গুরু রাম দাশ
গুরু রাম দাশ ([ɡʊru ɾɑm dɑs]; ১৫৩৪-১৫৮১) ছিলেন শিখধর্মের দশ শিখ গুরুর চতুর্থ গুরু। ৩০ আগস্ট ১৫৭৪ সালে তিনি শিখ গুরুর পদ পান। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৫৩৪ সালে রাম দাশ পাঞ্জাব অঞ্চল, লাহোরের চুনা মান্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন হরি দাশ ও তার মা অনুপ দেবী( দয়া কৌর)। গুরু অমর দাশের কনিষ্ঠ কন্যা বিবি বানি ছিলেন তার স্ত্রী। তাদের তিন পুত্র ছিল : পৃথ্বী চাঁদ, মহাদেব ও গুরু অর্জন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/f3/Guru_Ram_Das.jpg/220px-Guru_Ram_Das.jpg)
গুরু রাম দাশের শ্বশুর ছিলেন গুরু অমর দাশ, যিনি ছিলেন দশ গুরুর তৃতীয় গুরু।
অবদান
সম্পাদনাএকজন গুরু হিসাবে, তার অন্যতম প্রধান অবদান ছিল শিখ সমাজের কাঠামো সংগঠিত করা। উপরন্তু, তিনি লাভার রচয়িতা ছিলেন যেটি হচ্ছে শিখ বিবাহের চারটি মন্ত্র। তিনি রামদাশপুর নগরের পরিকল্পনাকারী এবং স্রষ্টা, যা পরে শিখদের পবিত্র শহর অমৃতসর হয়ে ওঠে। টাং গ্রামের মালিকের কাছ থেকে ৭০০ টাকায় জমি কিনে তিনি ১৫৭৪ সালে নগরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ১৫৬৪ সালে গুরু রাম দাশ সুলতানবিন্দ গ্রামের কাছাকাছি সন্তোকসর সরোবর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন (এক উৎস অনুযায়ী,১৫৭০ সাল)। এই নির্মাণ কার্য ১৫৮৮ সালের আগে শেষ করা সম্ভব হয়নি। ১৫৭৪ সালে, গুরু রাম দাশ তার বাসভবন নির্মাণ করে, সেখানে চলে যান। সেই সময়ে, এটি গুরু দা চক হিসাবে পরিচিত ছিল (পরে, এটি চক রাম দাশ হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে)। অমৃতসরে গুরুদুয়ারা হরমন্দির সাহিব, যা 'ঈশ্বরের আবাস' এছাড়াও দরবার সাহিব নামে পরিচিত, তারই পরিকল্পিত।
শিখদের প্রধান গ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব গুরু রাম দাশের রচিত। এতে শিখদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক ৬৮৮টি স্তবগান আছে।
- এর মধ্যে ৩০৫ পৃষ্ঠাটি নিম্নরূপ।
— সাধু সন্ত এবং পুণ্য স্নানেের ওপর গুরু রাম দাশের বানী।
এছাড়াও গুরুর বানীগুলি, নানকশাহী দিনপঞ্জিকা এবং দৈনিক শিখদের প্রার্থনা, কীর্ত্তন সোহিলার অংশ।
আনন্দ কারজ: শিখ বিয়ের অনুষ্ঠান
সম্পাদনাপ্রচলিত শিখ বিয়ের অনুষ্ঠান, যেটি আনন্দ কারজ হিসাবে পরিচিত, সেটি গুরু রাম দাস রচিত চার-স্তবকেের স্তবগান কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে নব দম্পতি গুরু রাম দাসের স্তবকগুলির একটি করে লাবাস্তবক পড়েন এবং গুরু গ্রন্থ সাহিবকে কেন্দ্র করে একটি করে পাক ঘুরতে থাকেন। প্রথম পাকটি, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, গৃহস্থ জীবনে প্রবেশ করার জন্য। দ্বিতীয় পাকে ঈশ্বরের ইচ্ছায় দুটি প্রাণের মিলন বর্নিত হয়। তৃতীয় পাকে, নবদম্পতিকে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হিসাবে বর্ণনা করা হয়, যেহেতু তারা গুরুর সান্নিধ্যে, ঈশ্বরের প্রার্থনা করেছেন। চতুর্থ পাকে, বর্নিত হয় যে দম্পতিরা তাদের ইচ্ছা অনুসারে একে অপরকে পেয়েছেন এবং অভিনন্দিত হয়েছেন।
'লাভান'
সম্পাদনালাভান, গুরু রাম দাস রচিত, একটি সুন্দর বানী, যার দ্বারা শিখ দম্পতিকে বিবাহ করার অর্থ বোঝানো হয়। কার্যকরভাবে গুরু, শিখ বিবাহকে একটি আধ্যাত্মিক মিলন হিসাবে, সংজ্ঞায়িত করেন, এই দু লাইনে: "যারা নিছক একসঙ্গে বসবাস করে, তাদের স্বামী ও স্ত্রী, বলা যায় না, তাদের একা বলা যায়, বরঞ্চ যারা এক আত্মা দুই দেহ, তাদের স্বামী ও স্ত্রী, বলা যায়।"
মৃত্যু
সম্পাদনাগুরু রাম দাস ১ সেপ্টেম্বর ১৫৮১ সালে, পাঞ্জাব অঞ্চলের অমৃতসর শহরে মারা যান।