'দাসত্ব' অর্থ হল কোনো মানুষকে জোর পূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা। সাধারণত দাসকে তার মনিবের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে কাউকে তার ইচ্ছার পরিবর্তেও দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তার আটক, জন্ম, ক্রয় করা সময় থেকে। স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরি পাবার অধিকার দাসদের নেই।

ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বিলাল ইবনে রাবাহ, যিনি প্রাথমিক জীবনে একজন ইথিয়োপীয় ক্রীতদাস ছিলেন, ইসলাম গ্রহণের ফলে নির্যাতিত হওয়ার সময় নবী মুহাম্মাদ এর নির্দেশে আবু বকর তাকে দাসত্ব হতে মুক্ত করেন। এটি সিয়ারে নবী নামক ফারসি গ্রন্থের একটি চিত্রাঙ্কন, যেখানে মক্কা বিজয়ের দিন কাবাগৃহের উপরে উঠে বিলালের আযান দেয়ার দৃশ্যকে চিত্রায়িত করা হয়েছে।

দাসপ্রথার সূচনা ইসলাম আগমনের পূর্বে ঘটে। অমুসলিমরা মানুষদের জোরপূর্বক দাস-দাসীতে পরিণত করতো এবং চওড়া মূল্যে ক্রয় - বিক্রয় করতো। ইসলামের আগমনের পর, যখন মুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় অর্জন করতেন, তখন তারা এই দাস-দাসীদের সম্পত্তি হিসেবে গ্রহণ করতেন। কোনও স্বাধীন ব্যক্তি বা যুদ্ধবন্দীকে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো না। ইসলামের পূর্বে ছিল বিধায় এই সংক্রান্ত বিধান ইসলামে ছিলো।

পবিত্র গ্রন্থসমূহে সম্পাদনা

কুরআন সম্পাদনা

মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনের সূরা নাহলে দাসদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,

আর আল্লাহ্‌ জীবনোপকরণে তোমাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাসদাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে ওরা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ অস্বীকার করছে?16:71[১]

ইসলাম ধর্ম দাসত্বের বাস্তবতাকে সরাসরি অস্বীকার না করে, এর অস্তিত্বকে স্বীকারের মাধ্যমে দাস-দাসীদের তাঁদের প্রাপ্য মানুষের অধিকার প্রদানে উৎসাহ দেয়। এবং তা মানুষকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাকে উত্তম কাজ বলে মনে করে।

হাদিস সম্পাদনা

দাসত্ব সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে,

আবু হুরাইরা বলেন, নবী মুহাম্মাদ বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে, তার প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার প্রতিটি অঙ্গকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।২৩৫১[২][৩]


সহীহ বুখারী এর হাদীসে বলা হয়েছে,

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলা ঘোষনা করেছেন যে, কিয়ামতের দিবসে আমি নিজে তিন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে বাদী হবো। এক ব্যাক্তি, যে আমার নামে ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে। আরেক ব্যাক্তি, যে কোন আযাদ মানুষকে বিক্রি করে তার মূল্য ভোগ করল। আর এক ব্যাক্তি, যে কোন মজুর নিয়োগ করে তার থেকে পুরো কাজ আদায় করে এবং তার পারিশ্রমিক দেয় না।২২২৭[৪]

তাছাড়া সহীহ মুসলিম এর হাদিসে বলা হয়েছে,

মুহাম্মাদ বলেন, হে আবুজর! তোমাদের মধ্যে বর্বর যুগের ভাবধারা রয়ে গেছে। তারা (দাস) তোমাদের ভাই। আল্লাহ পাক তাঁদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তোমরা যা খাবে, তাঁদেরকে তাই খেতে দেবে। তোমরা যে বস্ত্র পরবে, তাঁদেরকেও তাই পরতে দেবে। তোমরা তাঁদের ওপর এমন কোনো কাজের বোঝা চাপাবে না, যা বহন করতে তারা অপারগ হয়। যদি তোমাদের দেয়া কোনো কাজ করতে তারা অসমর্থ হয়, তাহলে তোমরা তাঁদের কাজে সাহায্য করবে।৪১৬৯[৪]

ইসলাম মূলত অধিকার ভূক্ত অসহায় মানুষদের দাস-দাসী হিসেবে বিবেচনা করতে বাধা প্রদান করে। ইসলাম মনে করে, তাঁদের পরিচয় হবে পোষ্য। সেটা পোষ্য ভাই, পোষ্য সন্তান ইত্যাদি হতে পারে। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারীর হাদিসে বলা হয়েছে,

আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ বলেন, তোমাদের কেউ যেন না বলে, তোমার প্রভুকে আহার করাও, তোমার প্রভুকে পান করাও। আর যেন অধিকার ভূক্তরা এরূপ না বলে, আমার মনিব, আমার অভিভাবক। তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে, আমার দাস, আমার দাসী। বরং বলবে, আমার বালক, আমার বালিকা, আমার খাদিম।২৩৮৪[২]

আর যদি দাস-দাসীর সাথে খারাপ আচরণ করা হয়, তাহলে ইসলাম নির্দেশ প্রদান করে যে, কাফফারা স্বরুপ উক্ত দাস বা দাসীকে মুক্ত করে দিতে হবে। এ সম্পর্কে সহীহ মুসলিম এর হাদিসে বলা হয়েছে,

"ইবনে ওমর বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার ক্রীতদাসকে চড় মারল কিংবা প্রহার করল, তার কাফফারা তাঁকে মুক্ত করে দেয়া।"৪১৫৪[৪]

আরও পড়ুন সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জী সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. কোরআনুল করীম (বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তফসীর) (PDF)। খাদেমুল-হারমাইন বাদশাহ ফাহদ, কোরআন মুদ্রণ প্রকল্প। ২০১৫। পৃষ্ঠা ১৪৮০। 
  2. সহীহ বোখারী শরীফ [১ম হইতে ১০ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত]। শায়খুল হাদিস মাওলানা মোহাম্মদ আজীজুল হক কর্তৃক অনূদিত। আলহাজ্ব মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, একুশে বই মেলা। ২০০৬। পৃষ্ঠা ১১২০। 
  3. এ সংক্রান্ত আরও হাদিস সমূহ হল সহীহ বোখারী ২৩৭৬, ২৩৫৩, ২৩৫৪, ২৩৫২
  4. সহীহ বুখারী শরীফ [১ম হইতে 8ম খন্ড এক ভলিয়মে সমাপ্ত]। আন্তর্জাতিক।  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "m-s" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  5. "When Europeans Were Slaves: Research Suggests White Slavery Was Much More Common Than Previously Believed"। ২৫ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা