জামালপুর জামে মসজিদ

ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি মসজিদ

জামালপুর জামে মসজিদ বা জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ নামে পরিচিত।[১] এটি ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।

জামালপুর জামে মসজিদ

জামালপুর জামে মসজিদ

অবস্থান বাংলাদেশ ঠাকুরগাঁও জেলা, বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠিত ১৮৬৭
মালিকানা প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর
স্থাপত্য তথ্য
ধরন ইসলামিক স্থাপত্য

অবস্থান সম্পাদনা

ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পীরগঞ্জ থানায় যাওয়ার পথে বিমান বন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জহাট। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ি জামে মসজিদ।[২]

বিবরণ সম্পাদনা

ঠাকুরগাঁওয়ের জামালপুর ইউনিয়নে রয়েছে ঐতিহাসিক জামালপুর জমিদার বাড়ী। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের তৎকালীন তাজপুর পরগনার রওশন আলীর বংশধর জামাল উদ্দিন এই অঞ্চলের জমিদারিত্ব পেয়ে ১৮৬২ সালে জমিদার বাড়ীর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন কিন্তু জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই ১৮৬৭ সালে জামিদার বাড়ির সাথে একটি মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মসজিদের নাম রাখা হয় জামালপুর জমিদার বাড়ী জামে মসজিদ।

প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো জামালপুর জমিদার বাড়ির প্রবেশ মুখেই রয়েছে বিশাল তোরণ। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ন অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত জামালপুর জমিদার বাড়ী জামে মসজিদে একসাথে প্রায় ৩০০-৬০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারে। মূল কক্ষ, ছাদ সহ ও ছাদ বিহীন বারান্দা ও মূল দরজা- এই চারটি অংশে বিভক্ত জামালপুর জামে মসজিদের ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট আশিটি মিনার ও তিনটি কারুকার্য মণ্ডিত গম্বুজ আগর দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। গম্বুজ ও মিনারের অপূর্ব সমন্বয়ে ফুলেল নকশাকৃত এমন মসজিদ খুব কমই আছে বাংলাদেশে।

মসজিদ অঙ্গনে প্রবেশমুখে বেশ বড় সুন্দর একটি তোরণ রয়েছে। মসজিদে উপরে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কারুকাজ করা আছে। এই মসজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনারগুলো নকশা। মসজিদের ছাদে মোট আটাশটি মিনার আছে। একেকটি মিনার উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট এবং প্রতিটিতে নানা নকশা করা রয়েছে। এত মিনারয়ালা কোন মসজিদে দেখতে পাওয়া বিরল ব্যপার। মসজিদটির চারটি অংশে ভাগ করা। তাহলো মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের উপর ছাদ বিশিষ্ট মূল দরজা। খোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের নানান নকশা রয়েছে। মূল কক্ষের বাইরের দিক থেকে পরিমাপ হচ্ছে ২৯ × ৪৭ ফুট এবং ছাদবিহীন বারান্দার পরিমাপ ২১ × ৪৭ ফুট। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থাম বিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। পুরো মসজিদটির ভিতরে ও বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে।

ইতিহাস সম্পাদনা

কথিত আছে তাজপুর পরগনার জমিদারবাড়ি থেকে রওশন আলী নামক এক ব্যক্তি এ অঞ্চলে আসেন এবং তারই কোন বংশধর পরবর্তীতে এখানে জমিদারী পান। ১৮৬২ সালে এই জমিদারবাড়ির ভিত্তি স্থাপন করে। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৮৬৭ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

কিভাবে যাবো?

দেশের যেকোন জায়গা থেকে বাস, ট্রেন বা নিজস্ব পরিবহনে ঠাকুরগাঁও সদরে যেতে হবে ।

তারপর ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে জামালপুর জমিদার বাড়ীর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। ঠাকুরগাঁও হতে পীরগঞ্জ থানায় যাওয়ার পথে শিবগঞ্জ হাট থেকে আরো তিন কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই জামালপুর জমিদার বাড়ী পৌঁছে যওয়া যাবে। নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও রয়েছে ব্যটারি চালিত পরিবহন। স্থানীয় ভাষায় অটো/টুকটুকি ইত্যাদি।

কোথায় থাকবো?

থাকার জন্য ঠাকুরগাঁও শহরেই রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, যেখানে খুব স্বল্প খরচেই থাকা যাবে । এখানে রয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় জেলা পরিষদ বাংলো, তবে এখানে থাকতে হলে লাগবে সরকারি রেফারেন্স। খরচ হাতের নাগালেই। ক্যাটাগরি অনুযায়ি ভাড়ার ভিন্নতা রয়েছে। সরকারি চাকুরেদের জন্য খুবই অল্প ভাড়া, আর বেসরকারি চাকুরেদের জন্য কিছুটা অতিরিক্ত গুনতে হবে তবেসেটা খুব বেশি না । যারা প্রকৃতি প্রেমী, প্রকৃতি এবং কোলাহল মুক্ত জায়গা পছন্দ করেন তাদের জন্য শহরের ২ কিলোমিটারের মধ্যেই জগন্নাথপুর নামক জায়গায় পল্লীবিদ্যুৎ সংলগ্ন  রয়েছে বেসরকারি এনজিও , ESDO, RDRS পরিচালিত সুবিশাল জায়গা।  এ সি ও নন এ সি ক্যাটাগরিতে রয়েছে সিঙ্গেল ও ডাবল বেশ কিছু রুম । নিরাপত্তা দেওয়াল বেষ্টিত পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা সম্বলিত ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। পরিবার নিয়াও অনায়াসে থাকা যাবে কোনো রকম ঝক্কি জামেলা ছাড়াই। এখানে থাকার অন্যতম সুবিধা হলো খাওয়া। খাওয়ার জন্য আপনাকে কোনো চিন্তা করতে হবে না. শুধু বলবেন কি খেতে চান. চাহিদা মাফিক সব খাবার ই পাওয়া যাবে অল্প খরচের মধ্যে। সকালের নাস্তা অবশ্য রুম ভাড়ার সাথেই অন্তুর্ভক্ত (ফ্রি)।   এছাড়া ও থাকার জন্য আর একটি এনজিও  ESDO পরিচালিত রেস্টহাউজ। তবে এই সমস্ত জায়গায় থাকতে হলে আপনাকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হবে, তা না হলে রুম পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম. কেননা বিদেশী ও বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের লোকজন সবসময়ই তাদের দখলে রাখেন।

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সমতলে সবুজের সমারোহ
  2. রায়, অজয় কুমার (আগস্ট ২০১৮)। "রাজনৈতিক ও গুণী ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি"। ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস (২ সংস্করণ)। ঢাকা: টাঙ্গন প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন। পৃষ্ঠা ৫৯-৬০। আইএসবিএন 978-9843446497