অনুপম সেন
অনুপম সেন (জন্ম ৫ আগস্ট ১৯৪০) একজন বাংলাদেশি সমাজবিজ্ঞানী[২] যিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে পালন করছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। ২০১৪ সাল শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।[৩]
অনুপম সেন | |
---|---|
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় | |
উপাচার্য | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ২০০৬ | |
চ্যান্সেলর | আবদুল হামিদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | [১] পটিয়া, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ | ৫ আগস্ট ১৯৪০
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | শ্রীমতী উমা সেনগুপ্তা |
সন্তান | এক মেয়ে, ইন্দ্রানী সেন গুহ |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
জীবিকা | সমাজবিজ্ঞানী |
পুরস্কার | একুশে পদক (২০১৪) |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাঅনুপম সেন ১৯৪০ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক বৈদ্যব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন[৪]। তার গ্রামের বাড়ি পটিয়া উপজেলার অন্তর্গত ধলঘাট গ্রামে। তার পিতা বীরেন্দ্রলাল সেন ছিলেন একজন আইনজীবী এবং তার মাতার নাম স্নেহলতা সেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনামলেই ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তার পরিবার তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। যুদ্ধ শেষে তারা আবার নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে আসেন। আট বছর বয়সে পিতা বীরেন্দ্রলাল সেনের মৃত্যুর পর মায়ের সাথেই তার শৈশব অতিবাহিত হয়।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাপ্রাথমিক শিক্ষা
সম্পাদনাচট্টগ্রাম মহানগরীতে জন্ম নিলেও অনুপমের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের বাড়ি ধলঘাটে। ধলঘাট ইংলিশ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন।[৫] ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে গ্রাম থেকে ফিরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন।[৫] ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তার মা তাকে তার বোনসহ কলকাতায় তার মামার কাছে পাঠিয়ে দেন। কলকাতার সেন্ট ক্যাথিড্র্যাল মিশনারী স্কুলে ভর্তি হয়ে তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যান। পরে কলকাতা থেকে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৯৫৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।[৫]
উচ্চতর শিক্ষা
সম্পাদনাঅনুপম সেন মেট্রিক পাসের পর চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। আই.এ. পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি সমাজতত্ত্বে স্নাতক ডিগ্রী এবং ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন।[৬] উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৭৩ সালে। ১৯৭৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজতত্ত্বে এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন।[৬] একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন।[৬] তার পিএইচ.ডি-এর বিষয় ছিল ‘দি স্টেট, ইনডাস্ট্রিলাইজেশন এন্ড ক্লাস ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] গ্রন্থটি ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের প্রকাশক ‘রাউটলেজ’ কর্তৃক প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ ইত্যাদি বিষয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৬৫ সালে ২৫ বছর বয়সে অনুপম সেনের কর্মজীবন শুরু হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৬৫ সালের মার্চে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট) সমাজতত্ত্ব ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৬৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষা সহায়ক (টি.এ.) ও টিউটরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালের জুন থেকে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ২০০৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে তিনি চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে কর্মরত আছেন।
ড. সেনের তত্ত্বাবধানে বা সুপারভিশনে সাতজন গবেষক বিভিন্ন বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি পি.এইচ.ডি গবেষণা কর্মের পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও তার তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু গবেষণাকর্ম পরিচালিত হচ্ছে।
