কানাই বরশী বোয়া শিলালিপি

অসমীয়া লিপির মূল ব্রাহ্মী এবং তাঁর বিকশিত রূপ গুপ্ত লিপি বলে নির্দ্ধারণ করা হয়েছে। অসমীয়া লিপিটি অসমের বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার হওয়া শিলালেখ তথা তামার ফলকসমূহে ব্যবহৃত লিপির বিকাশপ্রাপ্ত এক রূপ। এই কানাই বরশী বোয়া শিলালিপি বা কানাই বরশী বোয়া শিলার তুরুস্ক ক্ষয়ের ফলকটি হল এখনও পর্যন্ত আবিস্কৃত সম্পূর্ণ অসমীয়া অক্ষরের প্রথম ফলক।[১]

কানাই বরশী বোয়া শিলা
কানাই বরশী বোয়া শিলা

অবস্থান এবং আবিষ্কার সম্পাদনা

কানাই বরশী বোয়া শিলালিপি বা কানাই বরশী বোয়া তুরষ্ক ক্ষয়ের লিপিটি উত্তর গুয়াহাটিতে অবস্থিত। উত্তর গুয়াহাটির মণিকর্ণেশ্বর মন্দিরের কাছে, রংমহলের পূর্ব দক্ষিণ কোণে থাকা হাবি কটা মুক্ত করায় ফলকটি উদ্ধার হয়।

 

ফলকটির প্রথম সংবাদ তুলে ধরেন সোণারাম চৌধুরী। তিনি অসম উপত্যকা বিভাগের কমিশনার কর্ণেল পি.আর.টি. গর্ডনকে ফলকটির কথা জানান। গর্ডনে সবিশেষ গুরুত্ব বুঝে 'কামরূপ অনুসন্ধান সমিতি'র ১৯১৯ সালের বছরের অধিবেশনে 'এ রক ইনস্ক্রিপশন'(A Rock Inscription) নামক একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন।

পরবর্তী কালে ফলকটির বিষয়ে নানা আলোচনা, প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে। সেইগুলির ভিতরে পদ্মনাথ ভট্টাচার্য্য ইণ্ডিয়ান হিষ্টরিকেল কোয়ার্টারলি (Indian Historical Quarterly),(ডিসেম্বর ১৯২৭) এবং কামরূপ শাসনাবলী র ভূমিকায় করা আলোচনা, কনকলাল বরুয়া 'আর্লি হিষ্ট্রী অব কামরূপ' (Early History of Kamrupa) গ্রন্থে, সোণারাম চৌধুরী 'রংমহল' শীর্ষক প্রবন্ধে (আবাহন ২-৫ সংখ্যা), সর্বেশ্বর কটকী 'অসমর শিলর ফলি' (মিলন ১.২, ১৮৪৫ শক) নামের প্রবন্ধ এবং মহেশ্বর নেওগ 'প্রাচ্য-শাসনাবলী'তে করা আলোচনা উল্লেখযোগ্য[১]

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

ড০ মহেশ্বর নেওগের প্রাচ্য-শাসনাবলী গ্রন্থে উল্লেখ থাকা মতে ফলকটির পাঠ হ'ল:

এর অর্থ হ'ল "১১২৭ শকের চৈত্র মাসের ১৩ দিনের দিনা কামরূপে এসে তুরষ্কগণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।"[২] ১২০৬ খ্রীষ্টাব্দে তুর্কী সুলতান মহম্মদ জীবন বকতিয়া যখন কামরূপ আক্রমণ করে, তখন কামরূপ রাজ্যর রাজধানী ছিল উত্তর গুয়াহাটি। সেই সময়ে কামরূপ রাজ্যের রাজা ছিলেন পৃথু। কামরূপী সেনা এবং তুর্কী সেনার মধ্যে প্রবল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কামরূপী সেনা তুর্কী সেনাকে পরাস্ত করে[৩]

বিশেষত্ব সম্পাদনা

কানাই বরশী বোয়া শিলার তুরষ্ক ক্ষয়ের ফলক তুরষ্ক সেনা ধ্বংস হওয়ার ঘটনার এক ঐতিহাসিক দলিলই নয়, এটি ত্রয়োদশ শতকের অসমীয়া লিপি বিকাশের কাহিনির এক প্রত্যক্ষ নমুনা। এটিই সম্পূর্ণ অসমীয়া অক্ষরে লিখিত প্রথম ফলক। ফলকটির অক্ষরগুলির বৈশিষ্ট্য হ'ল-

ক)' ক্ষ' অক্ষর আধুনিক রূপ নিয়েছে।

খ) শ,ম,ত,ক ইত্যাদি অক্ষর আধুনিক অক্ষরের সাথে প্রায় এক।

গ) 'ধ' অক্ষরের আকৃতি মাত্রাহীন 'য' র মতো।

অতিরিক্ত তথ্য সম্পাদনা

সঙ্গে দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "লিপি এবং পাঠ সমীক্ষা",পৃষ্ঠা ৪৬, অসমীয়া স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়
  2. ড০ মহেশ্বর নেওগ রচিত প্রাচ্য-শাসনাবলী
  3. প্রাচীন শিলালিপি - অসমর ঐতিহ্যর সাক্ষী, লেখক: কন্দর্প কলিতা, অসমীয়া প্রতিদিন, বুধবারের বিশেষ পরিপূরিকা রোদালি, তাং: ৩ অক্টোবর, ২০১২