়তনে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের জন্য বিক্রয়কেন্দ্র এবং এটিএম রয়েছে। ডিন, ছাত্র কল্যাণ এবং ডিন ছাত্র কল্যাণ (মহিলা) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসগুলির কার্যকারিতা, ছাত্র সংস্থাগুলির নির্বাচন পরিচালনা, বিদ্যায়তনে সাংস্কৃতিক ও অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা এবং সংগঠিত করে। তারা সাংস্কৃতিক বৃত্তি এবং বিদ্যায়তনে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা বিতরণ করে।

স্বাস্থ্য সেবা সম্পাদনা

বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরামর্শ, চিকিৎসাগত এবং জরুরী পরিষেবা প্রদান করে। একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, একজন অস্ত্রোপচার বিশেষজ্ঞ এবং একজন দাঁতের বিশেষজ্ঞ'সহ পাঁচ জন পূর্ণকালীন চিকিৎসক রয়েছেন। অস্থায়ী পরামর্শদাতাদের মধ্যে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার এবং দু'জন সাধারণ চিকিৎসক নিযুক্ত রয়েছে। এগুলি এক বৃহৎ প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের দ্বারা সমর্থিত।

নিয়মিত পরামর্শ, ওষুধ এবং জরুরী মনোযোগের পাশাপাশি, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাগত পরীক্ষা, ইসিজি, এক্স-রে, অতিস্বনক চিকিৎসা, ডায়াথার্মি এবং যোগাসনের মতো সুবিধাগুলি রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা, ভ্যাকসিন এবং শিশুদের টিকাদানের সুবিধা (ডিপিটি, পোলিও এবং বিসিজি) সহ একটি পরিবার কল্যাণ চিকিৎসা কেন্দ্র পরিচালনা করা হয়। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সময়ে সময়ে বক্তৃতা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন এবং কর্মশালার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতার কার্যক্রম চালু করে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "New Vice-Chancellor of Punjab University Professor Raj Kumar takes charge"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৭-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৬ 
  2. http://puchd.ac.in/vc-address/PU_VC_Vigyan%20Bhawan-MHRD-UGC-AICTE_December%206,%202014.pdf
  3. "Chandigarh's Sector 14: A long way from Lahore"hindustan times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৭-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৬ 
  4. Service, Tribune News (২৬ আগস্ট ২০১৫)। "3,872 appear for LLB entrance at PU"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৫ 
  5. "Affiliated Colleges of PU"। puchd.ac.in 
  6. Joshua, Anita (২০১৩-১২-০৫)। "Panjab University overtakes IITs, JNU in ranking"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-৩১ 
  7. Vibhor MohanVibhor Mohan, TNN (১৫ জুলাই ২০১৩)। "'Preserve Chandigarh's rich urban and architectural legacy'"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০১৫ 
  8. "UGC State Universities" (পিডিএফ)। University Grants Commission। ২৭ মে ২০১১। ১৫ মে ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা