তাপীয় সাম্যাবস্থা

তাপীয় সাম্যাবস্থায় (thermal equilibrium) দুটি ভৌত ব্যবস্থা রয়েছে যাতে তাপের প্রবেশযোগ্য কোনও পথ দিয়ে সংযুক্ত থাকলে তাদের মধ্যে কোনও তাপ শক্তির প্রবাহ থাকে না। তাপীয় ভারসাম্যটি তাপগতিবিদ্যার জিরোথ সূত্র মেনে চলে। যদি সিস্টেমের মধ্যে তাপমাত্রা স্থানগতভাবে অভিন্ন এবং সাময়িকভাবে স্থির থাকে তবে একটি সিস্টেম নিজেই তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকে।

একটি তাপ প্রবাহ এর মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে একটি বদ্ধ ব্যবস্থায় তাপীয় সাম্যাবস্থার বিকাশ যা তাপমাত্রার পার্থক্যকের স্তর বহন করে

তাপগতিবিদ্যার সাম্যাবস্থায় সিস্টেমে সর্বদা তাপীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে তবে বিপরীতটি সর্বদা সত্য হয় না। যদি সিস্টেমের মধ্যে সংযোগে শক্তি হিসাবে তাপ স্থানান্তরিত হয় কিন্তু পদার্থের স্থানান্তর অথবা কার্য হিসাবে শক্তির স্থানান্তর না হলে দুই সিস্টেম তাপীয় সাম্যাবস্থায় পোঁছোলেও সেখানে তাপগতিবিদ্যার সাম্যাবস্থা ঘটে না।

তাপীয় সাম্যাবস্থা দুটি প্রকারভেদ সম্পাদনা

দুটি তাপীয়ভাবে সংযুক্ত পদার্থের মধ্যে তাপীয় সাম্যাবস্থার সম্পর্ক সম্পাদনা

তাপীয় সাম্যাবস্থার সম্পর্ক হল দুটি পদার্থের মধ্যে ভারসাম্যের একটি উদাহরণ। অর্থাৎ এটি দিয়ে নির্দিষ্ট ভেদ্য বিভাজকের মধ্যে দিয়ে সংযোগ পথে স্থানান্তরকে বোঝায়।[১] তাপীয় সাম্যাবস্থার সম্পর্কের জন্য সংযোগ পথটি কেবল উত্তাপের জন্য ভেদ্য; এটি পদার্থ বা কার্য স্থানান্তরের অনুমতি দেয় না; লাইব এবং ইয়েংভ্যাসনের মতে তাপীয় সাম্যাবস্থা সম্পর্কের অপরিহার্য অর্থের মধ্যে রয়েছে যে এটি আত্মবাচক এবং প্রতিসম। ব্যবহৃত হ'ক বা না হ'ক এই অর্থ অপরিহার্য নয়। সংজ্ঞাটির শব্দার্থবিজ্ঞানের আলোচনার পরে এই স্বীকৃতি লাভ করেছে যে তারা "তাপগতিবিদ্যার জিরোথ সূত্র" নামে অভিহিত হয়েছে। [২]

বিচ্ছিন্ন বস্তুর আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থা সম্পাদনা

কোনও বস্তুর নিজেরই মধ্যে তাপীয় সাম্যাবস্থা বলতে বোঝায় নিজ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন বস্তু। পটভূমিটি হ'ল কোনও তাপ এটিতে প্রবেশ করে না বা ছেড়ে দেয় না এবং এটি সীমাহীন সময়কে তার নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধীনে স্থিত হওয়ার সুযোগ দেয়। যখন এটি পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয়ে যায় তখন আণুবীক্ষণীক পরিবর্তনটি আর সনাক্তকরণযোগ্য থাকে না। এটিই তার নিজস্ব তাপীয় সাম্যাবস্থা। অন্যান্য ধরনের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যের ক্ষেত্রে এটি আবশ্যক নয়। যেমন কোনও বস্তু আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থায় পোঁছোলেও আভ্যন্তরীণ রাসায়নিক সাম্যাবস্থায় না থাকতেও পারে (উদাহরণ: গ্লাস)। [৩]

একটি বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের কল্পনা করতে পারা যায় যেখানে নিজস্ব আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থা থাকে না। সেখানে কল্প বিচ্ছিন্নভাবে দুটি উপ-সিস্টেমের বিভাজনে একটি কল্পিত থার্মোডাইনামিক অপারেশন হতে পারে যেখানে কোনও কিছুর দ্বারা নয় এমন বিভাজনে বিভক্ত হবে। এর অর্থ সেখানে কোনও দেওয়াল থাকবে না। তারপরে দুটি সাবসিস্টেমের মধ্যে তাপ হিসাবে শক্তি স্থানান্তর হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনা করতে পারা যায়। কল্পিত বিভাজন কার্যের অপারেশনের দীর্ঘ সময় পরে দুটি উপ-সিস্টেম ব্যবহারিকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছে যাবে এবং সেটিই একে অপরের সাথে তাপীয় সাম্যাবস্থার সম্পর্ক রাখবে। এই ধরনের দু:সাহসিক কাজ বিভিন্ন কাল্পনিক বিভাজন সহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভিন্নভাবে পরিচালিত হতে পারে। এই সমস্ত 'কটির ফলে পৃথক বিভাজন থেকে সাবসিস্টেমগুলি পরীক্ষা করে একে অপরের সাথে তাপের ভারসাম্যহীনতার জন্য প্রদর্শিত হতে পারে এমন সাবসিস্টেমগুলির ফলাফল ঘটবে। এই কারণে কোনও বিচ্ছিন্ন সিস্টেম প্রাথমিকভাবে আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকে না। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য রেখে দেওয়া গেলে কার্যত সর্বদা একটি চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছোয় যা আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এই রকম একটি চূড়ান্ত অবস্থাই হচ্ছে বিচ্ছিন্ন বস্তুর আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থা। [৪] এই জাতীয় অবস্থার অস্তিত্ব ধ্রুপদী তাপগতিবিদ্যার একটি মৌলিক স্বীকার্য। [৫][৬] এই জাতীয় স্বীকার্যকে সব সময় না হলেও কখনও কখনও বলা হয় তাপগতিবিদ্যার বিয়োগ প্রথম নিয়ম।[৭] বিচ্ছিন্ন কোয়ান্টাম সিস্টেমের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম রয়েছে। সেটি হ'ল বহু-বস্তু স্থানীয়করণ এবং যা কখনই বস্তুর আভ্যন্তরীণ তাপীয় সাম্যাবস্থা নয়।

তাপীয় সংযোগ সম্পাদনা

কোনও বদ্ধ ব্যবস্থা বা তার বাইরে তাপ প্রবাহিত হতে পারে তাপ পরিচলন অথবা তাপীয় বিকিরণ থেকে কোনও তাপীয় আধারে অথবা তাপীয় আধার থেকে। যখন এই প্রক্রিয়াটি তাপের মোট স্থানান্তরকে প্রভাবিত করে তখন তাপীয় সাম্যাবস্থা হয় না। তাপ হিসাবে তাপের স্থানান্তর চলতে থাকলেও সিস্টেমের তাপমাত্রা পরিবর্তন হতে পারে।

পৃথকভাবে অভিন্ন তাপমাত্রায় বস্তুসমূহকে প্রস্তুত করা, তারপরে পাস্পরিক তাপীয় সংযোগ সম্পাদনা

