ডেফল

উদ্ভিদের প্রজাতি

ডেফল একপ্রকার সপুষ্পক বৃক্ষ। এটি ডাম্বেল, ডেমগোলা (চাকমা ভাষায়) এবং আরুয়াক (গারো ভাষায়) নামে পরিচিত।[১] ইংরেজিতে একে ‘ফলস ম্যাংগোস্টিন’, 'মাংকি ফ্রুট' ‘এগ ফ্রুট’ বা ‘ইয়েলো ম্যাংগোস্টিন’ নামে ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Garcinia xanthochymus যা Clusiaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। গাছটির আদি নিবাস মালয়েশিয়া।

ডেফল
ডেফল
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Rosids
বর্গ: Malpighiales
পরিবার: Clusiaceae
উপপরিবার: Clusioideae
গোত্র: Garcinieae
গণ: Garcinia
প্রজাতি: G. xanthochymus
দ্বিপদী নাম
Garcinia xanthochymus
L.
প্রতিশব্দ

Garcinia tinctoria and Garcinia dulcis (misapplied)

বিস্তার সম্পাদনা

ডেফল গাছের আদি নিবাস মালয়েশিয়া[২]। 'Garcinia' গণভুক্ত প্রায় ১৪০ টি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে ডেফল প্রজাতিটি হাওয়াই দ্বীপে প্রথম নিয়ে যান Albert Jaeger ১৯০০ সালে। [৩] বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে ডেফল গাছ দেখা যায়।[১] বাংলাদেশে একসময় প্রচুর ডেফল গাছ দেখা যেত, তবে বর্তমানে এর ব্যাপকতা লোপ পেয়েছে। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে সহজেই এই গাছ জন্মানো সম্ভব। রোদেলা ও ছায়াময় উভয় জায়গাতেই এই গাছ জন্মে। এটি অনাবৃষ্টি সহনশীল।[৪]

বর্ণনা সম্পাদনা

ডেফল গাছ সাড়ে চার থেকে সাড়ে সাত মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতা উজ্জ্বল সবুজ, চকচকে, লম্বাটে বল্লমাকার, কিনারা খাঁজকাটা ও আগা সূঁচালো, ২০-২৪ সেমি লম্বা। এর ফুল সাদা, ১৯ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। ফুল ফোটে মার্চ থেকে মে মাসে। ফল মাঝারি আকারের আপেলের সমান; ৮-১০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ফলটি মসৃণ, অগ্রভাগ সূঁচালো, এবং কিছুটা বাঁকানো; কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে গাঢ় হলুদ রঙের হয়। [১] শীতকালে গাছে যখন পাতা ঝরে যায়, তখন ফল পাকতে শুরু করে। এই ফলের শাঁস সুগন্ধযুক্ত ও রসালো। ভেতরে এক বা একাধিক বীজ থাকে। ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি।[৫] ডেফল গাছে প্রচুর ফল হয়। এতে যখন ফল হয়, তখন দেখতে খুবই সুন্দর দেখায়।

 
ডেফল গাছ
 
কাঁচা ডেফল
 
ডেফল ফুলের কুঁড়ি

ব্যবহার সম্পাদনা

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ডেফল চাষ করা হয় এর ফলের জন্য। পাকা ডেফল অত্যন্ত টক।[৪] এটি দিয়ে জ্যাম, জেলি, আচার, জুস, সস, চাটনি, টক ডাল এবং তরকারি তৈরি করা হয়। যদিও পাকা ডেফল থেকে এর বীজ ও খোসা আলাদা করা একটু সময় সাপেক্ষ। সিলেটের বাজারে কাঁচা ডেফল বিক্রি হয়; সেখানে টক বা ডাল রান্নায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বানর ও অন্যান্য পশু-পাখিরাও ডেফল খেয়ে থাকে। ডেফল গাছে পার্পল-ম্যাঙ্গোস্টিনের (Garcinia mangostana) কলম দেয়া যায়। এভাবে একই গাছে ডেফল ও ম্যাঙ্গোস্টিন উভয় ফল উৎপাদন করা যায়। শুকনো ডেফল ফলের নির্যাসকে gamboge বলা হয় যা থেকে জলরং বানানো হয়। ডেফল -এর ভেষজ গুণও রয়েছে। ডেফল থেকে xanthone নামক রাসায়নিক পদার্থ সংগ্রহ করা হয় যার মধ্যে এন্টিবায়োটিক এবং এন্টি-ম্যালেরিয়াল গুণ আছে বলে ধারণা করা হয়।[৩] ভেষজ চিকিৎসায় এর অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে।

রাসায়নিক উপাদান সম্পাদনা

ডেফল ফল থেকে নিম্নোক্ত রাসায়নিক উপাদানসমূহ পাওয়া যায় (Rastogi & Mehrotra, 1993):[১]

  • Xanthochymol
  • isoxanthochymol
  • cambogin
  • volkensiflavone
  • morelloflavone
  • biflavones GB-1 and GB-1a
  • maclurin
  • 1,5-dihydroxyxanthone
  • 1,7-dihydroxyxanthone

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  2. মৃত্যুঞ্জয় রায়, লেখক; দিব্য প্রকাশ ; বাংলার বিচিত্র ফল; ফেব্রুয়ারি, ২০০৭; পৃষ্ঠা-১৪৯-৫০, আইএসবিএন ৯৮৪-৪৮৩-২৬৬-৭
  3. http://ntbg.org/plants/plant_details.php?plantid=11880[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. YELLOW MANGOSTEEN Garcinia zanthochymus- http://www.daleysfruit.com.au/fruit%20pages/yelmangosteen.htm
  5. 'টক-মিষ্টি স্বাদের ডেফল'- মোকারম হোসেন | তারিখ: ২২-০৪-২০১২; http://archive.prothom-alo.com/detail/news/252180 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জুন ২০১৬ তারিখে