তিলা ঘুঘু

পাখি প্রজাতি

তিলা ঘুঘু (বৈজ্ঞানিক নাম: Streptopelia chinensis) Columbidae (কলাম্বিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Streptopelia (স্ট্রেপ্টোপেলিয়া) গণের অন্তর্গত অত্যন্ত সুলভ এক প্রজাতির ঘুঘু[২][৩] খুব বেশি সুলভ পাখি হওয়ায় এদের অনেকগুলো নাম: তিলা ঘুঘু, তেলিয়া ঘুঘু, ছিটে ঘুঘু ইত্যাদি। তিলা ঘুঘুর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ চীনের কণ্ঠীঘুঘু (গ্রিক: streptos = কণ্ঠী, peleia = ঘুঘু, chinensis = চীনের)।[৩] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ বর্গ কিলোমিটার।[৪] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৩]

তিলা ঘুঘু
তিলা ঘুঘু, মাঝিগ্রাম, ভারত
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Columbiformes
পরিবার: কলাম্বিডি
গণ: Streptopelia
প্রজাতি: S. chinensis
দ্বিপদী নাম
Streptopelia chinensis
(স্কোপোলি, ১৭৬৮)
উপপ্রজাতি
  • chinensis স্কোপোলি, ১৭৬৮
  • ceylonensis Reichenbach, 1862
  • hainana Hartert, 1910
  • suratensis JF Gmelin, 1789
  • tigrina Temminck, 1811
প্রতিশব্দ
  • Spilopelia chinensis
  • Stigmatopelia chinensis
  • Columba chinensis
কাছ থেকে তোলা তিলা ঘুঘু, কলকাতা

তিলা ঘুঘু একই গণের অন্যসব প্রজাতি থেকে বেশ খানিকটা আলাদা; কেবল খুদে ঘুঘুর (Streptopelia senegalensis) সাথে এর খানিকটা মিল লক্ষ করা যায়।[৫]

আকার সম্পাদনা

তিলা ঘুঘুর মাথার চাঁদি ও কান-ঢাকনি ধূসর। ঘাড়ের পেছনের উপরিভাগ পাটল বর্ণের। ঘাড়ের পেছনের নিচের ভাগ ও ঘাড়ের পাশে সাদা-কালো তিলার পট্টি। বাদামি পিঠ ও ডানায় পীতাভ তিলা রয়েছে। চোখ ফিকে লালচে বাদামি, চোখের পাতা ও চোখের গোলকের মুক্ত পট্টি অনুজ্জ্বল গাঢ় লাল। ঠোঁট কালচে। পা ও পায়ের পাতা লালে মেশানো এবং নখর বাদামি। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।[৬]

খাদ্য সম্পাদনা

গ্রামের মাঠেঘাটে, শস্যভিটায়, একাকী বা জোড়ায় হেঁটে হেঁটে শস্যদানা খায়।[৬]

স্বভাব সম্পাদনা

তিলা ঘুঘু আর্দ্র পাতাঝরা বন, বাগান, কুঞ্জবন, আবাদি জমিতে বিচরণ করে। গ্রাম ও শহর—সবখানে এই পাখি দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে থাকে। তৃণভূমি, খামার, চাষের জন্য কর্ষিত জমি, রাস্তাঘাট ও বনের ধারে খাবার খায়। ছেলে পাখি ডাকতে পছন্দ করে।[৬]

প্রজননকাল সম্পাদনা

প্রজনন মৌসুম এপ্রিল-জুলাই মাসে ছেলে পাখি মেয়ে পাখির পাশে মাথা নাচিয়ে অবিরাম ডাকে। কোমল সুরে ক্রক..ক্রক করে ডাকে। কাঁটাওয়ালা ঝোপ, বাঁশঝাড়, খেজুর ও অন্যান্য ছোট গাছে কাঠি বিছিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সাদা বর্ণের। সাধারণত ১৩ দিনে ডিম ফোটে।[৬]

বিস্তৃতি ও উপপ্রজাতি সম্পাদনা

তিলা ঘুঘু আর্দ্র পাতাঝরা বন, বাগান, কুঞ্জবন, আবাদি জমি, খোলা মাঠ, গ্রাম ও শহরে বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় বা ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়।

তিলা ঘুঘুর মোট তিনটি উপপ্রজাতির সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে[৩][৫]। উপপ্রজাতি তিনটি হল:

উপপ্রজাতিসমূহের মধ্যে hainanaceylonensis প্রস্তাবিত, কিন্তু প্রমাণিত নয়। অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, মরিশাস, মেক্সিকো, নিউ ক্যালিডোনিয়া, নিউজিল্যান্ডযুক্তরাষ্ট্রে পাখিটি অবমুক্ত করা হয়েছে। মালদ্বীপআফগানিস্তানে এরা অনিয়মিত[১]

 
ফাঁদ পেতে ঘুঘু শিকারীরা

কমে যাওয়ার কারণ সম্পাদনা

শহরে লোক সমাগম আর যানবাহনের বিকট শব্দে কমে যাচ্ছে শান্তিপ্রিয় ঘুঘু। কেবল শব্দ দূষণই নয়, ফাঁদ পেতে শিকারীরাও ঘুঘু পাখির সংখ্যা কমার জন্য দায়ী।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Stigmatopelia chinensis"। Home Page The IUCN Red List of Threatened Species। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১৪৯। আইএসবিএন 9840746901 
  3. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১৩৫। আইএসবিএন 9843000002860 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  4. Butchart, S., Ekstrom, J.। "Spotted Dove Stigmatopelia chinensi"। BirdLife International। ২০১৫-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৮ 
  5. "Spotted Dove (Streptopelia chinensis)"। The Internet Bird Collection। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৪-১৮ 
  6. তিলা ঘুঘু[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ],সৌরভ মাহমুদ, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১১-০৭-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।