যদি বস্তুসমূহ পৃথকভাবে আণুবীক্ষণীকভবে স্থিতিশীল অবস্থার সাথে প্রস্তুত করা হয় এবং পরিবাহী বা রশ্মিবিকিরণকর পথ দ্বারা একে অপরের সাথে সম্পূর্ণরূপে তাপীয় সংযোগ স্থাপন করা হয় তবে সংযোগের পরে যখন উভয় বস্তুতে কোনও পরিবর্তন হয় না তখন তারা একে অপরের সাথে তাপীয় সাম্যাবস্থা বজায় রাখে। তবে প্রাথমিকভাবে যদি তারা তাপীয় সাম্যাবস্থায় না থাকে তবে যে কোনও পথে (পরিবাহী বা রশ্মিবিকিরণকর) উত্তাপটি গরম থেকে শীতলের দিকে প্রবাহিত হবে এবং তাপীয় সাম্যাবস্থায় না পৌঁছোনো পর্যন্ত এই প্রবাহ অব্যাহত থাকবে এবং তারপরে তাদের তাপমাত্রা একই থাকবে।

তাপীয় সাম্যাবস্থার একটি রূপ হ'ল রেডিয়েটিভ এক্সচেঞ্জ সাম্যাবস্থা। [৮][৯] দুটি বস্তু তাদের প্রত্যেকের অভিন্ন তাপমাত্রা সহ সম্পূর্ণরূপে রেডিয়েটিভ সংযোগে যে দূরত্বেই থাকুক বা যে আংশিক বাধা, প্রতিফলিত বা রেডিয়েটিভ সংযোগের পথে বাধাসমূহকে অস্বীকার করে রেডিয়েটিভ স্থানান্তর সাধিত হয় এবং শক্তি উষ্মতর থেকে শীতলতার দিকে স্থানান্তরিত হয় এবং তাদের মধ্যে একই তাপমাত্রা না থাকায় সমপরিমাণে পরস্পর বিপরীত দিকে সেই স্থানান্তর হয়। এই পরিস্থিতিতে কির্কফের রেডিয়েটিভ এমিসিভিটি এবং শোষণের সাম্যতার তত্ব এবং হেলমোল্টজ রেসিপ্রোসিটি নীতিটি কার্যকর হয়।

একটি বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের আভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিবর্তন সম্পাদনা

প্রাথমিকভাবে বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা, অ্যাডিয়্যাব্যাটিকালি বিচ্ছিন্নতা সাবসিস্টেম স্থাপনকারী অভ্যন্তরীণ দেয়াল ছাড়া যদি সাধারণত নিজের মধ্যে তাপীয় সাম্যাবস্থায় পৌঁছায় তবে তাপমাত্রা সর্বদা অভিন্ন হবে। তবে তাপগতিবিদ্যার সাম্যাবস্থা প্রয়োজন হয় না। যদি কাঠামোগত কিছু বাধা থাকে যা সিস্টেমে কিছু সম্ভাব্য প্রক্রিয়াকে ভারসাম্য বজায় রাখতে বাধা দিতে পারে। যেমন গ্লাস। তাপগতিবিদ্যা সাধারণভাবে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যে পৌঁচেছে এমন আদর্শ সিস্টেম বিবেচনা করে এবং তাদের মধ্যে পদার্থ এবং শক্তির আদর্শ স্থানান্তরকে বিবেচনা করে।

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. Münster, A. (1970), p.49.
  2. Lieb, E.H., Yngvason, J. (1999). The physics and mathematics of the second law of thermodynamics, Physics Reports, 314: 1–96, p. 55–56.
  3. Adkins, C.J. (1968/1983), pp. 249–251.
  4. Planck, M., (1897/1903), p. 3.
  5. Tisza, L. (1966), p. 108.
  6. Bailyn, M. (1994), p. 20.
  7. Marsland, Robert; Brown, Harvey R.; Valente, Giovanni (২০১৫)। "Time and irreversibility in axiomatic thermodynamics"। American Journal of Physics83 (7): 628–634। ডিওআই:10.1119/1.4914528বিবকোড:2015AmJPh..83..628M 
  8. Prevost, P. (1791). Mémoire sur l'equilibre du feu. Journal de Physique (Paris), vol. 38 pp. 314-322.
  9. Planck, M. (1914), p. 40.