নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায়

নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায় (বৈশাখ ১৩০৯ বঙ্গাব্দ - ১২ বৈশাখ ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বাংলার ব্রতচারী আন্দোলনে গুরুজী গুরুসদয় দত্তের চিন্তা-ভাবনার বাস্তব পরিকল্পনার রূপকার।[১] গুরুজী প্রতিষ্ঠিত বাংলার ব্রতচারী সমিতির প্রথম ও প্রধান সঞ্চালক ছিলেন তিনি।[২] ব্রতচারী প্রশিক্ষণ শিবিরে তিনি আলাজী নামেই পরিচিত ছিলেন।

নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম
নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায়

এপ্রিল/মে ১৯০২
মৃত্যুএপ্রিল ১৯৭৮
ব্রতচারী গ্রাম জোকা কলকাতা
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণব্রতচারী আন্দোলন

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কুশমোড় গ্রামে। রামপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাশের পর বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে স্নাতক হন। শিক্ষকরূপেই কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে বীরভূম জেলার সুলতানপুরের শ্রীরাম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সময় "স্কাউটমাস্টার" এর প্রশিক্ষণ নেন। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্র সংগীতের শিক্ষা নেন এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে বি.টি পাশ করেন।

ব্রতচারী আন্দোলনে যোগদান সম্পাদনা

গুরুসদয় দত্ত কর্মজীবনে দ্বিতীয়বার বীরভূমে স্থানান্তরিত হলে 'লিজ ক্লাব এমেচার মিউজিক্যাল সোসাইটি' গঠন করে লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অনুসন্ধান শুরু করেন এবং অনুভব করেন ব্রিটিশ ভারতের প্রবল শক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলতে তাদের দৈহিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় সবল হয়ে ওঠা প্রয়োজন। তিনি নৃত্যের ভঙ্গিমায় দেশীয় সুরে গান বেঁধে নাচ-গানের ভিতর দিয়ে দেহ ও সাংস্কৃতিক চেতনা বিকাশে ব্রতচারী আন্দোলন শুরুর চিন্তা-ভাবনা করছেন। এমন সময় ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায় তার সান্নিধ্যে আসেন এবং অনুপ্রাণিত হন। সরকারি চাকুরিতে থেকে এসব কাজ করা সম্ভব নয়, তাই সরকারি চাকরির দরুন নিজেকে আড়ালে রাখবার জন্যে ব্রতচারী কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব অর্পণ করেন তার অনুগত নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে।[৩] গুরুসদয় রচিত কথা ও সুরে প্রথম নৃত্য-ভঙ্গি সংযোজন করেন নবনীধর এবং এর মধ্যদিয়ে 'সঙ্গীতালি'র ক্ষেত্রে গুরুজীর নবদিগন্তের সূচনা হয়। কালক্রমে গুরুজীর অত্যন্ত কাছের মানুষ হয়ে বিভিন্ন লোক-সম্পদ সংগ্রহ, গবেষণা ও প্ররক্ষণে প্রধান সহযোগী হন। বীরভূম জেলার রায়বেঁশে নৃত্যে ঢোলের বোলের ভাষ্যরূপের স্রষ্টা ছিলেন নবনীধর।[১] ব্রতচারী আন্দোলন শুরুর প্রক্কালে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে 'পল্লীসম্পদ রক্ষা সমিতি' গঠিত হলে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পর পর দুটি সংক্ষিপ্ত নিখিল বঙ্গ লোকনৃত্য শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত হয়। দুটি শিবিরের প্রধান উস্তাদরূপে তিনি শিক্ষা দেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে তারই নেতৃত্বে দিল্লীতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা হয়। ওই বছরের শেষের দিকে কলকাতার উপকণ্ঠে (অধুনা জোকায় ব্রতচারী গ্রামে) তৃতীয় নিখিলবঙ্গ শিক্ষাশিবিরে ব্রতচারী নাম সংযোজিত হয়।[২] নবনীধরই প্রথম 'উস্তাদ-ই-আলা' হয়েছিলেন। এখানেই গুরুসদয় প্রবর্তিত সংস্থার নাম 'পল্লী সম্পদ রক্ষা সমিতি'র পরিবর্তে হয় বাংলার ব্রতচারী সমিতি[২] গুরুসদয় দত্তের ইচ্ছায় নবনীধর শিক্ষকতায় ইস্তফা দিয়ে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্থায়ী ভাবে সমিতিতে নিযুক্ত হন। আমৃত্যু ব্রতচারী পরিচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত থেকে ব্রতচারী আন্দোলনে সৃষ্ট পদ 'উস্তাদ-ই-আলা' হতে 'নায়ক-ই-আলা' ও শেষে 'নায়কালা-আলাজী' বা শুধু আলাজী নামে পরিচিত হন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ওই পদ হতে তাকে অবসর দেওয়া হলেও তিনি সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। জোকায় ব্রতচারী গ্রামের পত্তনে তিনি ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা।[২]

আরো দেখুন সম্পাদনা

জীবনাবসান সম্পাদনা

নবনীধর বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল (১৩৮৫ বঙ্গাব্দের ১২ বৈশাখ) ব্রতচারী গ্রামে পরলোক গমন করেন।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ব্রতচারী সখা-৩৯তম সংস্করণ। বাংলার ব্রতচারী সমিতি, কলকাতা। ২০১৮। 
  2. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৩৩৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  3. "ব্রতচারী আন্দোলনের গুরুসদয় : সনজীদা খাতুন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৭