জন ডেসমন্ড বার্নাল (১০ মে ১৯০১-১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১) একজন আয়ারল্যান্ডীয় বিজ্ঞানী ছিলেন, যিনি আণবিক জীববিজ্ঞানে রঞ্জন রশ্মির স্ফটিকীকরণ (X-ray crystallography) প্রচলনে ভূমিকা রেখেছিলেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসের উপর তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিজ্ঞান ও সমাজের উপর তিনি অনেক জনপ্রিয় গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি সাম্যবাদী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।

শিক্ষা ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

বার্নাল স্পেনীয়, মিশ্র পর্তুগিজ ও ইতালীয় ইহুদি বংশোদ্ভূত ছিলেন (তাঁর পিতামহ জ্যাকব গিনেসি নিজের পিতামহীর পারিবারিক উপাধির নামানুসারে ১৮৩৭ সালের দিকে নিজেকে জ্যাকব বার্নাল হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন)। [১] তাঁর বাবা স্যামুয়েল বার্নাল লিমেরিক শহরের একটি ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্যামুয়েল অ্যালবার্ট কৃষি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ১৪ বছর অস্ট্রেলিয়ায় অতিবাহিত করেন। পরবর্তীতে তিনি টিপেরারিতে "ব্রুকওয়াটসন" নামক একটি খামার প্রতিষ্ঠা করেন। জন সেখানেই বেড়ে ওঠেন। তাঁর মা এলিজাবেথ মিলার জাতিতে আমেরিকান ও পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হন।

বার্নাল প্রথমে স্টোনিহার্স্ট কলেজে পড়াশোনা করেন। কিন্তু সেখানকার নিয়মকানুন তাঁর ভালো লাগেনি। তাই ১৩ বছর বয়সে তিনি বেডফোর্ড স্কুলে নতুন করে লেখাপড়া শুরু করেন। কিন্তু বেডফোর্ড স্কুলের লেখাপড়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর পছন্দনীয় ছিল না। কিন্তু বার্নালের ছোট ভাই কেভিন সেখানে অধ্যয়ন করায় তিনি কিছুটা উপযুক্ত সঙ্গ পান। ১৯১৯ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমানুয়েল কলেজে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে যান।

১৯২২ সালে বিএ ডিগ্রি লাভের জন্য বার্নাল গণিত ও বিজ্ঞান উভয় বিষয়-ই অধ্যয়ন করেন। পরবর্তী এক বছর তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। স্থানিক দল (Space group) সম্পর্কে বার্নাল বিস্তারিত অধ্যয়ন করেন এবং এর উপর ভিত্তি করে স্ফটিক কাঠামোর উপর একটি দীর্ঘ গবেষণাপত্র রচনা করেন। এর জন্য তিনি ও জি ডব্লিউ নরিস যৌথভাবে পুরস্কৃত হন। ব্রিজ স্ট্রিটের নিকটে চার্লস কে ওগডেনের বইয়ের দোকানে কাজ করা এক নারী তাঁকে "সেজ" বা সাধু নাম দেন। এই নামেই তিনি কেমব্রিজে পরিচিত ছিলেন।

কর্মজীবন ও গবেষণা সম্পাদনা

লন্ডনের রাজকীয় ইনস্টিটিউটে ডেভি ফ্যারাডে বিজ্ঞানাগারে উইলিয়াম হেনরি ব্র্যাগের অধীনে বার্নাল গবেষণা শুরু করেন। ১৯২৪ সালে তিনি গ্রাফাইটের গঠন আবিষ্কার করেন এবং পিতলের স্ফটিককাঠামো আবিষ্কার করেন। তিনি তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি রঞ্জনরশ্মির বর্ণালি পরিমাপে গোনিওমিটার নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

১৯২৭ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঠনিক স্ফটিকীভবন বিভাগের প্রথম প্রভাষক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৩৪ সালে বার্নাল ক্যাভেন্ডিস বিজ্ঞানাগারের সহকারী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন রকম জৈব অণুর স্ফটিক কাঠামো আবিষ্কার করেন। অয়েস্টেরিন ও স্টেরল গ্রুপের বিভিন্ন সদস্য অণুগুলোর গাঠনিক কাঠামো আবিষ্কার করেন। কেমব্রিজে থাকাকালীন তিনি ভিটামিন বি ওয়ান (১৯৩৩),পেপসিন (১৯৩৪),ভিটামিন ডি২ (১৯৩৫), স্টেরল (১৯৩৬) ও তামাকগাছের মোজাইক ভাইরাসের (১৯৩৭) গঠনকাঠামো আবিষ্কার করেন। এছাড়াও বার্নাল ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পানির "বুমেরাং" আকৃতির গাঠনিক কাঠামো প্রদর্শন করেন।

১৯৩৪ সালে বার্নাল ও ডরোথি হজকিন জলীয় দ্রবণে দ্রবীভূত প্রোটিন ক্রিস্টালের ছবি তুলেন। [২]

আর্নেস্ট রাদারফোর্ড বার্নালকে অপছন্দ করতেন। তাই বার্নাল ইমানুয়েল অ্যান্ড ক্রাইস্ট অ্যান্ড টেন্যুরে ফেলোশিপের জন্য আবেদন করলে রাদারফোর্ড তাঁর আবেদন নাকচ করে দেন। ১৯৩৭ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেক কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ঐ বছরই তিনি রাজকীয় সমিতির ফেলো নির্বাচিত হন। [১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা