নাইয়ারা নূর

পাকিস্তানী গায়িকা

নাইয়ারা নূর ( উর্দু: نیرہ نور‎‎, ৩ রা নভেম্বর ১৯৫০- ২০শে আগস্ট ২০২২) একজন পাকিস্তানি প্লেব্যাক গায়িকা ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা হিসেবে সুপরিচিত। তিনি পাকিস্তানি টিভি শো এবং সারা দেশে গানের কনসার্টে লাইভ গজল গান গাওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন। নাইয়ারার কণ্ঠে জাতীয় গান " ওয়াতন কি মাটি গওয়াহ রেহনা " পাকিস্তানে বিখ্যাত।[১][২]

নাইয়ারা নূর
জন্ম(১৯৫০-১১-০৩)৩ নভেম্বর ১৯৫০
মৃত্যু২০ আগস্ট ২০২২(2022-08-20) (বয়স ৭১)
করাচি, সিন্ধ, পাকিস্তান
জাতীয়তাপাকিস্তানি
পেশাপ্লেব্যাক গায়িকা
কর্মজীবন১৯৭১–২০১২
পরিচিতির কারণগজল গাওয়া
উপাধিবুলবুল-ই-পাকিস্তান
পুরস্কার

জীবনের প্রথমার্ধ সম্পাদনা

নাইয়ারা নূর ১৯৫০ সালের ৩ নভেম্বর আসামের গুয়াহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার এবং পূর্বপুরুষরা বণিক শ্রেণীর অন্তর্গত ছিলেন।[৩] তার বাবা ছিলেন সর্ব-ভারতীয় মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় সদস্য এবং ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে আসাম সফরের সময় পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে আতিথ্য করেছিলেন।

১৯৫৭ বা ১৯৫৮ সালে নাইয়ারা তার মা এবং ভাইবোনদের সাথে ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন এবং করাচিতে তারা তাদের নতুন বসতি স্থাপন করেন। তার বাবা পরিবারের স্থাবর সম্পত্তি দেখাশোনা করার জন্য ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আসামে অবপ্সথান করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

শৈশবে নাইয়ারা কানন দেবী এবং কমলার ভজন এবং সেইসাথে বেগম আখতারের গজল এবং ঠুমরি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।[৩] নাইয়ারার কোন আনুষ্ঠানিক সঙ্গীতের ব্যাকগ্রাউন্ড বা আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। ১৯৬৮ সালে লাহোরের ন্যাশনাল কলেজ অফ আর্টসে একটি বার্ষিক ডিনারে নাইয়ারা তার বন্ধু এবং শিক্ষকদের জন্য ঝনক ঝনক পায়েল বাজে -এর লতা মঙ্গেশকরের ভজন "জো তুম টো পিয়া" গানটি গান। লাহোরের ইসলামিয়া কলেজে অধ্যাপক আসরার আহমেদ এ গান শুনে সঙ্গীতে তার প্রতিভা আবিষ্কার করেছিলেন। এর পরপরই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিও পাকিস্তান অনুষ্ঠানের জন্য গান গাইতে বলা হয়।[৩]

১৯৭১ সালে নাইয়ারা পাকিস্তানি টেলিভিশন সিরিয়ালে গানের মাধ্যমে জনসম্মুখে আত্মপ্রকাশ করেন। তারপর ঘরানা (.১৯৭৩) এবং তানসেনের মতো চলচ্চিত্র সঙ্গীতে দিয়ে তার পথচলা শুরু করেন। তিনি মির্জা গালিব এবং ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের মতো বিখ্যাত কবিদের লেখা এবং মেহেদি হাসান এবং আহমেদ রুশদির মতো কিংবদন্তিদের সাথে গান গাইতেন যা বিভিন্ন উর্দু গীতিকবিতার একটি রূপ।[৩]

২০১২ সালে নাইয়ারা নূর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি আর পেশাদারভাবে গান করবেন না। তার বিয়ের পরে তিনি একজন স্ত্রী এবং একজন মায়ের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হন। তিনি বলেছিলেন যে সংগীত তার একটি আবেগ ছিল তবে কখনোই তার শীর্ষ অগ্রাধিকার ছিল না।

নাইয়ারা বিভিন্ন মাহফিল এবং মুশায়রাতে পারফর্ম করেন যা পাকিস্তান ও ভারতে গজল প্রেমীদের মধ্যে তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। সম্ভবত তার সবচেয়ে বিখ্যাত গজলটি ছিল বেহজাদ লক্ষনভির লেখা "এ জজবা-ই-দিল গার মে চাহুন "। এই গজলের জন্য তিনি পরে অনেক পুরস্কার জিতেছেন।[২]

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি সম্পাদনা

বছর পুরস্কার শ্রেণী ফলাফল কাজ রেফ.
১৯৭৩ নিগার পুরস্কার সেরা মহিলা প্লেব্যাক গায়িকা বিজয়ী ঘরানা (চলচ্চিত্র) [৪]
২০০৬ প্রাইড অফ পারফরম্যান্স কলা বিজয়ী লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট [৫]
  • বার্ষিক অল পাকিস্তান মিউজিক কনফারেন্সে তিনি তিনটি স্বর্ণপদক পুরস্কার লাভ করেন।[৬]

গান সম্পাদনা

নন-ফিল্মি গান/গজল সম্পাদনা

তিনি ছিলেন বহুমুখী গায়িকা। তার গাওয়া কিছু গজল নিচে দেওয়া হল:[২]

গানের শিরোনাম গানের কথা দ্বারা সঙ্গীত
" ওহ জো হাম মে তুম মে কারার থা তুমহেঁ ইয়াদ হো কে না ইয়াদ হো" মমিন খান মমিন[৩]
" রং বরসাত নয় ভরায় কুছ তোউ " নাসির কাজমি
" ফির সাওয়ান রুথ কি পবন চালি তুম ইয়াদ অ্যাই " নাসির কাজমী[৭]
" আয়ে ইশক হামায় বারবাদ না কর " আখতার শিরানী খলিল আহমেদ[৩][২]
" বরখা বারসে ছট পার, মে তেরে সপ্নে দেইখুন " ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ[৩][৮]
"কভি হাম ভি খুবসোরাত থায়" আহমেদ শামীম; পিটিভি নাটক সিরিজ তিসরা কিনারার জন্য[২]
"জলয় তৌ জ্বালাও গোরি" ইবনে-ই-ইনশা[২]

চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য গান সম্পাদনা

গানের শিরোনাম গানের কথা দ্বারা সঙ্গীত চলচ্চিত্র এবং বছর
"তেরা সায়া জাহান ভি হো সাজানা, পালকাইন বিছা দুন" কলিম উসমানী এম আশরাফ[৩] ঘরানা (১৯৭৩)
"আজ গম হ্যায় তো কেয়া, ওহ দিন ভি জারুর আয়েগা, জব তেরা গম খুশি মে বাদল যায়েগা"[২] খাজা পারভেজ কামাল আহমদ মাস্তানা (১৯৭৩)
"রুথায় হো তুম, তুমকো কয়সে মনউন পিয়া, বোলো না" তসলিম ফজলী রবিন ঘোষ[৩] আয়না (১৯৭৭)
"মুঝে দিল সে না ভুলানা, চাহায় রোকে জামানা" তসলিম ফজলী রবিন ঘোষ[৩] আয়না (১৯৭৭)
"ইস পারচম ক্যা সায়ে তালায় হাম এক হ্যায়"[৩] কলিম উসমানী এম আশরাফ ফরজ অর মমতা (১৯৭৫)
"বোল রে গুররিয়া বোল"[২] মাসরুর আনোয়ার নিসার বাজমি[৩] আস (১৯৭৩)
"তো হি বাটা, পাগলি পবন"[২] মাসরুর আনোয়ার এম আশরাফ ফুল মেরে গুলশান কা (১৯৭৪)
"ইতনা ভি না চাহো মুঝে"[২] পারদা না উথাও (১৯৭৪)
" তেরা পেয়ার বান কে আয়ে " রবিন ঘোষ ভুল (১৯৭৪)
"মৌসুম তৌ দিওয়ানা হ্যায়" দো সাথী (১৯৭৫)
"কুছ লগে মহব্বত কা সিলা" নাশাদ গুমরাহ (১৯৭৫)
"টুট গায়া স্বপ্ন"[৯] করিম শাহাবুদ্দিন ববি এবং জুলি (১৯৭৮)

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

তিনি শেহরিয়ার জাইদিকে বিয়ে করেছিলেন। তার ছোট ছেলে জাফর জাইদি কাভিশ মিউজিক ব্যান্ডের প্রধান কণ্ঠশিল্পী। তার বড় ছেলে নাদ-ই-আলি একজন একক গায়ক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি ২০২২ সালের ২০শে আগস্ট ৭১ বছর বয়সে কিছু সময় অসুস্থ থাকার পর করাচিতে মারা যান।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "A patriotic song by Nayyara Noor" on The Express Tribune (newspaper). Published 13 August 2015, retrieved 3 January 2021.
  2. Profile of Nayyara Noor on travel-culture.com website. Retrieved 3 January 2021.
  3. Amjad Parvez (9 November 2018), "Nayyara Noor — a haunting, tuneful and sweet voice" Daily Times (newspaper), Retrieved 3 January 2021
  4. "Pakistan's "Oscars"; The Nigar Awards."Desi Movies Reviews। ২২ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  5. "President confers 192 civilian awards"Dawn (newspaper)। ২ আগস্ট ২০০৬। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২১ 
  6. "Nayyara Noor passes away at 71 years of age"Daily Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ আগস্ট ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২২ 
  7. "Listen & view Nayyara Noor's lyrics & tabs"www.tablyricfm.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২২ 
  8. Noorani, Asif (৩০ নভেম্বর ২০১২)। "Nayyara Noor: muted melodies"Dawn (newspaper)। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২১ 
  9. Toot Gaya Sapna Dekhe Bina (ইংরেজি ভাষায়), ১ জানুয়ারি ১৯৭৯, সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২২ 
  10. "Renowned singer Nayyara Noor passes away aged 71"Daily News। ২১ আগস্ট ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা