দেবযানী (বা দেবায়নী) কৃষ্ণ (১৯১০ - ২০০০) একজন ভারতীয় চিত্রশিল্পী, মুদ্রণ নির্মাতা এবং শিক্ষক ছিলেন। তিনি ভারতীয় খেলনা, লোক মোটিফ এবং বাটিক কাজ সম্পর্কে গবেষণা কাজের সাথে জড়িত ছিলেন।[১] দেবযানী ভারত ও ইউরোপে তাঁর কাজের প্রদর্শন করেছিলেন। শিল্প সমালোচক রিচার্ড বার্থোলোমিউ তাঁর বৈচিত্র্যময় কাজের জন্য তাঁকে 'ভারতের অগ্রগণ্য মহিলা শিল্পী' হিসাবে গণ্য করেছিলেন।[২]

দেবযানী কৃষ্ণ
জন্ম১৯১০
মৃত্যু২০০০
মাতৃশিক্ষায়তনস্যার জামসেদজী জিজিবয় স্কুল অফ আর্ট, মুম্বাই
দাম্পত্য সঙ্গীকানওয়াল কৃষ্ণ (বি. ১৯৪২)

তিনি তাঁর স্বামী কানওয়াল কৃষ্ণের সাথে, হিমালয় ভ্রমণ করেছিলেন এবং নিজেদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে এই অঞ্চলের শিল্প ও সংস্কৃতি নথিভুক্ত করেছিলেন। এই সফরের সময় তার আঁকাগুলি তাঁর অভিজ্ঞতা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।[৩]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

দেবযানীর জন্ম মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে। ১৯৩০-এর দশকে, ইন্দোরের মহারাজা দ্বিতীয় যশবন্ত রাও হোলকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শহরটি আন্তর্জাতিক শৈলীতে আধুনিকতাবাদী পরীক্ষা-নিরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।[৪] মহারাজা, জার্মান স্থপতি ইকার্ট মুথেসিয়াসকে মানিকবাগ প্রাসাদের নকশা ও উন্নয়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ভাস্কর কনস্টান্টিন ব্র্যাঙ্কুসি এবং স্থপতি লে করবুসিয়ারের তৈরি কাজগুলিও সংগ্রহ করেছিলেন।[৫]

শহরের এই উন্নয়নগুলি ছোটবেলা থেকেই দেবযানীর উপর প্রভাব ফেলেছিল। তদুপরি, তাঁর প্রথম শিল্প শিক্ষা গুরুস্থানীয় শিল্পী এবং শিক্ষক ডি ডি দেওলালিকরের নির্দেশনায় এসেছিল।[১] ১৯৩৬ সালে, তিনি বোম্বে চলে আসেন এবং চিত্রকলার প্রতি তাঁর আগ্রহের জন্য স্যার জে জে স্কুল অফ আর্ট-এ যোগ দেন। ১৯৪০ সালে স্নাতক হওয়ার পর, তিনি ম্যুরাল পেইন্টিংয়ে একটি বিশেষীকরণও সম্পন্ন করেন।[৬]

কর্মজীবন সম্পাদনা

দেবযানী ১৯৪২ সালে সহশিল্পী কানওয়াল কৃষ্ণকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁরা উভয়েই হিমালয়ে গিয়ে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সিকিম, তিব্বতীয় সীমান্ত এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করেন।[১] ভ্রমণসংক্রান্ত তাদের আঁকার মধ্যে ছিল তিব্বতীয় মুখোশ, স্থানীয় বাসিন্দাদের ধর্মীয় নৃত্য এবং বৌদ্ধ শিল্পের বিভিন্ন দিক।[৪] এই অঞ্চলের মানুষজনের জন্যও এই সময়টি ছিল উত্তাল সময়। চীনের কাছে তিব্বতীয় বৌদ্ধদের স্বায়ত্তশাসন হারানোর সাক্ষী এই দম্পতি। ১৯৫১ সালে, চীন তিব্বতের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায় যার ফলে বৌদ্ধদের নির্বাসনে যেতে হয়।[৩]

ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর, দেবযানী কৃষ্ণ নতুন দিল্লির মডার্ন স্কুলে শিল্প শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি শিল্প বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর নেন।[৬]

শৈলী সম্পাদনা

দেবযানীর কাজগুলি নকশার প্রতি তাঁর দৃঢ় অনুভূতি দেখায়, যেগুলি উপযুক্ত রচন এবং রঙের সামঞ্জস্যের রীতিমত পরিপূরক।[৬] মাধ্যম নির্বিশেষে, তাঁর শিল্পকর্মে পবিত্র প্রতীকগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সেগুদের ধারণার ভিত্তি ছিল পরিবার, যুদ্ধ এবং ধর্মের সর্বজনীন বিষয়।[১]

তিব্বতীয় এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রতি দেবযানীর মুগ্ধতা পরবর্তীকালে তাঁর চিত্রকর্মে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৬] যখন তাঁকে তাঁর ভেইলড মাস্ক শিরোনামের চিত্রণের অন্ধকার নান্দনিকতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, "না, এটা দুঃখজনক নয়। এটি একটি অবগুণ্ঠনযুক্ত মুখোশ। মানুষকে চেনা খুব কঠিন। এটি একজন মানুষ মাত্র যে দুটি মুখোশের পেছনে।"[৩] এই ধরনের চিত্রের মাধ্যমে, তিনি হিমালয়ে ভ্রমণের সময় তাঁর সামনে যে দুঃখজনক ঘটনাটি উন্মোচিত হয়েছিল তার প্রতিক্রিয়া জানান।

প্রাপ্তি সম্পাদনা

১৯৭২ সালে, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার শিল্প সমালোচক রিচার্ড বার্থলোমিউ ১৯৬০ এর দশক থেকে ভারতে মুদ্রণ তৈরির উত্থান সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি দেবযানীকে 'সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে পরিপক্ক মুদ্রণকারক' বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও যোগ করেছেন, "তিনি প্রিন্টমেকিংয়ে দর্শন এবং সংবেদনশীলতা উভয়ই এনেছেন যা ব্যতিক্রমীভাবে বিরল। তাঁর প্রিন্টগুলি প্রযুক্তিগতভাবে আকর্ষণীয় হওয়ার পাশাপাশি একটি রহস্যময়তার ছাপ বহন করে।"[৭]

কাজ সম্পাদনা

পাবলিক সংগ্রহ সম্পাদনা

দেবযানীর শিল্পকর্ম ন্যাশনাল গ্যালারি অফ মডার্ন আর্ট, নিউ দিল্লি,[৮] দিল্লি আর্ট গ্যালারি,[৪] এবং ওয়াসও এক্স ওয়াসও কালেকশনে[৯] রাখা হয়েছে।

প্রদর্শনী সম্পাদনা

  • ১৯৪১ - কলকাতায় প্রথম একক অনুষ্ঠান[৬]
  • ১৯৯৬ - আধুনিক ভারতীয় চিত্রকর্ম - একশ বছর, প্রথম খণ্ড, কুমার গ্যালারি, নতুন দিল্লি, ভারত[১০]
  • ২০০৫ - সুবর্ণ জয়ন্তী: স্পিরিট সেট ফ্রি, কুমার গ্যালারি, নতুন দিল্লি, ভারত[১১]
  • ২০১৫ - অ্যাবি গ্রে অ্যাণ্ড ইণ্ডিয়ান মডার্নিজম: এনওয়াইইউ আর্ট কালেকশন, গ্রে আর্ট গ্যালারি, এনওয়াইইউ, নিউ ইয়র্ক থেকে নির্বাচন[১২]
  • ২০২০ - দ্য ফিফটিজ শো, দিল্লি আর্ট গ্যালারি, নতুন দিল্লি, ভারত[১৩]
  • ২০২১ - এ প্লেস ইন দ্য সান: ২০ শতকের ভারত থেকে মহিলা শিল্পী, দিল্লি আর্ট গ্যালারি, নতুন দিল্লি, ভারত[১৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Devayani Krishna"Saffronart। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  2. "Untitled (Townscape) - Devayani Krishna | The Surya Collection: Property of Mrs. Ute Rettberg"Sotheby's। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২২ 
  3. Grey Art Gallery (২০১৫)। Abby Grey and Indian modernism : selections from the NYU art collection। Internet Archive। New York, NY : Grey Art Gallery, New York University। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 978-0-934349-18-5 
  4. "Devyani Krishna | DAG"dagworld (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২২ 
  5. "Veiled Mask, n.d."Grey Art Gallery (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  6. "Artist Gellary - DEVYANI KRISHNA"goaartgallery.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  7. "Old Delhi - Devayani Krishna | The Surya Collection: Property from Mrs. Ute Rettberg"Sotheby's। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২২ 
  8. "Devayani Krishna"Indian Culture। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২২ 
  9. "Devayani Krishna | The Waswo X. Waswo Collection of Indian Printmaking"collection.waswoxwaswo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২২ 
  10. "Exhibitions | Modern Indian Paintings"Kumar Gallery (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  11. "Exhibitions | Golden Jubilee: Spirit Set Free"Kumar Gallery (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  12. "Abby Grey and Indian Modernism: Selections from the NYU Art Collection"Grey Art Gallery (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  13. "The Fifties Show"DAG। ২০২২-০৩-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 
  14. "A Place in the Sun"DAG। ২০২২-০৬-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা