দোয়াবি হল পাঞ্জাবির একটি উপভাষা যেটি পাঞ্জাবের দোয়াব অঞ্চলে ব্যবহার হয়।[১] ১৯৪৭ এর পরে পূর্ব পাঞ্জাব থেকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর অভিপ্রয়াণের ফলে এটি এখন ভারতীয় পাঞ্জাব এবং পাকিস্তান পাঞ্জাবের কিছু অংশে ব্যবহৃত হয়। দোয়াব শব্দটি এসেছে "দো আবি" শব্দ থেকে যার অর্থ "দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি"। ঐতিহাসিকভাবে এই উপভাষাটি বিপাশা এবং শতদ্রু নদীর মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চেলে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে যে অঞ্চলে এটি ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় পাঞ্জাবের দোনা ও মাঞ্জকী অঞ্চল সহ জলন্ধর, হোশিয়ারপুর, কপুরথালা এবং নওয়ানশাহর জেলা, এবং পাকিস্তান পাঞ্জাবের টোবা টেক সিংফয়সালাবাদ জেলা, যেখানে এই উপভাষাটি ফয়সালাবাদী পাঞ্জাবি নামে পরিচিত।

দোয়াবির উপ-উপভাষাগুলি হলো দোনা এবং মাঞ্জকির।[২]

পাঞ্জাবির উপভাষা

বিশ্লেষণ সম্পাদনা

পূর্ব দিকে দোয়াবি উপভাষাটি লুধিয়ানা জেলার মালওয়াই উপভাষার সাথে মিশে গেছে এবং উত্তর দিকে এটি পাহাড়ি উপভাষার ভাষাগত বৈশিষ্ট্যগুলি ভাগ করে নিয়েছে। দোয়াবি উপভাষার কিছু ভাষাগত বৈশিষ্ট্য যা এটিকে বাকী পাঞ্জাবী উপভাষাগুলি থেকে পৃথক করে তা নিচে দেওয়া হলো:[৩]

ব্যঞ্জনধ্বনি সম্পাদনা

ব্যঞ্জনধ্বনি দোয়াবি শব্দ বাংলা অনুবাদ
p pəl মুহূর্ত
pʰ pʰəl ফল
b baːl শিশু
taːɾ তার
t̪ʰ tʰaːl থালা
daːl ডাল
ʈ ʈəl গাদা
ʈʰ ʈʰiːk সঠিক
ɖ ɖaːk ডাক
t͡ʃ tʃəp অঙ্কিত করা
d͡ʒ dʒoːk জোঁক
k kəɡ কাক
kʰoːl খোলা
ɡ ɡəl অপব্যবহার
m moːɾ ময়ুর
n nəɾ পুরুষ
ɳ * ɦʊɳ এখন
l ləl লাল
* koː কাছে
s sɪɾ মাথা
ʃ ʃeːɾ সিংহ
z zoːɾ শক্তি
f fəslə দূরত্ব
ɦ ɦoːɾ আরও
ɾ ɾoːɡ রোগ
ɽ * pɪɽ ব্যথা
  • অক্ষরের শুরুতে পাওয়া যায় না

স্বরধ্বনি সম্পাদনা

দোয়াবিতে দশটি স্বরধ্বনি আছে: /ə, ɪ, ʊ, aː, ɛː, eː, iː, ɔː, oː, uː/। উদাহরণস্বরূপ:

স্বরবর্ণ শব্দ অনুবাদ
ə ək চোখ
ʊ ʊʈʰ জাগ্রত
ɪ ɪt ইট
aːs আশা
ɛː ɛːnək চশমা
uːʈʰ উট
ʃeːɾ সিংহ
ਅੋ moːɾ ময়ুর
ɔː ɦɔːɾ আরও
tiːɾ তীর

অন্যান্য অধিধ্বনীয় স্বনিম সম্পাদনা

দোয়াবিতে সুর, শ্বাসাঘাত এবং অনুনাসিকরণ হলো স্বনিমীয়।

সুর সম্পাদনা

দোয়াবিতে তিনটি সুর ব্যবহৃত হয়; নিম্ন, মধ্য এবং উচ্চ।

স্বন দোয়াবি শব্দ বাংলা অনুবাদ
নিম্ন পা˦ 'হার'
মধ্যবর্তী পা˧ 'রাখা'
উচ্চ পা˨ 'প্রভাব'

শ্বাসাঘাত সম্পাদনা

দোয়াবিতে শ্বাসাঘাত দুটি উপায়ে উপলব্ধি করা যায়: বাক্যপ্রকরণ এবং পদপ্রকরণের মাধ্যমে।

বাক্যগঠনের দিক থেকে শ্বাসাঘাত পরিবর্তনের ফলে অর্থ পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেমন:

দোয়াবি বাংলা
ˈঘড়া 'কলস'
ঘˈড়া 'কোন কিছুকে আকার দেওয়ানো'

পদপ্রকরণের দিক থেকে, দোয়াবির শ্বাসাঘাত সহ এবং শ্বাসাঘাতহীন অক্ষর আছে;

শ্বাসাঘাত সহ শব্দ শ্বাসাঘাতহীন শব্দ
দোয়াবি বাংলা দোয়াবি বাংলা
সত্ত নির্যাস সত্ সাত
পত্তা পাতা পতা ঠিকানা

কিছু সাধারণ শব্দ সম্পাদনা

দোয়াবি বাংলা
বাবা পিতা
প্যাঁঁ বোন
ভারা ভাই
সে(ব) আপেল
চোন্না ধান
বড়া বয়ঃজেষ্ঠ্য

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ধ্বনিপরিবর্তন সম্পাদনা

দোয়াবি একটি শব্দের শুরুতে "ভ"-এর পরিবর্তে "ব" [৩] ব্যবহার করে, যেমন, "ভাডা" (বড়) থেকে "বাডা"। এছাড়াও শব্দের অন্য জায়গায় "ভ"-এর পরিবর্তে "ও" ব্যবহার করে, যেমন "খভাব" (স্বপ্ন) এর পরিবর্তে "খোয়াব"। "ভ" দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে "ৱ" হয়ে যায়, যেমন "হাভা" (বাতাস) থেকে "হাৱা"। এছাড়াও, "উ" স্বরধ্বনিটি "ও" হিসাবে উচ্চারিত হয়। তদনুসারে, "খুশ" (খুশি) "খোশ" হয়ে যায়, বা "কুহট" (প্রহার করা) "কোহট" হয়ে যায়। দোয়াবিতে প্রথম অক্ষরের "ই" "ও" হিসাবে উচ্চারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, "খিচ" (টানা) শব্দটি "খেচ" বা "ভিচ" (ভিতরে) শব্দটি "বেচ" হিসাবে উচ্চারণ করা হয়।

দোয়াবি "জ়" ব্যবহার না করে "জ" ব্যবহার করে। পাঞ্জাবি ভাষায় এটি প্রচলিত কারণ "জ়" ধ্বনিটি এই অঞ্চলের আদিবাসী ধ্বনি নয়।

বাক্যের গঠন সম্পাদনা

পাঞ্জাবির "হাঁঁ" (বর্তমান কাল) এবং "সন" বা "সি" (অতীত কাল) এর পরিবর্তে দোয়বিতে "আ" (বর্তমান কাল) এবং "সিগেই" (অতীত কাল) দিয়ে বাক্যগুলি শেষ হয়। যেখানে পাঞ্জাবির সম্ভ্রান্ত উপভাষা, মাঝি "ইঞ্জ/ আইস্তারাঁঁ" উল্টোদিকে, "জিস্তারাঁঁ", "কিস্তারাঁঁ" ক্রিয়াবিশেষণ ব্যবহার করে, সেখানে দোয়াবি "আইদ্দাঁঁ", "জিদ্দাঁঁ", "কিদ্দাঁঁ" ব্যবহার করে।

বর্তমান কাল: ৱা (একবচন) এবং আ (বহুবচন) এর ব্যবহার

দোয়াবি পাঞ্জাবি বাংলা
ওহ কর্দা ৱা ওঃ কর্দা হ্যা/ অ্যা* সে করে
ওহ কর্দে আ ওঃ কর্দে হাঁঁ/ নে* তারা করে
*কথ্য রূপ

অতীত কাল: দোয়াবিতে সি/সিগা-র সর্বজনীন ভূমিকা

দোয়াবি পাঞ্জাবি বাংলা
ওহ কর্দা সি/সিগা ওহ কর্দা সি সে করেছে
ওহ কর্দে সি/সিগে ওহ কর্দে সন তারা করেছে
তু কর্দা সি/সিগা তু কর্দা সেন তুমি করেছ
তুসি কর্দে সি/সিগে তুসি কর্দে সো তোমরা করেছ
মেঁঁ কর্দা সি/সিগা মেঁঁ কর্দা সাঁঁ আমি করেছি
আপঁঁ কর্দে সি/সিগে অসি কর্দে সাঁঁ আমরা করেছি

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Punjabi University, Patiala."। ৩১ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  2. Tribune 28 January 2009 Sarbjit Dhaliwal
  3. "Archived copy"। ২০১৬-০৬-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৩