ড.অনুপম সেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮৪-৮৫ এবং ২০০০-২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং ১৯৮৪-৮৫ সালে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভূ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৬৬ সালে ড.অনুপম, শ্রীমতী উমা সেনগুপ্তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] শ্রীমতী উমা একজন গৃহিনী। তাদের একমাত্র মেয়ে ইন্দ্রানী সেন গুহ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রকাশিত গ্রন্থ ও গবেষণাকর্ম
সম্পাদনাঅধ্যাপক অনুপম সেন সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও বাংলা সাহিত্য-বিষয়ে পনেরোটির বেশি গ্রন্থ ও অনেক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তার রচিত কিছু গ্রন্থের তালিকা নিম্নে দেয়া হল।
- দি পলিটিক্যাল ইথিকস অব পাকিস্তান : দেয়্যার রুল ইন পাকিস্তানস ডিসইন্টিগ্রেশন, (The Political Elites of Pakistan: Their Role in Pakistan's Disintegration) (১৯৮২)
- বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও সমাজ; ঢাকা: অবসর (১৯৮৮/১৯৯৯)
- ব্যক্তি ও রাষ্ট্র : সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে; ঢাকা: অবসর (২০০৭/২০০৮)
- আদি-অন্ত বাঙালি : বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ; ঢাকা: অবসর (২০১১)[৭]
- বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন; ঢাকা: অবসর (২০১১)
- কবি-সমালোচক শশাঙ্ক মোহন সেন; ঢাকা: অবসর (২০১৩)
- বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন;[৮]
- বিলসিত শব্দগুচ্ছ (প্রতীচী ও প্রাচ্যের কয়েকটি কালজয়ী কবিতার অনুবাদ); ঢাকা: অবসর (২০০২) [৯]
- জীবনের পথে প্রান্তরে; চট্টগ্রাম: বলাকা (২০১১)
- সুন্দরের বিচার সভাতে; ঢাকা: অবসর (২০০৮)
- ইতিহাসে অবিনশ্বর; চট্টগ্রাম: বলাকা (২০১৬)
- বাংলাদেশ ও বাঙালি : রেনেসাঁস, স্বাধীনতা-চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান; ঢাকা: অবসর (২০০২, ২০১১)
- বাঙালি-মনন, বাঙালি-সংস্কৃতি : সাতটি বক্তৃতা; ঢাকা: প্রতীক(২০১৪)
- বিচিত ভাবনা; চট্টগ্রাম: বলাকা (২০০৭, ২০১৭)
সম্মাননা
সম্পাদনাঅনুপম সেন বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন; শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে তিনি রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক একুশে পদকে ভূষিত হন।[১০][১১] অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে:
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Profile of Dr. Anupam Sen"। www.puc.ac.bd। ১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "পটিয়া উপজেলা - প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ১০ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ক্যাম্পাস পরিদর্শনে উপাচার্য ড. অণুপম সেন"। সাবের হোসেন চৌধুরী। ভোরের কাগজ। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Das, Prianka (২০২২-০৮-০৫)। "ড. অনুপম সেন | দৈনিক পূর্বদেশ" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-৩১।
- ↑ ক খ গ "অনুপম সেন - শিক্ষাজীবন"। www.gunijan.org.bd।
- ↑ ক খ গ "ড. অনুপম সেন এর ব্যক্তিগত তথ্য"। www.bizbdnews.com/। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ড. অণুপম সেন। "আদি-অন্ত বাঙালি : বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যৎ"। রকমারি.কম। অবসর প্রকাশনা সংস্থা। ১৭ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ ড. অণুপম সেন, প্রসঙ্গ : বাংলাদেশ। "বাংলাদেশ : ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন"। রকমারি.কম। অবসর প্রকাশনা সংস্থা।
- ↑ ড. অণুপম সেন, অনুবাদ: কবিতা। "বিলসিত শব্দগুচ্ছ"। রকমারি.কম। অবসর প্রকাশনা সংস্থা।
- ↑ "একুশে পদক ২০১৪ পেলেন যারা"। দৈনিক নবরাজ। ইফতেখার আহমেদ টিপু। নবরাজ। ৯ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "একুশে পদক পাচ্ছেন কামাল লোহানীসহ ১৫ জন"। দৈনিক যুগান্তর। সালমা ইসলাম। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "13th Universal Sufi Fest held"। Staff Correspondent (Engllish ভাষায়)। Dhaka। The Daily Observer। পৃষ্ঠা 11। ৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "রাহে ভান্ডারের ১৩ তম মহাত্মা সম্মেলনে বক্তারা"। Daily Azadi। ২০১৭-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-২৭।
- ↑ "সম্মাননা"। Daily Prothom Alo। ২০১৭-০৫-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "একুশে পদক পাচ্ছেন ১৫ বিশিষ্ট নাগরিক"। জয় পরাজয়। ২৭ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাঅ্যাকাডেমিক অফিস | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী |
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ১ অক্টোবর, ২০০৬ - বর্তমান |
উত্তরসূরী নেই |