রাজা কৃষ্ণনাথ রায় (ইংরেজি: Raja Krishnanath Roy) (১২ মার্চ,১৮২২ - ৩১ অক্টোবর, ১৮৪৪) ছিলেন তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার কাশিমবাজারের এক রাজা। [১]

কৃষ্ণনাথ রায়
জন্ম(১৮২২-০৩-১২)১২ মার্চ ১৮২২
কাশিমবাজার রাজবাড়ী, কাশিমবাজার, ব্রিটিশ রাজ
মৃত্যু৩১ অক্টোবর ১৮৪৪(1844-10-31) (বয়স ২২)
জোড়াসাঁকো রাজবাড়ী, কলকাতা
কর্মজীবন১৮৩২ - ১৮৪৪
দাম্পত্য সঙ্গীমহারাণী স্বর্ণময়ী দেবী
সন্তানলক্ষ্মী দেবী, সরস্বতী দেবী
পিতা-মাতারাজা হরিনাথ রায় (পিতা)
রাণী হরসুন্দরী দেবী (মাতা)

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

১৮২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই মার্চ কাশিমবাজার রাজ পরিবারে কৃষ্ণনাথ রায়ের জন্ম হয়। পিতা রাজা হরিনাথ রায় এবং মাতা রাণী হরসুন্দরী দেবী। কৃষ্ণনাথের দশ বৎসর বয়সে রাজা হরিনাথ পরলোক গমন করেন। কৃষ্ণনাথ সেসময় নাবালক হওয়ার ইংরেজ সরকারের নিয়ম অনুসারে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে প্রতিপালিত হন।

মেধাবী কৃষ্ণনাথ ফরাসী ও ইংরাজী ভাষা অতি সহজেই আয়ত্ত করেন। সেজন্য হিন্দু মুসলমান ও খ্রিষ্টান সকল ধর্মেরই শিক্ষক নিয়োজিত ছিলেন। সরকার নিযুক্ত অভিভাবক উইলিয়াম স্টিফেন ল্যামব্রিক তাকে ইংরেজি , ইতিহাস , জ্যামিতি, ভূগোল, রসায়ন ও জ্যোতির্বিদ্যা শেখাতেন। সংস্কৃত কলেজের ছাত্র পণ্ডিত শিবপ্রসাদ সংস্কৃত ও বাংলা শেখাতেন। ডিরোজিয়োর ছাত্র দিগম্বর মিত্রের সংস্পর্শে আসার পর তার মুক্তচিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সংস্কারমুক্ত উদারনৈতিক মনোভাবে উজ্জীবিত হন। কৃষ্ণনাথও অত্যন্ত খুশি হয়ে রাজা দিগম্বর মিত্রকে এক লক্ষ টাকা দান করেন। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার অন্তর্গত ভাটাকুল গ্রামের এক তিলি সম্প্রদায়ের অতি দরিদ্র পরিবারের অপরূপ সুন্দরী স্বর্ণময়ীকে (বিবাহোত্তর প্রদত্ত নাম সারদাসুন্দরী) বিবাহ করেন। তাঁদের দুই কন্যা - লক্ষ্মী ও সরস্বতী - কম বয়সে মারা যান।

জনহিতকর কাজে অবদান সম্পাদনা

অতি অল্প বয়স থেকেই কৃষ্ণনাথ দেশে শিক্ষা প্রসারের সচেষ্ট ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মাত্র তেরো বৎসর বয়সে নবপ্রতিষ্ঠিত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম পাঁচজনকে এক হাজার টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ১৫ বৎসর বয়সেই তিনি সৈদাবাদে একটি ইংরাজী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনাথের উদ্যোগে তার সরকার নিযুক্ত অভিভাবক ও গৃহশিক্ষক উইলিয়াম স্টিফেন ল্যামব্রিকের সম্পাদনায় মফস্বল বাংলার প্রথম ইংরাজী পত্রিকা মুর্শিদাবাদ নিউজ প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি নির্ভীকভাবে শাসকের সমালোচনা করত বলে পত্রিকার মুদ্রাকর সরকারের রোষে জরিমানা সহ নির্যাতন ভোগ করেন এবং ফলত, ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। এই ঘটনার দশ মাস পরে কৃষ্ণনাথের ঐকান্তিক আগ্রহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৪০ সালের ১০ মে গুরুদয়াল চৌধুরীর সম্পাদনায় মুর্শিদাবাদ থেকেই প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষার সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘মুর্শিদাবাদ সম্বাদপত্রী’। এই সংবাদপত্রটি মাত্র এক বৎসর চলার পরে নির্ভীক ও নিরপেক্ষ মতামতের জন্য কোম্পানির আমলাদের অসহযোগিতায় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কোপে এর প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। [২] ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণনাথ সাবালক হন এবং পরের বছর লর্ড অকল্যান্ড "রাজা" উপাধি প্রদান করেন। রাজা কৃষ্ণনাথের পরিকল্পনা ছিল মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের। সেই মত তিনি ওই বৎসরে উনিশ বৎসর বয়সে একটি উইল করেছিলেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে কৃষ্ণনাথ প্রগতিশীল ও স্বাধীনচেতা ছিলেন। সেই সাথে তার মধ্যে কিছু দোষ ও গুণের দৃষ্টান্ত ধরা পড়েছিল। অপব্যয়ে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। পারিবারিক অশান্তি, মা রাণী হরসুন্দরীর সঙ্গে মনমালিন্য ও শেষে এক মিথ্যা অপবাদে নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে ভাবপ্রবণ কৃষ্ণনাথ মাত্র বাইশ বৎসর বয়সে ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে অক্টোবরে জোড়াসাঁকো রাজবাড়ীতে আত্মহত্যা করেন। তিনি যেই উইল লিখে যান, সেখানে বেশিরভাগ সম্পত্তি অপরকে বিলিয়ে দেন। সেই উইল আদালতে খারিজ করেন তাঁর স্ত্রী মহারাণী স্বর্ণময়ী

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ১৫২, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. "আমলা-রোষে বন্ধ হয় রাজা কৃষ্ণনাথের সংবাদপত্র"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৬