দাণ্ডিয়া রাস (ইংরেজি: Dandiya Raas), রাস বা ডাণ্ডিয়া রাস হল ভারতের গুজরাত রাজ্যে উদ্ভূত ও নবরাত্ৰি উৎসবে প্ৰদৰ্শনকৃত জনপ্ৰিয় একপ্রকার সামাজিক তথা ধৰ্মীয় লোকনৃত্য[১][২] রাজস্থানের মারওয়ার অঞ্চলেও এই নৃত্য প্ৰদৰ্শন করা হয়।[৩] দাণ্ডিয়া রাস নাচে পুরুষ ও মহিলারা হাতে সরু ও হালকা লাঠি নিয়ে বৃত্তাকারে নৃত্য প্ৰদৰ্শন করে থাকে। তারা নৃত্যকালে ব্যবহার করা এই লাঠিকে ডালক দাণ্ডিয়া (ডাণ্ডিয়া) বলে ডাকে। ডালক দাণ্ডিয়াগুলোতে নিয়মিত আঘাত করে এই নৃত্য করা হয়। এতে একরকম দ্যোতনা ও শব্দের সৃষ্টি হয়।

দাণ্ডিয়া রাস
দাণ্ডিয়া রাস নৃত্যরত শিল্পী
ধরনলোকনৃত্য
উৎসগুজরাত, ভারত

নামের উৎপত্তি সম্পাদনা

 
দাণ্ডিয়া

"রাস" শব্দটি "রস" শব্দ থেকে এসেছে, যা আবেগ ও অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত একটি নান্দনিক ভারতীয় ধারণা। কপিলা বাতস্যায়নের মতে রাসের নান্দনিক তত্ত্বে ভারতীয় শিল্পকলাকে অন্তর্নিহিত একতা প্রদান করে।[৪] আরেকটি মতে ডাণ্ডিয়া বা দাণ্ডিয়া শব্দটি মূল "দণ্ড" বা "ডাণ্ডা" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে সরু লাঠি। গুজরাতে একে সাধারণত শুধু রাস বলেই ডাকা হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা

দেবী দুর্গার সন্মানে দাণ্ডিয়া রাস প্রদর্শন করা হয়। দাণ্ডিয়া রাস প্রকৃতপক্ষে দেবী দুর্গা এবং মহিষাসুরের মাঝে ঘটা যুদ্ধের একটি নাট্যরূপ। এই নৃত্যকে 'তরোয়াল নৃত্য' বলেও ডাকা হয়। নৃত্যে ব্যবহার করা দাণ্ডিয়া বা লাঠি দেবী দুর্গার তরোয়ালের প্রতিনিধিত্ব করে। নৃত্যটি বর্তমানে গুজরাতর নবরাত্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের পাশাপাশি অন্যান্য শস্য সম্পর্কিত উৎসবের সঙ্গে জড়িত।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

 
সৌরাষ্ট্রের দাণ্ডিয়া রাস

দাণ্ডিয়া রাস, গোপগুণ্ঠন ছলঙা রাস ও মের ডাণ্ডিয়া রাস হচ্ছে রাসের জনপ্রিয় কয়েকটি রূপ। গুজরাতের সৌরাষ্ট্রে পুরুষদের পরিবেশন করা রাস ও মহিলাদের করা নৃত্যকে রাসদা নামে অভিহিত করা হয়। রাসে নৃত্যের উপাদান অধিক বিশিষ্ট এবং রাসদাতে সংগীত অধিক বিশিষ্ট বলে বিবেচিত হয়।[২]

বিন্যাস সম্পাদনা

 
বেঙ্গালুরুতে নবরাত্রির সময়ে শিশুদের পরিবেশিত দাণ্ডিয়া রাস নৃত্য

পুরুষ ও মহিলারা পরম্পরাগতভাবে দাণ্ডিয়া-রাসে যোগদান করে ও জোড়ায় জোড়ায় নৃত্য করে। অর্থাৎ নৃত্যটিতে যুগ্ম সংখ্যায় শিল্পী থাকা বাঞ্ছনীয়। সাধারণত দুটি সারি গঠন করা হয় এবং সঙ্গীরা পরস্পরের মুখোমুখি হয়। সারিগুলো ঘড়ির কাঁটার অভিমুখ অনুযায়ী এগোতে থাকে এবং প্রতিটি ব্যক্তি তার সঙ্গীর লাঠিতে আঘাত করে এগোয়, তারপরে পাশের দুটি লোকের দিকে চলে। সারির শেষে প্রতিটি বিপরীত রেখার সাথে পরিবর্তন করা হয় ও নতুন সারি যুক্ত হয়, তাই চলাচল অবিচ্ছিন্ন থাকে। দাণ্ডিয়ার সংগীত প্রথমে ধীর লয়ে আরম্ভ হয়। এটি কাহারবা নামে একটি অষ্টতাল সময় চক্র এবং নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়:

প্রথম তালে নিজের লাঠিগুলো একসাথে আঘাত করা হয়, তারপরে সঙ্গীর সাথে ডান লাঠি, তারপরে বাম লাঠিকে (বা একই লাঠি যদি একটি লাঠিই ব্যবহার করা হয়) আঘাত করা হয়। তারপরে প্রত্যেকে ডান দিকের লাঠিগুলোতে আঘাত করার জন্য সঙ্গীর দিকে ফিরে ফিরে নতুন জায়গায় এবং নতুন সঙ্গীর কাছে দুটি জায়গায় যাওয়ার আগে একসাথে নিজের লাঠিগুলি আঘাত করতে বাম দিকে ফিরে যায়।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Education, International Society for Music (১৯৮৪)। ISME Yearbook (ইংরেজি ভাষায়)। B. Schott's Söhne। পৃষ্ঠা 118। 
  2. Sharma, Manorma (২০০৭)। Musical Heritage of India (ইংরেজি ভাষায়)। APH Publishing। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 9788131300466 
  3. Khyāta: itihāsa, kalā, evaṃ saṃskr̥ti kī śodha patrikā (হিন্দি ভাষায়)। Marubhūmi Śodha Saṃsthāna। ২০০২। পৃষ্ঠা 240। 
  4. Vatsyayan, Kapila (১৯৮৭)। Traditions of Indian folk dance (ইংরেজি ভাষায়)। Clarion Books associated with Hind Pocket Books। পৃষ্ঠা 5। আইএসবিএন 9788185120225 
  5. David। Performing faith। পৃষ্ঠা 138–9।