নিরুপমা হাগজের
নিরুপমা হাগজের আসামের ডিমা হাসাও জেলার ডিমাসা সম্প্রদায়ের একজন সমাজকর্মী। সারা জীবন তিনি সমাজে পিছিয়ে পড়া নারী ও শিশুদের উন্নয়ন এবং শিক্ষার প্রসারের জন্য কাজ করেছেন।[১] যেহেতু ডিমাসার নিজস্ব লিপি নেই; তাই তিনি অসমীয়া বর্ণমালাতে ডিমাসা ভাষা রচনা করেন এবং ভাষার প্রসারে কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি অসমীয়া লিপিতে অসমীয়া এবং ডিমাসা বইতে বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। তখন নিরুপমা হাগজের নাম ছিলো নিরুপমা হাসেনসা।[২]
নিরুপমা হাগজের | |
---|---|
জন্ম | নিরুপমা হাগজের ১৪ এপ্ৰিল, ১৯২৮ সাল বিজয়পুর, কাছাড় জেলা |
মৃত্যু | ১১ জুলাই, ২০১১ |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | বিলাসমণি প্ৰাথমিক বিদ্যালয় |
পেশা | সমাজকৰ্মী, সাহিত্যিক |
দাম্পত্য সঙ্গী | জয়ভদ্ৰ হাগজের |
সন্তান | পুত্ৰ-৩, কন্যা-৩ |
পিতা-মাতা | রজেন্দ্ৰ হাছেনছা (পিতা) নিরধনী বৰ্মন (মাতা) |
জন্ম ও শৈশব সম্পাদনা
নিরুপমা হাগজের ১৪ এপ্রিল ১৯২৮ সালে কাছাড় জেলার বিজয়পুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রাজেন্দ্র হাসেনসা এবং মাতার নাম নিরধনী বৰ্মন। তিনি বিলাসমণি গার্লস স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং সেখান থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। মহিলাদের জন্য যথাযথ শিক্ষার অভাবে তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। বিয়ের অনেক বছর পর, তিনি তার প্রথম সন্তানের সাথে দুই বছর বয়সে প্রাইভেটভাবে মিডল ইংলিশ লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৭১ সালে তার কনিষ্ঠ পুত্র নিরুপমা হাগজার হিসাবে একই বছর প্রাইভেটভাবে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।[৩][১]
পারিবারিক জীবন সম্পাদনা
তিনি ১৯৫০ সালের ৬ জুন হাফলং, ডিমা হাসাও জেলার জয়ভদ্র হাগজের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জয়ভদ্র হাগজের একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং তিনি বিমলা প্রসাদ চালিহা মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাদের তিন মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে।
কর্মজীবন সম্পাদনা
শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদিতে অবদান রেখেছেন তিনি। তার পিতার ইজারা নেওয়া একশ বিঘারও বেশি জমিতে ডিমাসার ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ছাত্রাবাস ও ডিমাসা সাংস্কৃতিক ভবন নির্মাণের জন্য দান করেছিলেন। দূর থেকে শিক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধার্থে ছাত্রাবাস নির্মাণ করেন। ছাত্রবাসের নাম ছিল রাজেন্দ্র নারায়ণ হাসেনসা ছাত্রাবাস।[১] তিনি রাজ্য সমাজকল্যাণ বোর্ড, রাষ্ট্রীয় সংহতি পরিষদ, আসাম প্রকাশনা পরিষদ, আসাম খাদি বোর্ডের সদস্য এবং অসম সাহিত্য সভার আজীবন সদস্য ছিলেন।
