নাজিরাবাজার

ঢাকার শহরতলি

নাজিরাবাজার ঢাকার একটি শহরতলি। এটি শহরের পুরানো অংশে অবস্থিত। এখানে অনেক জুতার কারখানা আছে। এই জায়গাটি রেস্তোরাঁ ও খাবারের জন্যও বিখ্যাত। কাজী আলাউদ্দিন সড়ক, বংশাল, ফ্রান্স সড়ক এলাকা নিয়ে নাজিরাবাজার এলাকা গঠিত।[১] গুলিস্তানের সামনে বঙ্গবাজার এলাকা থেকে নাজিরাবাজার একটু হাঁটলেই নাজিরাবাজার যাওয়া যায়।[২]

নাজিরাবাজার
শহরতলি
নাজিরাবাজার ঢাকা-এ অবস্থিত
নাজিরাবাজার
নাজিরাবাজার
স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৩′১০″ উত্তর ৯০°২৪′২৬″ পূর্ব / ২৩.৭১৯৫০৬৩° উত্তর ৯০.৪০৭৩৫৫৮° পূর্ব / 23.7195063; 90.4073558
দেশবাংলাদেশ
জেলাঢাকা
অঞ্চলপুরান ঢাকা

ইতিহাস সম্পাদনা

কথিত রয়েছে যে, মুঘল আমলে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নাজিররা ঢাকায় বসবাস করতেন। নাজিরারা যে এলাকায় বসবাস করতেন সেখানে বাজারটি তৈরি করা হয়েছিল বলে বাজারটিকে নাজিরাবাজার বলা হয়।[২]

১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করে এবং একটি গভর্নরের শাসন জারি করার পর শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হলে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব নাজিরাবাজারের একটি বাড়িতে উঠেন।[৩]

বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ২০১৯ সালে নাজিরাবাজারের বিরিয়ানির স্বাদ নিতে এসেছিলেন। সেখানের বিরিয়ানি খেয়ে তিনি এর প্রশংসা করেন।[২]

রেস্তোরাঁ সম্পাদনা

নাজিরাবাজার এলাকায় খাবারের দোকানগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এলাকাটি ভোজন রসিকদের কাছে জনপ্রিয়।[২] কাজী আলাউদ্দিন রোড ধরে হাঁটার সময় রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন খাবারের স্টল। কিছু দূরে নাজিরাবাজার মোড়। এই মোড়কে ঘিরেই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের দোকান। বিরিয়ানি থেকে চপ, কাবাব, গরুর ভুঁড়ি ভাজা, মিষ্টি, বাকরখানি[৪] এবং আরও অনেক কিছু সেখানে পাওয়া যায়।[৫] নাজিরা বাজারে হাজির বিরিয়ানি, নান্না বিরিয়ানি, মামুন বিরিয়ানি ও হানিফ বিরিয়ানির দোকান রয়েছে।[৫][৬] নাজিরাবাজারের বিউটি লাচ্ছি ও ফালুদার দোকান সারাদেশে জনপ্রিয়। তারা লস্যি, ফালুদা ও বিউটি শরবত বিক্রি করে।[৫][৭] নাজিরাবাজার মোড়ের ঠিক পাশেই রয়েছে জনপ্রিয় দোকান বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর। বিভিন্ন কাবাব ছাড়াও এই দোকানের বিশেষত্ব হল তাদের খাসির গুরদা।[৫] নাজিরাবাজারের আরেকটি বিখ্যাত রেস্তোরাঁ বুখারি রেস্তোরাঁ চপ ও নানের জন্য উল্লেখযোগ্য। তাদের বিশেষ খাদ্য হল চিকেন ভেজিটেবল চপের সাথে তিন ধরনের নান।[৮] নাজিরাবাজারের আগাসাদেক সড়ক ও কাজী আলাউদ্দিন সড়কের পানের দোকানে আগুন পান বিক্রি হয়।[৯] নাজিরাবাজারে মাঠার দোকানে সকালের মাঠা-ছানা বিক্রি হয় যা পুরান ঢাকার আরেকটি বিখ্যাত জিনিস।[১০]

২০২১-এর অগ্নিকাণ্ড সম্পাদনা

২০২১ সালের ডিসেম্বরে নাজিরাবাজারের সুরুজ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় একটি জুতার কারখানায় আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. রহমান, আদনান (২৭ নভেম্বর ২০২১)। "সারা রাত জেগে থাকে ঢাকার যে সড়কটি"ঢাকা পোস্ট 
  2. আমিনুল ইসলাম নাবিল (১০ ডিসেম্বর ২০২১)। "পুরো শহর ঘুমিয়ে গেলেও জেগে থাকে নাজিরাবাজার"আজকের পত্রিকা 
  3. "নাজিরাবাজার লেনে বঙ্গমাতার সংসার"কালের কণ্ঠ। ১৪ আগস্ট ২০২০। 
  4. "পথের ধারের খাবার..."সমকাল। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮। 
  5. অভি, সাদ্দিফ (২ নভেম্বর ২০১৬)। "নাজিরাবাজারে ভোজনবিলাস!"বাংলা ট্রিবিউন। ৯ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০২২ 
  6. ইসলাম, শরিফুল (৬ জানুয়ারি ২০১১)। "রাতদুপুরে, খাবারের টানে"banglanews24.com 
  7. "Cold drinks of Old Dhaka: The simple pleasures of life"ডেইলি সান (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ এপ্রিল ২০১৬। 
  8. হাসান, মেহেদী (৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। "চাপ মানেই বোখারী! আর সঙ্গে সকালের ঝোল পোলাও"দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা 
  9. রহমান, সাদিকুর (১১ অক্টোবর ২০১৮)। "পুরান ঢাকায় 'আগুন পান'"প্রথম আলো 
  10. মমতাজি, মাহবুব (১৩ এপ্রিল ২০১৯)। "পুরান ঢাকার খাদ্যবিলাস"বাংলাদেশ প্রতিদিন 
  11. "পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে"দৈনিক আমাদের সময়। ১৮ ডিসেম্বর ২০২১।