ড্রেক জলপথ (স্পেনীয়: Mar de Hoces, স্পেনীয়: Pasaje de Drake) দক্ষিণ আমেরিকার কেপ হর্ন, চিলি এবং অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের দ্বারা আবদ্ধ প্রণালী বা জলপথ। এটি আটলান্টিক মহাসাগর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ স্কশিয়া সাগরের সাথে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটায় এবং দক্ষিণ দিকে দক্ষিণ মহাসাগর অবধি বিস্তৃত।

১৯৮৮ সালের চিলি এবং আর্জেন্টিনার মধ্যকার শান্তি ও মৈত্রী চুক্তির দ্বারা নির্ধারিত ড্রেক জলপথের এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ সীমান্তবিন্দু
ড্রেক জলপথ পেরিয়ে আন্টার্কটিকা যাওয়ার পথে পর্যটকবাহী জাহাজ একাডেমিক লোফ
লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রাসহ গভীরতা নির্ণায়ক মানচিত্র

ইতিহাস সম্পাদনা

ষোড়শ শতাব্দীর অভিযাত্রী ফ্রান্সিস ড্রেকের নামে ইংরেজি ভাষায় জলপথটির নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি এই পথে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ১৫৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যাজেলান প্রণালী পেরিয়ে যাওয়ার পরে ড্রেকের একমাত্র অবশিষ্ট জাহাজটি অতি দক্ষিণে ভেসে গিয়েছিল। এই ঘটনা ইংরেজদের কাছে প্রমাণিত করে যে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণেও মহাসাগর বর্তমান।[১]

ড্রেকের অভিযানের অর্ধ শতাব্দী আগে ১৫২৫ সালে স্প্যানিশ নাবিক ফ্রান্সিসকো ডি হোয়েস ম্যাজেলান প্রণালীর প্রবেশপথ থেকে দক্ষিণে যাত্রা করে এই জলপথটি আবিষ্কার করেছিলেন।[২] এই কারণে, এটি অভিযাত্রী ফ্রান্সিসকো ডি হোয়েসের নামানুসারে বেশিরভাগ স্প্যানীয় ও লাতিন আমেরিকানরা মানচিত্র ও অন্যান্য ক্ষেত্রে জলপথটিকে মার ডি হোয়েস হিসাবে বর্ণনা করে।

এই জলপথটির মধ্য দিয়ে প্রথম নথিভুক্ত করা সমুদ্রযাত্রাটি ছিল ১৬১৬ সালে ওলন্দাজ অভিযাত্রী জ্যাকব লে মায়ারের নেতৃত্বে ইন্দ্রচট জাহাজের অভিযান, যিনি যাত্রাপথে হর্ন অন্তরীপেরও নামকরণ করেছিলেন।

ক্যাপ্টেন ফিয়েন প্লের (আইসল্যান্ড) নেতৃত্বে কলিন ও ব্রাডি (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), অ্যান্ড্রু টাউন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), ক্যামেরন বেল্লামি (দক্ষিণ আফ্রিকা), জেমি ডগলাস-হ্যামিল্টন (যুক্তরাজ্য) এবং জন পিটারসেন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এই জলপথ দিয়ে প্রথম মানব-চালিত ট্রানজিট (রোয়িং-য়ের মাধ্যমে) সম্পন্ন করেছেন ২০১৯ সালের ২৫শে ডিসেম্বর । [৩]

ভূগোল সম্পাদনা

হর্ন অন্তরীপ এবং লিভিংস্টন দ্বীপের মধ্যবর্তী ৮০০-কিলোমিটার (৫০০ মা) প্রশস্ত এই জলপথটিই অ্যান্টার্কটিকা থেকে অন্য কোন স্থলভূমিতে যাওয়ার সংক্ষিপ্ততম পথ। আটলান্টিক মহাসাগর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সীমানা কখনও কখনও হর্ন অন্তরীপ থেকে অ্যান্টার্কটিকার মূলভূমির ১৩০ কিলোমিটার (৮১ মা) উত্তরে অবস্থিত দক্ষিণ শিটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের তুষার দ্বীপ অবধি সরাসরি একটি সরলরেখা দ্বারা নির্ধারণ করা হয় হয়। আবার আন্তর্জাতিক জল সংস্থা হর্ন অন্তরীপের মধ্য দিয়ে ৬৭°১৬′ পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখাটিকে দুই মহাসাগরের সীমানা বলে অভিহিত করে। [৪] যাইহোক, দুটি লাইনই ড্রেক জলপথের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।

দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিকূল দক্ষিণ অংশে অপর দুটি জলপথ ম্যাজেলান প্রণালী এবং বিগল প্রণালীটি সংকীর্ণ এবং জাহাজ চলাচলের জন্যে অনুপযুক্ত। তারা যেকোন সময়েই এই জলপথগুলিতে জেগে থাকা হিমশৈলে আটকে যেতে পারে। কখনও কখনও বাতাস এত তীব্রভাবে প্রবাহিত হয় যে কোনও নৌযান অগ্রসর হতে পারে না। সেই কারণে বেশিরভাগ নৌযানগুলি ডেক জলপথ পছন্দ করে যা বিস্তৃত এবং জাহাজ চলাচলের জন্যে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। হর্ন অন্তরীপের প্রায় ১০০ কিলোমিটার (৬২ মা) দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ছোট্ট দিয়েগো রামেরেজ দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত।

ড্রেক জলপথের অক্ষাংশে কোনও উল্লেখযোগ্য স্থলভূমি নেই এটি অ্যান্টার্কটিক অক্ষীয় ঘূর্নির নির্বিঘ্নিত প্রবাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা ড্রেক জলপথ ও অ্যান্টার্কটিকার চারপাশে বিপুল পরিমাণে জলপ্রবাহ হ্তে সহায়তা করে।

এই জলপথে তিমি, ডলফিন এবং বিশাল দৈত্য পেট্রেলস, অন্যান্য পেট্রেলস, আলবাট্রসেস এবং পেঙ্গুইন ইত্যাদি সামুদ্রিক পাখিগুলিকে দেখা যায়।

প্রাণিকূল সম্পাদনা

এই জলপথে বন্যজীবের মধ্যে রয়েছে নমনীয় শিয়ারওয়াটার, সাদা চিন্ড পেট্রেল, দক্ষিণ জায়ান্ট-পেট্রেল, উত্তর জায়ান্ট পেট্রেল, ব্ল্যাক ব্রাউড আলবাট্রস, ক্যাম্পবেল আলবাট্রস, ধূসর মাথার আলবাট্রস, আটলান্টিক হলুদ নাকযুক্ত আলবাট্রস, বুলারের আলবাট্রস, বুলারের আলবাট্রস, সালভিনের আলবাট্রস, লাজুক আলবাট্রস, দক্ষিণ রাজকীয় আলবাট্রস, উত্তর রয়্যাল আলবাট্রস, ঘুরে বেড়ানো আলবাট্রস, হালকা গাঁথুনিযুক্ত আলবাট্রস, সুলি আলবাট্রস, গ্রেট শেয়ারওয়াটার, গ্রেট উইংড পেট্রেল, কেরোগলেন পেট্রেল, দক্ষিণ ফুলমার, কেপ পেট্রেল, নরম-পাম্পযুক্ত পেট্রেল, সাদা মাথাযুক্ত পেট্রেল, আটলান্টিক পেট্রেল, ধূসর পেট্রেল, অ্যান্টার্কটিক প্রিয়ন, স্লেন্ডার-বিল্ড প্রিয়ন, নীল পেট্রেল, ব্ল্যাক-পেটযুক্ত ঝড়-পেট্রেল, উইলসনের ঝড়-পেট্রেল, ফিন হোয়েল, সেয়ে তিমি, নীল তিমি, হ্যাম্পব্যাক তিমি, দক্ষিণ ডান তিমি, শুক্রাণু তিমি, ঘণ্টাঘড়ি ডলফিন, দক্ষিণী ডান তিমি ডলফিন, লম্বা-পাখি পাইলট তিমি, আর্নক্সের বেকড তিমি, দক্ষিণ বোতলজাতীয় তিমি, কুইয়ের বেকড তিমি, চাবুকযুক্ত দাঁত তিমি, গ্রে এর বেকড তিমি এবং হেক্টর বেকড তিমি [৫]

চিত্রশালা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Martinic B., Mateo (২০১৯)। "Entre el mito y la realidad. La situación de la misteriosa Isla Elizabeth de Francis Drake" (Spanish ভাষায়): 5–14। ডিওআই:10.4067/S0718-22442019000100005  
  2. Oyarzun, Javier, Expediciones españolas al Estrecho de Magallanes y Tierra de Fuego, 1976, Madrid: Ediciones Cultura Hispánica আইএসবিএন ৮৪-৭২৩২-১৩০-৪
  3. "Impossible Row team achieve first ever row across the Drake Passage"Guinness World Records (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১২-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১০ 
  4. International Hydrographic Organization, Limits of Oceans and Seas, Special Publication No. 28, 3rd edition, 1953, p.4
  5. Lowen, James (২০১১)। Antarctic Wildlife: A Visitor's Guide। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 44–49,112–158। আইএসবিএন 9780691150338