সাহিত্যজীবন সম্পাদনা
নিরুপমা হাগজের অনেক গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ডিমাসা জনগণের অতীত ও বর্তমান, ডিমাসা জনগণের ইতিহাসের পরিচিতি, ডিমাসা সম্প্রদায়ের উৎসব, ডিমাসা সম্প্রদায়ের ধর্ম ও বিশ্বাস, নামঘর এবং ডিমাসা সম্প্রদায় ইত্যাদি। আসামে 'মাধ্যম আন্দোলন' চলাকালীন আসাম বাণী পত্রিকায় 'শিক্ষার মাধ্যম এবং বড়-ডিমাসা' শিরোনামে একটি নিবন্ধে কাছাড় ও উত্তর কাছার ডিমাসদের অসমিয়া মাধ্যমকে গ্রহণ করা উচিত বলে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাজনীতিতে অংশ নেননি নিরুপমা হাগজের “আমি রাজনীতির অস্থিরতা পছন্দ করি না আমি গান্ধীজীর জাতীয় কংগ্রেসকে সালাম জানাই, কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি আমার কোনো আস্থা নেই আমি কিছুদিন রাজনীতিতে গিয়ে অভিজ্ঞতা পেয়েছি যে রাজনীতিতে বড় বড় কাজ করতে অনেক বাধা থাকে তাই যতটা সম্ভব সামাজিক কাজ চালিয়ে যাওয়াই আমার উদ্দেশ্য আমার লক্ষ্য সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখা।[৪]
- ডিমাসা ভাষা শিক্ষা (বাংলা ভাষা) ১৯৭২;
- ডিমাসা সংস্কৃতি (অসমীয়া ভাষা);
- ডিমাসা অ আ ক খ (অসমীয়া লিপি ব্যবহার শিক্ষা),
- হাগজের ছেংফং (ডিমাসা ভাষা অসমীয়া লিপি);
- মাইরং ফাছাইডি খাছেবা জুলু (ডিমাছা ভাষা অসমীয়া লিপি);
- ডিমাসা সাধু কথা ( অসমীয়া ভাষা);
- ডিমাসা গ্ৰাউরেণ (ডিমাসা ভাষার অভিধান-অসমীয়া ভাষা) ইত্যাদি[৫] প্রধান প্রায় দশ হাজার শব্দের 'ডিমাসা গ্রাউরেন' (ডিমাসা-অসমিয়া অভিধান) নিরুপমা হাগজের একক প্রচেষ্টার একটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম।[৬] তিনি আসামের বিভিন্ন পত্রিকা ও স্মৃতিকথায় প্রবন্ধও লিখেছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা
- তিনি অসম সাহিত্য সভা কর্তৃক কালাগুরু বিষ্ণু প্রসাদ রাভা পুরস্কার (২০০৪) ভূষিত হন।
- আসাম লেখক সম্মেলন নির্মল প্রভা বারদোলোই পুরস্কার (২০০৬),
- ফুলচাঁদ খান্ডেওয়াল অগ্রবাল পুরস্কার,
- তিনি ডিমাসা সাহিত্য সভা কর্তৃক যতীন্দ্রলাল থাওচেন পুরস্কারে ভূষিত হন,
- তিনি অসাম সরকারের সাহিত্য পেনশনেও ভূষিত হন।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ ক খ গ অজন্তা কলিতা। "বিদূষী মহিলা : নিরুপমা হাগজের"। বাৰ্তা, অসম সাহিত্য সভা। অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ ডিমাছা জনগোষ্ঠীৰ মাতৃস্বরূপা নিরুপমা হাগজের, গোপাল থাউচেন, অসমীয়া প্ৰতিদিন, ১২-০৭-২০১১
- ↑ নিরুপমা হাগজের বাইদেউর স্মৃতিত, উপেন্দ্ৰ বরকটকী, আমার অসম, ২৩-০৭-২০১১
- ↑ নিরুপমা হাগজের বাইদেউৰ স্মৃতিত, উপেন্দ্ৰ বরকটকী, আমার অসমর, ২৩-০৭-২০১১
- ↑ ডিমাছা গ্ৰাউৰেণ (২০০৫)। লেখক পৰিচয়।
- ↑ হোমেন বৰগোহাঞি, Rmaokhlimlai, সোঁৱৰণি গ্ৰন্থ, ২০১১